খেলাধুলা

তিনদিনেই হেরে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা

লজ্জ্বার সামনে সামনে দাঁড়িয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচলেও, হারের লজ্জা থেকে বাঁচতে পারলো না আর প্রোটিয়ারা। জোহানেসবার্গ টেস্টে তিনদিনেই ইংল্যান্ডের কাছে প্রোটিয়ারা হেরে গেলো ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। জয়ের জন্য ৭৪ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়েছে ইংলিশরা। অ্যালিস্টার কুক আর আলেক্স হেলসই ৬৪ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন। যদিও ক্রিস মরিস আর ডিন এলগারের ঘূর্ণিতে দ্রুত ৩ উইকেট হারিয়েছিল ইংলিশরা।মূলত, স্টুয়ার্ট ব্রডের তোপের মুখেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়লো প্রোটিয়াদের ইনিংস। ১৯৯২ সালে ঘরের মাঠে সবচেয়ে কম, ৭৯ রানে অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার সেই রেকর্ডের সামনেই যেন দাঁড়িয়েছিল তারা। কিন্তু, ফ্যাফ ডু প্লেসিসের ১৪ রানের একটি ইনিংসই তাদের এই লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে দিল। স্টুয়ার্ট ব্রডের মাত্র ১৭ রানে ৬ উইকেটের তোপের মুখে ৮৩ রানেই অলআউট হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। যদিও, তা তৃতীয় দিনেই হারের লজ্জা থেকে বাঁচাতে পারলো না প্রোটিয়াদের।ইংলিশ অধিনায়ক এবং ওপেনার অ্যালিস্টার কুক করেন ৪৩ রান। ১৮ রান করেছিলেন আলেক্স হেলস। শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন নিক কম্পটন। জো রুট ৪ এবং জেমস টেলর ২ রানে অপরাজিত থাকেন। ডিন এলগার নেন ২ উইকেট। অন্যটি নেন ক্রিস মরিস।স্টুয়ার্ট ব্রডের দুর্দান্ত বোলিংয়ের একটা চিত্র গত অ্যাসেজ সিরিজেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই দেখা গিয়েছিল। সেবার একাই নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। অস্ট্রেলিয়াকে অলআউট করে দিয়েছিলেন ৬০ রানে। ওই হতাশাজনক পারফরম্যান্স মাইকেল ক্লার্ককে শুধু নেতৃত্বই নয়, ক্রিকেট ছেড়ে দিতেই বাধ্য করেছিল। সেই স্টুয়ার্ট ব্রড আবারও উদিত হলেন। সেবার ছিল নটিংহ্যামের ট্রেন্টব্রিজে। এবার জোহানেসবার্গের ওয়ান্ডারার্সে। প্রতিপক্ষ, টেস্ট র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল দক্ষিণ আফ্রিকা।প্রতিপক্ষ কতটা শক্তিশালি, সেটা যেন কোন বিষয়ই নয় ব্রডের কাছে। বল হাতে একের পর এক হন্তারক হয়ে ওঠাই তার যেন মূল কাজ। ডিন এলগার, স্টিয়ান ফন জিল, হাশিম আমলা, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের ব্যাটে চড়েই তো বিশ্বের এক নম্বর স্থানটা দীর্ঘদিন ধরে রেখেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই দলটির ব্যাটসম্যানদের চোখেই কি না শর্ষেফুল ফুটিয়ে দিয়েছেন ব্রড। ১২.১ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে একাই তিনি নিলেন ৬ উইকেট। স্টুয়ার্ট ব্রডের বিধ্বংসী বোলিংয়ের সামনে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৮৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্রড ছাড়াও ২ উইকেট নেন বেন স্টোকস এবং ১টি করে উইকেট নেন জেমস এন্ডারসন ও স্টিভেন ফিন।ক্রিকেটে যে কখনও কখনও খারাপ সময় আসে, সেটাই এখন টের পাচ্ছে টেস্ট র্যাংকিংয়ে এক নম্বরে থাকা দলটি। হাশিম আমলার নেতৃত্বে বেশ কিছুদিন বাজে সময় কাটানোর পর, তিনি নিজে থেকেই নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেন। দায়িত্ব দেয়া হলো এবি ডি ভিলিয়ার্সকে; কিন্তু তাতেও কোন লাভ হলো না। নেতৃত্বের পরিবর্তণে ভাগ্যও পরিবর্তণ হলো না প্রোটিয়াদের। ব্যাটসম্যানদের অসহায় আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই পরাজয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে স্বাগতিক দক্ষিণ আফ্রিকা।প্রথম ইনিংসে নিজেরা ৩১৩ রান করার পর ইংল্যান্ডকে বেধে ফেলেছিল ৩২৩ রানে। ১০ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মহা বিপর্যয়ে পড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪৬ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে প্রোটিয়ারা। ৬৭ রানে হারিয়েছে অষ্টম উইকেট। প্রোটিয়াদের এখনও টানছেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। তবে, অন্যপ্রান্তে যেভাবে উইকেট পড়ছে, তাতে তিনি কতক্ষণ ধরে রাখতে পারবেন সেটাই এখন সবচেয়ে বড় বিষয়।ওয়ান্ডারার্সে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে কোন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানই হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। তবুও সবারই কিছু না কিছু অবদান ছিল ইনিংসটা গড়ার। যে কারণে ছোট ছোট ইনিংস সত্ত্বেও প্রোটিয়াদের রান গিয়ে দাঁড়ালো ৩১৩ রানে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে জো রুটের সেঞ্চুরি এবং বেন স্টোকসের হাফ সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়াল ৩২৩। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে মাত্র ১০ রান বেশি।১০ রানে পিছেয়ে থেকে ব্যাট করতে নেমে ব্রডের তোপের মুখে পড়ে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে দক্ষিণ আফ্রিকা। দু্ই ওপেনার ডিন এলগার আর স্টিয়ান ফন জিল গড়েন ২৩ রানের জুটি। পুরো ইনিংসে এটাই প্রোটিয়াদের সবচেয়ে বড় জুটি। এরপরই নেমে আসে ব্রড ঝড়। ১৫ রান করে আউট হন ডিন এলগার। ১১ রান করেন স্টিয়ান ফন জিল। এরপর আমলাকেও ৫ রানে ফিরিয়ে দেন ব্রড। ডি ভিলিয়ার্সের অবস্থা তো আরও করুণ। তিনি মারলেন গোল্ডেন ডাক। টেম্বা ভাবুমাকেও শূন্য রানে ফিরিয়ে দেন ব্রড। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ফ্যাফ ডু প্লেসিস। ১৪ রান করার পর তিনিও আউট হলেন  ব্রডের হাতে। অথ্যাৎ প্রোটিয়াদের শীর্ষ ৬ ব্যাটসম্যানই সাজঘরে ফিরলেন ব্রডের হাতে উইকেট দিয়ে।প্রোটিয়া ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৬ রান করেন কাগিসো রাবাদা। শেষ পর্যন্ত ৮৩ রানেই অলআউট হয়ে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা। সাম্প্রতিক অতীতে এত কম রানে অলআউট হওয়ার লজ্জায় আর পড়তে হয়নি প্রোটিয়াদের। ফলে, ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য মাত্র ৭৪ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ২২.৪ ওভারেই ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ইংল্যান্ড।আইএইচএস/বিএ

Advertisement