লক্ষ্য ৪১৩ রানের। রান তাড়া তো পরের ব্যাপার, পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে বাংলাদেশের হার বাঁচানো অনেকটাই অসম্ভব মনে হচ্ছে। তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে নেমে ৯.১ ওভারে ২৭ রান তুলতেই শীর্ষ ৩ ব্যাটারকে হারিয়ে বসেছে টাইগাররা। জিততে হলে করতে হবে আরও ৩৮৬ রান।
Advertisement
আগের টেস্টে লড়াকু সেঞ্চুরি করে নজর কেড়েছিলেন। পোর্ট এলিজাবেথে জোড়া শূন্য করে যেন সেই অর্জনকে ভুলিয়ে দিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। দুই ইনিংসেই অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল শরীরের অনেক দূরে ব্যাট চালিয়ে আউট হলেন তরুণ এই ওপেনার।
আগেরবার জয়ের উইকেট শিকার করেছিলেন পেসার ডোয়াইন অলিভার। ২ বলে জয় করেছিলেন শূন্য। এবার একইভাবে আউট হলেন গোল্ডেন ডাকে (১ বলে ০), উইকেটশিকারি স্পিনার কেশভ মহারাজ।
প্রথম ওভারেই জয় ফেরার পর নাজমুল হোসেন শান্তও দলকে বিপদে ফেলেছেন। মহারাজেরই ঘূর্ণি মিস করে প্যাডে লাগে তার। আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলে রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু লেগস্ট্যাম্প অল্প পেয়ে যাওয়ায় আম্পায়ার্স কলে ব্যক্তিগত ৭ রানে সাজঘরের পথ ধরতে হয় শান্তকে।
Advertisement
এরপর তামিম ইকবাল আর মুমিনুল হক মিলেও শেষ সময়টা কাটাতে পারেননি। দিনের শেষ বলে তামিমের (১৩) ব্যাটে লেগে বল চলে যায় স্লিপে। মহারাজের সঙ্গে উইকেট শিকারের উৎসবে যোগ দেন সাইমন হার্মার।
চতুর্থ দিনে হার্মার-মহারাজকে সামলে রান তাড়া করা কঠিন এক পরীক্ষাই হবে বাংলাদেশের জন্য। উইকেটে ৫ রান নিয়ে আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। এরপর স্বীকৃত ব্যাটারের মধ্যে মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, ইয়াসির আলি রাব্বি আছেন। তারা কি পারবেন কঠিন পথ পাড়ি দিতে?
বল চরকির মতো ঘুরছে। উইকেট থেকে সাহায্য পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম-মেহেদি হাসান মিরাজরাও। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৬ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। ছয় নম্বর উইকেট পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইনিংস ঘোষণা করে দেয় তারা।
প্রথম ইনিংসে একাই নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং লাইনআপে প্রথম আঘাত হানেন তাইজুল। তার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ডিন এলগার (২৬)।
Advertisement
এরপর প্রোটিয়াদের দ্বিতীয় উইকেটও তুলে নিয়েছেন তাইজুলই। এবার তিনি এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন পিটারসেনকে। ডিফেন্স করেও প্যাড বাঁচাতে পারেননি প্রোটিয়া ব্যাটার।
আম্পায়ার আউট দিলে অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন পিটারসেন। কিন্তু আম্পায়ার্স কলে লেগ স্ট্যাম্প পেয়ে যাওয়ায় এলবিডব্লিউ সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে (১৪)।
তার পরের ওভারেই খালেদ আহমেদের আঘাত। টাইগার পেসারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সেট ব্যাটার সারেল এরউই ব্যক্তিগত ৪১ রানে শর্ট মিডঅনে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল নিজের তৃতীয় শিকার বানিয়েছেন রায়ান রিকেলটনকে। শর্ট মিডঅনে একইভাবে মুমিনুলের ক্যাচ হন রিকেলটন (১২)। ১১৯ রানে ৪ উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
টেম্বা বাভুমা প্রথম ইনিংসের মতোই দারুণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে খেলছিলেন। বেশ সেট হয়ে গিয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। অবশেষে তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
৩০ রানে থাকা বাভুমা অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মিডল অ্যান্ড লেগে হিট করতো। ফলে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। এরপর উইয়ান মাল্ডারকে (৬) মিরাজ বোল্ড করলে ইনিংস ঘোষণা করে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
এর আগে বাংলাদেশকে ২১৭ রানে অলআউট করে ২৩৬ রানের বিশাল লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে আক্রমণাত্মক শুরু করেন দুই প্রোটিয়া ওপেনার এলগার ও এরউই। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ইনিংসের নবম ওভারেই দলীয় পঞ্চাশ পূরণ করে ফেলেন এ দুজন।
এর পেছনে অবশ্য বড় অবদান রয়েছে মেহেদি হাসান মিরাজের। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই সাজঘরে ফিরতে পারতেন এরউই। কিন্তু এবাদত হোসেনের বলে সোজা শরীর বরাবর আসা ক্যাচ দেখতেই পাননি মিরাজ। উল্টো বুকে আঘাত পেয়ে প্রায় ১৫ মিনিট মাঠের বাইরে থাকতে হয় তাকে।
উল্লেখ্য, আজকের দিনের শুরুটা বেশ ভালো করেছিলেন দুই অপরাজিত ব্যাটার ইয়াসির আলি রাব্বি ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের জুটিতে বেশ ভালোভাবেই এগোচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম সেশনে শেষ দিকে ইয়াসিরের বিদায়ের মাধ্যমে শুরু হয় দলীয় পতনের।
শেষ পর্যন্ত ১৪.৩ ওভারের ব্যবধানে মাত্র ২৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ২১৭ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে করা ৪৫৩ রানের চেয়ে ২৩৬ রানে পিছিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশকে ফলো-অন করাননি স্বাগতিক অধিনায়ক ডিন এলগার।
আগেরদিন করা ৫ উইকেটে ১৩৯ রান নিয়ে আজকের দিনের খেলা শুরু করেছিল বাংলাদেশ দল। আজ আর ৩৩.২ ওভারে মাত্র ৭৮ রান করতেই সাজঘরের পথ ধরেছেন বাকি পাঁচ ব্যাটার। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেছেন আত্মঘাতী রিভার্স সুইপে আউট হওয়া মুশফিকুর রহিম।
এমএমআর/জিকেএস