মহান আল্লাহ ৬ দিনে জগৎ সৃষ্টি করেছেন। আবার জমিনে বিচরণকারী সব প্রাণীর রিজিকের দায়িত্বও মহান আল্লাহর। এমন কোনো প্রাণী নেই যাকে তিনি রিজিক দেন না। হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে রিজিক বণ্টন ও জগৎ সৃষ্টির বর্ণনায় শুরু হবে নবম তারাবির তেলাওয়াত। আজকের তারাবির শুরুতেই মহান আল্লাহর এ ঘোষণা পড়া হবে-
Advertisement
وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَ مُسۡتَوۡدَعَهَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ
'আর জমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সেসবের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে।' (সুরা হুদ : আয়াত ৬)
পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা জগৎ সৃষ্টির বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেন-
Advertisement
وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ وَّ کَانَ عَرۡشُهٗ عَلَی الۡمَآءِ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ لَئِنۡ قُلۡتَ اِنَّکُمۡ مَّبۡعُوۡثُوۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِ الۡمَوۡتِ لَیَقُوۡلَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ
'আর তিনিই আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম। আর তুমি যদি বল, মৃত্যুর পর নিশ্চয়ই তোমাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে; তবে কাফেররা অবশ্যই বলবে, এতো শুধুই স্পষ্ট জাদু।'
রমজানের নবম তারাবি আজ। সুরা হুদ (৬-১২৩) এবং সুরা ইউসুফ (১-৫২) তেলাওয়াত করা হবে। সমগ্র সৃষ্টির জীবিকা বণ্টন, জগৎ সৃষ্টির বর্ণনায় তারাবি শুরু হলেও আরো অনেক বিষয় পড়া হবে আজ। সুরা দুটিতেই বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়া হয়েছে। সে সঙ্গে ১২তম পারার তেলাওয়াত শেষ হবে। সুরা হুদ ও সুরা ইউসুফের আলোচনার সংক্ষিপ্ত বিষয় তুলে ধরা হলো-
বিশেষ করে নবি পরিবারের ব্যক্তিদের মধ্যে যারা অবাধ্য বা দোষী তাদের জন্য কোনো ছাড় ছিল না; হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনার কিছু অংশও ওঠে আসবে। আবার হজরত নুহ আলাইহিস সালামের পরিবারের অবাধ্যতাকারীদের কথাও পড়া হবে।
Advertisement
হজরত নুহ আলাইহিস সালাম নিজ পরিবারের সদস্যের ব্যাপারে এভাবে আবেদন করেছিলেন-
رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ
'হে আমার পালনকর্তা! আমার যা জানা নেই এমন কোনো দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪৭)
সুরা হুদ (০৫-১২৩)
সুরা হুদ সেসব সুরার মধ্যে অন্যতম- যেসব সুরায় আগের সব জাতির ওপর আপতিত আল্লাহর গজব ও বিভিন্ন কঠিন আজাব, পরকালের ভয়াবহ ঘটনাবলি, পুরস্কার ও শাস্তির বিশেষ বর্ণনা রয়েছে। এ সুরায় উল্লেখিত হয়েছে বিশেষ ঘটনাপ্রবাহ। আজকের তারাবি যে আয়াত দিয়ে শুরু হবে, তা বিশ্ববাসীর জন্য মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও কৃত্বের মহান নিদর্শন। তিনি জমিনের সব সৃষ্টিকে রিজিকের নেয়ামত দান করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ مَا مِنۡ دَآبَّۃٍ فِی الۡاَرۡضِ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ رِزۡقُهَا وَ یَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَ مُسۡتَوۡدَعَهَا ؕ کُلٌّ فِیۡ کِتٰبٍ مُّبِیۡنٍ
'আর জমিনে বিচরণকারী সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি সেসবের স্থায়ী-অস্থায়ী অবস্থানক্ষেত্র সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে।' (সুরা হুদ : আয়াত ৬)
এ আয়াতে রিজিক বণ্টনের বিষয়টি ওঠে এসেছে। আল্লাহ তাআলা মানুষসহ জমিনের সব প্রাণীকে রিজিক দান করেন। রিজিক হলো-
'এমন বস্তু যা কোনো প্রাণী আহার্যরূপে গ্রহণ করে; যার দ্বারা সে দৈহিক শক্তি সঞ্চয় করে; প্রবৃদ্ধি সাধন এবং জীবন রক্ষা করে থাকে।'
রিজিকের জন্য মালিকানা স্বত্ব শর্ত নয়। সব জীব-জন্তু রিজিক ভোগ করে থাকে কিন্তু তারা তার মালিক হয় না। কারণ, সব জীব-জন্তুর মালিক হওয়ার যোগ্যতাই ওদের নেই। অনুরূপভাবে ছোট শিশুরাও মালিক নয়, কিন্তু ওদের রিজিক অব্যাহতভাবে তাদের কাছে পৌছতে থাকে।' (তাফসিরে কুরতুবি)
আয়াতে এমন সব প্রাণীকে دابة বলে বুঝানো হয়েছে, যা ভূপৃষ্ঠে বিচরণ করে।' (কুরতুবি) এমনকি আকাশে বিচরণকারী পাখীকূলও এর অন্তর্ভুক্ত। কারণ, খাদ্য গ্রহণের জন্য তারা ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করে থাকে এবং তাদের বাসস্থান ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন হয়ে থাকে সামুদ্রিক প্রাণীসমূহ ও পৃথিবীর বুকে বিচরণশীল। কেননা, সাগর-মহাসাগরের তলদেশেও মাটির অস্তিত্ব রয়েছে।
সুতরাং জমিন বলতে নয়, সব সৃষ্টির তথা সব প্রাণীকুলের রিজিকের দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহন করছেন। আর একথা এমনভাবে ব্যক্ত করেছেন যা দ্বারা দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দেশ করা যায়। আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
'তাদের রিজিকের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ন্যস্ত'।
একথা সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলার উপর এমন গুরুদায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়ার মতো কোনো ব্যক্তি বা শক্তি নেই, বরং তিনি নিজেই অনুগ্রহ করে গ্রহণ করে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। আর এটি এক পরম সত্য, দাতা ও সর্বশক্তিমান সত্তার ওয়াদা যাতে নড়চড় হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই।
সুতরাং নিশ্চয়তার বিধান করণার্থে আয়াতে على শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা ফরজ বা অবশ্যকরণীয় ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। অথচ আল্লাহর উপর কোনো কাজ ফরজ বা ওয়াজিব হতে পারে না। তিনি কারো হুকুমের মুখাপেক্ষী নন। বরং এটি সম্পূর্ণ তার অনুগ্রহ।' (কুরতুবি)
কোনো কোনো মুফাসসির অবশ্য বলেছেন যে, এর দ্বারা উদ্দেশ্য, সবার রিজিক মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে।' (কুরতুবি)
আয়াতে জমিনের বুকে অবস্থানকারী বিচরণশীল প্রাণীকূল বলা হয়েছে। আয়াতে উল্লেখিত مستقر এবং مستودع এর কয়েকটি অর্থ করা হয়েছে-
১. জমিনের বুকে অবস্থান স্থল। বা পিতার পিঠে অবস্থানকে।
২. দিন বা রাতে আশ্রয় নেওয়ার স্থান।
৩. মায়ের রেহেমে অবস্থান বা ডিমের মধ্যে অবস্থানকে।
৪. মৃত্যু হওয়ার স্থান।' (তাবারি, কুরতুবি, ইবনে কাসির)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যখন কারো মৃত্যু কোনো জমিনে লেখা থাকে তখন সে সেখানে যাওয়ার জন্য কোনো না কোনো প্রয়োজন অনুভব করবে। তারপর সে যখন সেখানে পৌছবে তখন তাকে মৃত্যু দেওয়া হয়। আর কেয়ামতের দিন জমিন তাকে বের করে দিয়ে বলবে- هٰذَا مَا اسْتَوْدَعْتَنِيْ ; এটা আমার কাছে আপনি আমানত রেখেছিলেন।' (মুসতাদরাকে হাকেম, বায়হাকি)
আজ এ আয়াত দ্বারাই তারাবি শুরু হবে; মহান আল্লাহ মানুষের জীবিকার দায়িত্বই নয় বরং জমিনে বিচরণকারী সকবার জিম্মাদারী পালন করেন। আল্লাহ বলেন-
'আর পৃথিবীতে কোনো বিচরণশীল নেই, তবে সবার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ নিয়েছেন, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সবকিছুই এক সুবিন্যস্ত কিতাবে রয়েছে।' (সুরা হুদ : আয়াত ৬)
পরের আয়াতে সুবিন্যস্ত আসমান-জমিন সৃষ্টির বিষয়টি তুলে ধরেছেন। আরশের অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে। আবার মানুষের মধ্যে যারা নেক আমল করে তাদের পরীক্ষা করার বিষয়টিও ওঠে এসেছে এ আয়াতে। আল্লাহ বলেন-
وَ هُوَ الَّذِیۡ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ فِیۡ سِتَّۃِ اَیَّامٍ وَّ کَانَ عَرۡشُهٗ عَلَی الۡمَآءِ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا ؕ وَ لَئِنۡ قُلۡتَ اِنَّکُمۡ مَّبۡعُوۡثُوۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِ الۡمَوۡتِ لَیَقُوۡلَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ هٰذَاۤ اِلَّا سِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ
'তিনিই আসমান ও জমিন ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, তাঁর আরশ ছিল পানির উপরে, তিনি তোমাদের পরীক্ষা করতে চান যে, তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে ভালো কাজ করে। আর যদি আপনি তাদের বলেন যে, "নিশ্চয় তোমাদেরকে মৃত্যুর পরে জীবিত ওঠানো হবে, তখন কাফেররা অবশ্য বলে এটা তো স্পষ্ট জাদু!' (সুরা হুদ : আয়াত ৭)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর ডান হাত পরিপূর্ণ, দিন-রাত খরচ করলেও তা কমে না। তোমরা কি দেখ না যে, আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সময় থেকে আজ পর্যন্ত তিনি কত বিপুল পরিমাণে খরচ করেছেন? তবুও তার ডান হাতের কিছুই কমেনি। আর তার আরশ পানির উপর অবস্থিত ছিল। তাঁর অন্য হাতের রয়েছে ইনসাফের দাঁড়িপাল্লা, সে অনুসারে বৃদ্ধি-ঘাটতি বা উন্নতি অবনতি ঘটান।' (বুখারি)
হাদিসের অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, 'নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'শুধু আল্লাহই ছিলেন, তাঁর আগে কেউ ছিলেন না। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর এবং তিনি জিকর বা ভাগ্যফলে সবকিছু লিখে নেন এবং আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেন।' (বুখারি)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে সব সৃষ্টি জগতের তাকদির লিখে রেখেছেন। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর।' (মুসলিম)
মোটকথা, আল্লাহ তাআলা কোরআনের ২১টি আয়াতে আরশের কথা উল্লেখ করেছেন। হাদিসে পাকেও নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশের বিভিন্ন বর্ণনা দিয়েছেন। মূলত আরশ হলো আল্লাহর প্রথম সৃষ্টি। সেটা সবচেয়ে বড় সৃষ্টি। আরশের সামনে কুরসি একটি রিং এর মতো, যেমনিভাবে আসমান ও জমিন কুরসির সামনে রিং এর মতো। আরশের গঠন গম্বুজের মতো। যা পুরো সৃষ্টি জগতের উপরে রয়েছে। এমনকি জান্নাতুল ফেরদাউসও আরশের নীচে অবস্থিত।
আরশের কয়েকটি পা রয়েছে। হজরত মুসা আলাইহিস সালাম হাশরের মাঠে তার একটি ধরে থাকবেন। এ আরশের বহনকারী কিছু ফেরেশতা রয়েছেন। তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ঘোষণা দিচ্ছেন যে-
وَّ الۡمَلَکُ عَلٰۤی اَرۡجَآئِهَا ؕ وَ یَحۡمِلُ عَرۡشَ رَبِّکَ فَوۡقَهُمۡ یَوۡمَئِذٍ ثَمٰنِیَۃٌ
'কেয়ামতের দিন তারা হবেন আট।' (সুরা হাক্কাহ : আয়াত ১৭)
তবে এ ব্যাপারে ভিন্ন মত রয়েছে যে, আরশের বহনকারী ফেরেশতাগণ কি আট জন নাকি আট শ্রেণী নাকি আট কাতার। এ আয়াতে বর্ণিত পানির উপর আরশ থাকার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাআলার আরশ কোনো কিছু সৃষ্টি করার আগে পানির উপর ছিল। এর দ্বারা পানি আগে সৃষ্টি করা বুঝায় না।
তবে এখানে পানি দ্বারা দুনিয়ার কোনো সমুদ্রের পানি বুঝানো হয়নি। কেননা তা আরো অনেক পরে সৃষ্ট। বরং এখানে আল্লাহর সৃষ্ট সুনির্দিষ্ট কোনো পানি উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।'
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, 'কে কাজে শ্রেষ্ঠ' তা তিনি পরীক্ষা করবেন। কে বেশি কাজ করেছে পরীক্ষা করবেন তা কিন্তু তিনি বলেননি। কেননা, আল্লাহর দরবারে পরিমাণের চেয়ে মান-সম্মত হওয়াই গ্রহণযোগ্য। আর আল্লাহর দরবারে কোনো কাজ মান-সম্মত সে সময়ই হতে পারে যখন তা আল্লাহর নির্দেশ মত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রদর্শিত পন্থায় হবে। নতুবা তা গ্রহণযোগ্যতাই হারাবে।
মহান আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী এজন্য সৃষ্টি করেছেন যা মূলত মানুষ সৃষ্টি করাই তাঁর উদ্দেশ্য ছিল। এর মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে পরীক্ষা করা। তিনি সেটাকে অকারণে বা অনাহুত তৈরী করেন নি। তিনি নিজেকে এ ধরনের অনাহুত ও বেহুদা সৃষ্টি করা থেকে পবিত্র ঘোষণা করেছেন। তাছাড়া এটাও বলেছেন যে, কাফেররাই শুধু আসমান ও জমিনকে বেহুদা সৃষ্টি করেছেন বলে মনে করে থাকে। তাদের এ ধারণার জন্য তিনি তাদের উপর কঠোর সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন-
وَ مَا خَلَقۡنَا السَّمَآءَ وَ الۡاَرۡضَ وَ مَا بَیۡنَهُمَا بَاطِلًا ؕ ذٰلِکَ ظَنُّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا ۚ فَوَیۡلٌ لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنَ النَّارِ
'আমি আকাশ, পৃথিবী এবং এ দুয়ের মধ্যবর্তী কোনো কিছুই অনর্থক সৃষ্টি করিনি। অনর্থক সৃষ্টি করার ধারণা তাদের যারা কাফের, কাজেই কাফেরদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের দুর্ভোগ।' (সুরা সোয়াদ : আয়াত ২৭)
আল্লাহ আরও বলেন, 'তোমরা কি মনে করেছিলে যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না? মহিমান্বিত আল্লাহ্ যিনি প্রকৃত মালিক, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই; সম্মানিত আৱশের তিনি অধিপতি।' (সুরা আল মুমিনুন : আয়াত ১১৫–১১৬)
তিনি আরও বলেন, 'আমি সৃষ্টি করেছি জিন এবং মানুষকে এজন্যেই যে, তারা একমাত্র আমারই ইবাদাত করবে।' (সুরা যারিয়াত : আয়াত ৫৬)
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, তুমি ব্যয় কর, তোমার উপর ব্যয় করা হবে। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, আল্লাহর হাত পরিপূর্ণ। কোনো প্রকার ব্যয় তাতে কোনো কিছুর ঘাটতি করে না। দিন-রাত তা প্রচুর পরিমানে দান করে। তোমরা আমাকে জানাও, আসমান ও জমিনের সৃষ্টিলগ্ন থেকে যত কিছু ব্যয় হয়েছে সেসব কিছু তার হাতে; যা আছে তাতে সামান্যও ঘাটতি করে না। আর তার আরশ হচ্ছে পানির উপর এবং তার হাতেই রয়েছে মিজান, তিনি সেটাকে উপর-নীচু করেন।' (বুখারি, মুসলিম)
অন্য হাদিসে হজরত ইমরান ইবন হুসাইন বলেন, 'আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে প্রবেশ করলাম আর আমার উটটি দরজার কাছে বেঁধে রাখলাম। তখন তার কাছে বনু তামিম প্রবেশ করলে তিনি বললেন, বনু তামিম- তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তারা বলল, সুসংবাদ তো দিলেন, এবার আমাদেরকে কিছু দিন (সম্পদ)। এটা তারা দুইবার বললেন। তখন রাসুলের কাছে ইয়ামেনের কিছু লোক প্রবেশ করল। তিনি বললেন, হে ইয়ামেনবাসী তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর, যখন বনু তামমি সেটা গ্রহণ করল না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তা গ্রহণ করলাম।
তারা আরও বলল, আমরা এ বিষয়ে প্রথম কি তা জানতে চাই। তিনি বললেন, আল্লাহই ছিলেন, তিনি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। আর তিনি সবকিছু জিকর (লাওহে মাহফুযে) লিখে রেখেছিলেন। আর তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেন।
বর্ণনাকারী ইমরান ইবন হুসাইন বলেন, তখন একজন আহবানকারী ডেকে বলল, হে ইবনুল হুসাইন! তোমার উষ্ট্রীটি চলে গেছে। তখন আমি বেরিয়ে পড়ে দেখলাম, উটটি এতদুর চলে গেছে যে, যেদিকে তাকাই শুধু মরিচিকা দেখতে পাই। আল্লাহর শপথ আমার ইচ্ছা হচ্ছিল আমি যেন সেটাকে একেবারেই ছেড়ে দেই (অর্থাৎ রাসুলের মাজলিস থেকে বের হতে তার ইচ্ছা হচ্ছিল না)' (বুখারি)
এভাবে ঘটনাবহুল আয়াত তেলাওয়াতে পড়া হবে নবম তারাবির নামাজ। মানুষ বিপদে পড়লেই আল্লাহকে ডাকতে থাকে। আর বিপদ চলে গেলে তাকে ভুলে যায়। কিন্তু যারা বিপদ যাওয়ার পর ধৈর্যধারণ করে তাদের জন্য রয়েছে পুরস্কার। আল্লাহ বলেন-
'আর যদি তার উপর আপতিত দুঃখ কষ্টের পরে তাকে সুখভোগ করতে দেই, তবে সে বলতে থাকে যে, আমার অমঙ্গল দূর হয়ে গেছে, আর সে আনন্দে আত্মহারা হয়, অহঙ্কারে উদ্যত হয়ে পড়ে। তবে যারা ধৈর্যধারণ করেছে এবং সৎকার্য করেছে তাদের জন্য ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান রয়েছে।' (সুরা হুদ : আয়াত ১১)
হজরত নুহ আলাইহিস সালাম তাঁর কাওমের কাছে আল্লাহর দাওয়াত পৌছালে তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত করে। সেসব ঘটনা ও ভয়াবহ আজাব থেকে তার অনুসারিদের বাঁচাতে নৌকা তৈরির শিক্ষাদান ও এর বিবরণও পড়া হবে আজ। আল্লাহ বলেন-
> 'আর অবশ্যই আমি নুহ (আঃ) কে তাঁর জাতির প্রতি প্রেরণ করেছি, (তিনি বললেন) নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী।' (সুরা হুদ : আয়াত ২৫)
> 'তোমরা আল্লাহ ব্যতিত কারো ইবাদত করবে না। নিশ্চয় আমি তোমাদের ব্যাপারে এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের আজাবের ভয় করছি।' (সুরা হুদ : আয়াত ২৬)
> 'তখন তাঁর কওমের কাফের প্রধানরা বলল আমরা তো আপনাকে আমাদের মতো একজন মানুষ ব্যতীত আর কিছু মনে করি না; আর আমাদের মধ্যে যারা ইতর ও স্থুলবুদ্ধি সম্পন্ন তারা ব্যতীত কাউকে তো আপনার আনুগত্য করতে দেখি না এবং আমাদের উপর আপনাদের কোনো প্রাধান্য দেখি না, বরং আপনারা সবাই মিথ্যাবাদী বলে আমরা মনে করি।' (সুরা হুদ : আয়াত ২৭)
আল্লাহ তাআলা নুহ আলাইহিস সালামকে হতাশ না হতে বলে নৌকা তৈরির নির্দেশ দিলেন। আল্লাহর নির্দেশে তিনি নৌকা তৈরি করলেন। এ সময় মানুষ উপহাস করতে থাকে। আল্লাহ বলেন-
> 'আর নুহ-এর প্রতি ওহি প্রেরণ করা হলো যে, যারা ইতিমধ্যেই ঈমান এনেছে তাদের ছাড়া আপনার জাতির অন্য কেউ ঈমান আনবেনা এতএব তাদের কার্যকলাপে বিমর্ষ হবেন না।' (সুরা হুদ : আয়াত ৩৬)
> 'আর আপনি আমার সম্মুখে আমারই নির্দেশ মোতাবেক একটি নৌকা তৈরি করুন এবং পাপিষ্ঠদের ব্যাপারে আমাকে কোনো কথা বলবেন না। অবশ্যই তারা ডুবে মরবে।' (সুরা হুদ : আয়াত ৩৭)
> 'তিনি নৌকা তৈরি করতে লাগলেন, আর তাঁর কওমের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যখন পাশ দিয়ে যেত, তখন তাঁকে বিদ্রুপ করত। তিনি বললেন, তোমরা যদি আমাদের উপহাস করে থাক, তবে তোমরা যেমন উপহাস করছ আমরাও তদ্রুপ তোমাদের উপহাস করছি।' (সুরা হুদ : আয়াত ৩৮)
আল্লাহর আজাবে পতিত হয় নুহ আলাইহিস সালামের জাতি। যারা তাকে মেনে নিয়েছিল তারা ব্যতিত তার নিজ সন্তানও আল্লাহর গজবে পতিত হয়। আল্লাহ বলেন-
'অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে পৌঁছাল এবং ভুপৃষ্ঠ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠল, আমি বললামঃ সর্বপ্রকার জোড়ার দুটি করে এবং যাদের উপরে পূর্বেই হুকুম হয়ে গেছে তাদের বাদ দিয়ে, আপনার পরিজনবর্গ ও সব ঈমানদারগণকে নৌকায় তুলে নিন। বলাবাহুল্য অতি অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সাথে ঈমান এনেছিল।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪০)
> 'আর নৌকাখানি তাদের বহন করে চলল পর্বত সমান তরঙ্গমালার মাঝে, আর নুহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর পুত্রকে ডাক দিলেন আর সে সরে রয়েছিল, তিনি বললেন, প্রিয় বৎস! আমাদের সাথে আরোহন কর এবং কাফেরদের সাথে থেকো না।' (সুরা হুদ : ৪২)
> 'সে (ছেলে) বলল, আমি অচিরেই কোনো পাহাড়ে আশ্রয় নেব, যা আমাকে পানি হতে রক্ষা করবে। নুহ (আলাইহিস সালাম) বললেন, আজকের দিনে আল্লাহর হুকুম থেকে কোনো রক্ষাকারী নেই। একমাত্র তিনি যাকে দয়া করবেন। এমন সময় উভয়ের মাঝে তরঙ্গ আড়াল হয়ে দাঁড়াল, ফলে সে নিমজ্জিত হল।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪৩)
নবি পরিবারের অবাধ্য ব্যক্তিরা কখনো নবি পরিবারের আওতায় থাকে না মর্মেও আল্লাহ ঘোষণা দেন। আল্লাহ বলেন-
'আর নুহ (আলাইহিস সালাম) তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪৫)
> 'আল্লাহ বলেন, হে নুহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪৬)
> 'নুহ (আলাইহিস সালাম) (তখন এ দোয়া পড়েছিলেন) বলেন-
رَبِّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَسْأَلَكَ مَا لَيْسَ لِي بِهِ عِلْمٌ وَإِلاَّ تَغْفِرْ لِي وَتَرْحَمْنِي أَكُن مِّنَ الْخَاسِرِينَ
'হে আমার পালনকর্তা! আমার যা জানা নেই এমন কোনো দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব।' (সুরা হুদ : আয়াত ৪৭)
অতপর আদ জাতির কাছে আল্লাহ তাআলা হজরত হুদ আলাইহিস সালামকে পাঠান। তিনি তাদের মাঝে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেন। তারা তাকেও অস্বীকার করে। মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করে। আর এসব আয়াত নাজিল করে আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এক দিকে সান্ত্বনা দেন। অন্য দিকে ইয়াহুদিদেরকে তাদের আগের জাতির ইতিহাস স্মরণ করিয়ে বিশ্বনবির নবুয়তের সত্যতা তুলে ধরেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
> 'আর আদ জাতির প্রতি আমি তাদের ভাই হুদকে প্রেরণ করেছি; তিনি বলেন-হে আমার জাতি, আল্লাহর বন্দেগী কর, তিনি ভিন্ন তোমাদের কোনো মাবুদ নেই, তোমরা সবাই মিথ্যা আরোপ করছ।' (সুরা হুদ : আয়াত ৫০)
> 'আর হে আমার কওম! তোমাদের পালন কর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর, অতপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ কর; তিনি আসমান থেকে তোমাদের উপর বৃষ্টি ধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন, তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মত বিমুখ হয়ো না।' (সুরা হুদ : আয়াত ৫২)
> 'এ ছিল আদ জাতি, যারা তাদের পালনকর্তার আয়াতকে অমান্য করেছে, আর তদীয় রসূলগণের অবাধ্যতা করেছে এবং প্রত্যেক উদ্ধত বিরোধীদের আদেশ পালন করেছে।' (সুরা হুদ : আয়াত ৫৯)
এভাবে এ সুরায় সালেহ, লুত, ইবরাহিম, শোয়ায়েব, মুসা আলাহিস সালামসহ তাদের দ্বীনের দাওয়াত ও তাদের কাওমের অস্বীকার ও মিথ্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনুল কারিমে তা বিশ্বনবির নবুয়তের সত্যয়নের জন্য তুলে ধরা হয়েছে। এসব ঘটনার বর্ণনায় যাতে বিশ্বনবি প্রশান্তি লাভ করেন এবং নব মুসলিমরা অনুপ্রেরণা পায় সে উদ্দেশ্যেই আল্লাহ তাআলা এ ঘটনার বর্ণনা করেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
> 'আর আমি রাসুলগণের সব বৃত্তান্তই আপনাকে বলছি, যদ্দ্বারা আপনার অন্তরকে মজবুত করছি। আর এভাবে আপনার কাছে মহাসত্য এবং ঈমানদারদের জন্য নসিহত ও স্বরণীয় বিষয়বস্তু এসেছে। আর যারা ঈমান আনে না, তাদেরকে বলে দাও যে, তোমরা নিজ নিজ অবস্থায় কাজ করে যাও আমরাও কাজ করে যাই। এবং তোমরাও অপেক্ষা করে থাক, আমরাও অপেক্ষায় রইলাম। আর আল্লাহর কাছেই আছে আসমান ও যমীনের গোপন তথ্য; আর সকল কাজের প্রত্যাবর্তন তাঁরই দিকে; অতএব, তাঁরই বন্দেগী কর এবং তাঁর উপর ভরসা রাখ, আর তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে তোমার পালনকর্তা কিন্তু বে-খবর নন। (সুরা হুদ : আয়াত ১২০-১২৩)
সুরা ইউসুফ : আয়াত ০১-৫২
সুরা ইউসুফ অনন্য মর্যাদা সম্পন্ন একটি সুরা। আল্লাহ বিভিন্ন ঘটনাকে বিভিন্ন সুরা একাধিকবার বর্ণনা করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন নবি-রাসুলের বর্ণনাও বিভিন্ন সুরায় করেছেন।
সুরার শুরুতেই আরবি ভাষায় নাজিল হওয়া কুরআনের সত্যতার বর্ণনা এসেছে। তার পরই হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের স্বপ্নের বর্ণনা করা হয়েছে। যা তিনি তার বাবাকে বলেছিলেন। বাবা তার ভাইদেরকে এ স্বপ্নের কথা বলতে নিষেধ করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা কুরআনে এ ঘটনা এভাবে তুলে ধরেন-
- 'যখন ইউসুফ পিতাকে বললঃ পিতা, আমি স্বপ্নে দেখেছি এগারটি নক্ষত্রকে। সুর্যকে এবং চন্দ্রকে। আমি তাদেরকে আমার উদ্দেশে সেজদা করতে দেখেছি। তিনি বললেনঃ বৎস, তোমার ভাইদের সামনে এ স্বপ্ন বর্ণনা করো না। তাহলে তারা তোমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে। নিশ্চয় শয়তান মানুষের প্রকাশ্য।' (সুরা ইউসুফ : আয়াত ৪-৫)
এ সুরায় আল্লাহ তাআলা শুধুমাত্র হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। যা অন্য কোনো সুরায় বর্ণনা হয়নি। সুরা ইউসুফের প্রতিটি আয়াতই সুন্দর ঘটনায় সাজানো। এ ঘটনা জানতে তাই পুরো সুরাটাই পড়ার বিকল্প নেই। যাতে রয়েছে অনেক শিক্ষা ও নসিহত।
হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের জীবনের ঘটনার সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনের সঙ্গে মিল রয়েছে। আল্লাহ তাআলা হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ন্যায় বিশ্বনবিকে নবুয়তের প্রারম্ভে সত্য স্বপ্ন দেখান।
তাছাড়া হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের আপন-জন তাঁকে অনেক কষ্ট ও নির্যাতন করেছেন উপরন্তু তিনি তার ভাইদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছেন। তাদের প্রতি কোনো প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। কোনো অত্যাচার নির্যাতনই হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামকে অধৈর্য করে তোলেননি।
ঠিক বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও নবুয়তের শুরু থেকেই কাছে আত্মীয়-স্বজন দ্বারা নির্যাতিত হয়েছিলেন। অধৈর্য হননি এবং কারো প্রতি প্রতিশোধও গ্রহণ করেননি। এমনকি জুলুম অত্যাচারের কারণে বিশ্বনবিকে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করতে হয়েছে।
বারবার মদিনা আক্রমণ করে ইসলাম ও বিশ্বনবিকে চিরতরে শেষ করে দিতে চেয়েছে। অতপর বিশ্বনবি যখন অষ্টম হিজরিতে মক্কা বিজয় করলেন, তখন তিনি বললেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি পরম দয়ালু।
সর্বোপরি আল্লাহ তাআলা সুরা ইউসুফ নাজিল করেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যই নাজিল করেছেন। এজন্য সুরা ইউসুফ অনন্য মর্যাদার অধিকারী।
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম