ধর্ম

তিন সাহাবির তওবা কবুলে নাজিল হলো যে আয়াত

সত্যের বিজয় সুনিশ্চিত। এ কারণেই কোরআনুল কারিমের ঘোষণা ছিল এমন- ‘সত্য সমাগত; অসত্য বিতাড়িত’। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিন সাহাবির জীবনেও ঘটেছে এমন ঘটনা। তাঁরা সত্যের ওপর ছিলেন, তাঁরা বিজয়ী হয়েছেন। তাঁদের তওবা আল্লাহ কবুল করেছেন। তাঁদের ব্যাপারে কোরআনুল কারিমে আয়াত নাজিল করেছেন। সাহাবিদের তওবা কবুলের ঘটনা, নবিদের উপদেশ ও সুন্দর সুন্দর ঘটনা বর্ণনা করবেন হাফেজে কোরআনগণ। তাদের কণ্ঠে তেলাওয়াত হবে ফেরাউনের ঘটনাও।

Advertisement

আজ ৮ তারাবি। পড়া হবে ১১তম পাড়া। মুমিন মুসলমানের হৃদয়ের খোরাক মিলবে আজ। পুরো পারার অনুবাদ পড়তে পারলে হৃদয় আলোকিত হয়ে যাবে। কোরআনের নূর ও আল্লাহর পরিচয়ে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা দেখতে পাবেন মুমিন।

ঘটনার সূত্রপাত আজকের তারাবির প্রথম আয়াত থেকে। ঘটনার বর্ণনাও শুরু এখান থেকে। আজকের তারাবিতে সুরা তওবার ৯৪ আয়াত থেকে শেষ পর্যন্ত, সুরা ইউনুস এবং সুরা হুদের প্রথম ৫ আয়াত পর্যন্ত পড়া হবে। আজকের তারাবিতে অনুষ্ঠিত হবে যেসব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা। সুরাগুলো সংক্ষিপ্ত আলোচ্য সূচি তুলে ধরা হলো-

সুরা তওবা (৯৪-১২৯)

Advertisement

সুরা তওবার ৯৪নং আয়াত দিয়ে ১১তম পারা শুরু হয়েছে। হাফেজে কোরআনগণ এ আয়াতের মাধ্যমে রমজানের অষ্টম তারাবির নামাজ শুরু করবেন। মুনাফিকরা নবিজীর কাছে এসে অজুহাত পেশ করবে; অথচ আল্লাহ তাআলা নবিজীকে তাদের অজুহাতের ব্যাপারে আগেই জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

 یَعۡتَذِرُوۡنَ اِلَیۡکُمۡ اِذَا رَجَعۡتُمۡ اِلَیۡهِمۡ ؕ قُلۡ لَّا تَعۡتَذِرُوۡا لَنۡ نُّؤۡمِنَ لَکُمۡ قَدۡ نَبَّاَنَا اللّٰهُ مِنۡ اَخۡبَارِکُمۡ ؕ وَ سَیَرَی اللّٰهُ عَمَلَکُمۡ وَ رَسُوۡلُهٗ ثُمَّ تُرَدُّوۡنَ اِلٰی عٰلِمِ الۡغَیۡبِ وَ الشَّهَادَۃِ فَیُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ

'তোমরা তাদের কাছে ফিরে আসলে তারা তোমাদের কাছে অজুহাত পেশ করবে। বলুন, তোমরা অজুহাত পেশ করো না, আমরা তোমাদেরকে কখনো বিশ্বাস করবো না; অবশ্যই আল্লাহ আমাদেরকে তোমাদের খবর জানিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের কাজকর্ম দেখবেন এবং তার রাসুলও। তারপর গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানীর কাছে তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেওয়া হবে এরপর তোমরা যা করতে, তা তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন।' (সুরা তওবা : আয়াত ৯৪)

আয়াতের ব্যাখ্যায় এসেছে,

Advertisement

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু কাব ইবনু মালিক রাহমাতুল্লাহি আলাইহ বর্ণনা করেছেন, 'আমি কাব ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শুনেছি, তিনি যখন তাবুকের যুদ্ধে পিছনে রয়ে গেলেন, আল্লাহর কসম! তখন আল্লাহ আমাকে এমন এক নেয়ামত দান করেন যে মুসলিম হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এত বড় নেয়ামত পাইনি। তাহলো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সত্য কথা প্রকাশ করা। আমি তাঁর কাছে মিথ্যা বলিনি। যদি মিথ্যা বলতাম, তবে অন্যান্য (মুনাফেক ও) মিথ্যাচারী যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, আমিও সেভাবে ধ্বংস হয়ে যেতাম। যে সময় ওহি অবতীর্ণ হলো- ‘তারা তোমাদের সামনে কসম করবে যাতে তোমরা তাদের প্রতি রাজি হও। যদি তোমরা তাদের প্রতি রাজি হয়ে যাও তবুও আল্লাহ এসব ফাসিক লোকদের প্রতি রাজি হবেন না’ (সুরা বারাআত : ৯৬)।' (বুখারি)

এ আয়াতে সেসব লোকদের কথা বলা হয়েছে, 'যারা জেহাদ থেকে ফিরে আসার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে উপস্থিত হয়ে নিজেদের জেহাদে অংশগ্রহণ না করার পক্ষে মিথ্যা ওজর আপত্তি পেশ করছিল। আর এ আয়াতগুলো মদিনায় ফিরে আসার আগেই অবতীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাতে পরবর্তী সময়ে সংঘটিত ঘটনার সংবাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, আপনি যখন মদিনায় ফিরে যাবেন, তখন মুনাফেকরা ওজর-আপত্তি নিয়ে আপনার কাছে আসবে।' (ফাতহুল কাদির)

আর বাস্তবে এ ঘটনাই ঘটেছিল। এ আয়াতগুলোতে তাদের সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যখন এরা আপনার কাছে ওজর আপত্তি পেশ করার জন্য আসে, তখন আপনি তাদেরকে বলে দিন যে-

মিথ্যা ওজর পেশ করো না। আমরা তোমাদের কথাকে সত্য বলে স্বীকার করব না। কারণ, আল্লাহ তাআলা ওহির মাধ্যমে আমাদেরকে তোমাদের মনের গোপন ইচ্ছা জানিয়ে দিয়েছেন। ফলে তোমাদের মিথ্যাবদিতা আমাদের কাছে প্রকাশ হয়ে গেছে। কাজেই কোন রকম ওজর আপত্তি বর্ণনা করা অর্থহীন।

তবে এখনও অবকাশ রয়েছে যেন তারা মুনাফেকি পরিহার করে সত্যিকার মুসলিম হয়ে যায়। ফলে আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর রাসুল তোমাদের কার্যকলাপ দেখবেন যে, তা কি এবং কোন ধরনের হয়। যদি তোমরা তওবা করে নিয়ে সত্যিকার মুসলিম হয়ে যাও, তবে সে অনুযায়ীই ব্যবস্থা করা হবে; তোমাদের পাপ মাফ হয়ে যাবে। অন্যথায় তা তোমাদের কোনো উপকারেই আসবে না। (তাবারি, ফাতহুল কাদির)

সুরা তওবার বাকি আয়াতের তেলাওয়াতে তওবা কবুল ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং তাঁদের জন্য জান্নাতের ঘোষণা আলোচিত হয়েছে। তবে শুরুতে মুনাফিকদের আলোচনা রয়েছে। যা আল্লাহ তাআলা বিশ্বনবিকে তাবুক অভিযান থেকে ফেরার পথে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, মদিনায় পৌঁছে মুনাফেকরা বিভিন্ন অজুহাত পেশ করবে। আর বাস্তবেই তাই ঘটেছিল। তারা মিথ্যা কসম খেয়ে নিজেদের স্বপক্ষে কথা বলছিল।

তাবুক যুদ্ধে না যাওয়া তিন সাহাবির সত্য বর্ণনা ও তওবা কবুল

আবার অলসতার কারণে তিনজন ঈমানদার সাহাবির তাবুক অভিযানে যেতে পারেনি। তারা বিশ্বনবির কাছে কোনো ওজর পেশ না করে সুস্পষ্টভাবে স্বীকার করেছে যে, কোনো ওজরের কারণে নয় বরং অলসতার কারণে তারা তাবুক অভিযানে অংশগ্রহণ করেনি। তাদের অলসতার জন্য শাস্তিস্বরূপ তাদের ৫০ দিন বয়কট করে রাখা হয়। আবার সত্য প্রকাশে তাদের দেওয়া হয় বিশেষ পুরস্কার।

যে তিনজন প্রখ্যাত সাহাবি তাবুকের যুদ্ধে যাননি। তাদের এই না যাওয়ার অপরাধ থেকে তারা কীভাবে তওবা করেছেন; দীর্ঘ এক হাদিসে তারই বর্ণনা পাওয়া যায়। সাহাবি কাব ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে হজরত আবদুল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি (আমার বাবা) কাব ইবনু মালেককে ঐ ঘটনা বর্ণনা করতে শুনেছি-

যখন তিনি তাবুকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে থেকে যান। তিনি বলেন, ‘আমি তাবুক যুদ্ধ ছাড়া যে যুদ্ধই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন তাতে কখনোই তাঁর পেছনে থাকিনি। (অবশ্য বদরের যুদ্ধ থেকে আমি পেছনে রয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু বদরের যুদ্ধে যে অংশগ্রহণ করেনি, তাকে ভৎর্সনা করা হয়নি।) মূল কারণ ছিল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমগণ কুরাইশদের কাফেলার পশ্চাদ্ধাবনে বের হয়েছিলেন। (শুরুতে যুদ্ধের নিয়ত ছিল না।) পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে ও তাঁদের শত্রুকে (পূর্বঘোষিত) ওয়াদা ছাড়াই একত্রিত করেছিলেন।

আমি আক্বাবার রাতে (মিনায়) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে উপস্থিত ছিলাম, যখন আমরা ইসলামের উপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিলাম। আকাবার রাত অপেক্ষা আমার কাছে বদরের উপস্থিতি বেশি প্রিয় ছিল না। যদিও বদর (অভিযান) মানুষের কাছে ওর চেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। (কাব বলেন) আর আমার তাবুকের যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পেছনে থাকার ঘটনা এরূপ যে, এই যুদ্ধ থেকে পেছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম অন্য কোনো সময় এমন ছিলাম না।

আল্লাহর কসম! এর আগে আমার কাছে কখনো দুইটি সওয়ারি (বাহন) একত্রিত হয়নি। কিন্তু এই (যুদ্ধের) সময়ে একই সঙ্গে দুইটি সওয়ারি আমার কাছে মজুদ ছিল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোনো যুদ্ধে বের হওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন ‘তাওরিয়া’ করতেন (তাওরিয়া হলো- সফরের গন্তব্যস্থলের নাম গোপন রেখে সাধারণ অন্য স্থানের নাম নিতেন, যাতে শত্রুরা টের না পায়)। এই যুদ্ধ এভাবে চলে এল।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভীষণ গরমে এই যুদ্ধে বের হলেন এবং দূরের সফর ও দীর্ঘ মরুভূমির সম্মুখীন হলেন। আর বহু সংখ্যক শত্রুরও সম্মুখীন হলেন। এই জন্য তিনি মুসলিমদের সামনে বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলেন; যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী যথাযথ প্রস্তুতি নেন। ফলে তিনি সেই দিকও বলে দিলেন, যেদিকে যাবার ইচ্ছা করেছেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে অনেক মুসলিম ছিলেন এবং তাদের কাছে কোনো হাজিরা খাতা ছিল না, যাতে তাদের নামসমূহ লেখা হবে। এই জন্য যে ব্যক্তি (যুদ্ধে) অনুপস্থিত থাকতো সে এই ধারণাই করত যে, আল্লাহর ওহি অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া তার অনুপস্থিতির কথা গুপ্ত থাকবে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এই যুদ্ধ ফল পাকার মৌসুমে করেছিলেন এবং সে সময় (গাছের) ছায়াও উৎকৃষ্ট (ও প্রিয়) ছিল, আর আমার টানও ছিল সেই ফল ও ছায়ার দিকে।

সুতরাং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা (তাবুকের যুদ্ধের জন্য) প্রস্তুতি নিলেন। আর (আমার এই অবস্থা ছিল যে) আমি সকালে আসতাম, যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে আমিও (যুদ্ধের) প্রস্তুতি নেই। কিন্তু কোনো ফয়সালা না করেই আমি (বাড়ী) ফিরে আসতাম এবং মনে মনে বলতাম যে, আমি যখনই ইচ্ছা করবো, যুদ্ধে শামিল হয়ে যাব। কেননা, আমি এর ক্ষমতা রাখি। আমার এই গড়িমসি অবস্থা অব্যাহত রইল এবং লোকেরা জেহাদের আয়োজনে প্রবৃত্ত থাকলেন।

এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও মুসলিমরা একদিন সকালে তাবুকের জেহাদে বেরিয়ে পড়লেন এবং আমি প্রস্তুতির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্তই উপনীত হতে পারলাম না। আমি আবার সকালে এলাম এবং বিনা সিদ্ধান্তেই (বাড়ী) ফিরে গেলাম।

সুতরাং আমার এই অবস্থা অব্যাহত থেকে গেল। ওদিকে মুসলিম সেনারা দ্রুতগতিতে আগে বাড়তে থাকলো এবং যুদ্ধের ব্যাপারও ক্রমশ এগুতে লাগলো। আমি ইচ্ছা করলাম যে, আমিও সফরে রওয়ানা হয়ে তাদের সঙ্গ পেয়ে যাই। হায়! যদি আমি তাই করতাম (তাহলে কতই না ভালো হত)! কিন্তু এটা আমার ভাগ্যে হয়ে উঠলো না।

এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চলে যাওয়ার পর যখনই আমি লোকের মাঝে আসতাম, তখন এ জন্যই দুঃখিত ও চিন্তিত হতাম যে, এখন (মদিনায়) আমার সামনে কোনো আদর্শ আছে তো কেবলমাত্র মুনাফেক কিংবা এত দুর্বল ব্যক্তিরা যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমাহযোগ্য বা অপারগ বলে গণ্য করেছেন।

পুরো রাস্তা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে আমাকে স্মরণ করলেন না। তাবুক পৌঁছে যখন তিনি লোকের মাঝে বসেছিলেন, তখন আমাকে স্মরণ করলেন এবং বললেন, ‘কাব ইবনু মালেকের কী হয়েছে?’

বানু সালেমাহ (গোত্রের) একটি লোক বলে উঠল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! তার দুই চাদর এবং দুই পার্শ্ব দর্শন (অর্থাৎ ধন ও তার অহঙ্কার) তাকে আঁটকে দিয়েছে।’ (এ কথা শুনে) মুআয ইবনু জাবাল বললেন, ‘বাজে কথা বললে তুমি। আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা তার ব্যাপারে ভালো ছাড়া অন্য কিছু জানি না।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নীরব থাকলেন।

এসব কথাবার্তার মাঝে তিনি দেখলেন ,সাদা পোশাক পরে (মরুভূমির) মরীচিকা ভেদ করে এক লোক আসছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,‘তুমি যেন আবু খাইসামাহ হও।’ (দেখা গেল) সত্যিকারে তিনি আবু খাইসামাহ আনসারিই ছিলেন। আর তিনি সেই ব্যক্তি ছিলেন, যিনি একবার আড়াই কিলো খেজুর সাদাকাহ করেছিলেন বলে মুনাফেকরা (তা অল্প মনে করে) তাঁকে বিদ্রুপ করেছিল।’

কাব বলেন, ‘এরপর যখন আমি সংবাদ পেলাম যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাবুক থেকে ফেরার সফর শুরু করে দিয়েছেন, তখন আমার মনে কঠিন দুশ্চিন্তা এসে উপস্থিত হলো এবং মিথ্যা অজুহাত পেশ করার চিন্তা করতে লাগলাম এবং মনে মনে বলতে লাগলাম যে, আগামীকাল যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরবেন, সে সময় আমি তাঁর জবাবদিহিতা থেকে বাঁচব কী উপায়ে?

আর এ ব্যাপারে আমি পরিবারের প্রত্যেক বুদ্ধিমান মানুষের সহযোগিতা চাইতে লাগলাম। এরপর যখন বলা হলো যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমন একদম কাছাকাছি, তখন আমার অন্তর থেকে বাতিল (পরিকল্পনা) দূর হয়ে গেল। এমনকি আমি বুঝতে পারলাম যে, মিথ্যা বলে আমি কখনোই বাঁচতে পারব না। সুতরাং আমি সত্য বলার দৃঢ় সংকল্প করে নিলাম।

এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে সকালে (মদিনায়) পদার্পণ করলেন। তাঁর অভ্যাস ছিল, যখন তিনি সফর থেকে (বাড়ি) ফিরতেন, তখন সর্বপ্রথম তিনি মাসজিদে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তারপর (সফরের বিশেষ বিশেষ খবর শোনাবার জন্য) লোকেদের জন্য বসতেন।

সুতরাং এই সফর থেকে ফিরেও যখন আগের মতো কাজ করলেন, তখন মুনাফেকরা এসে তাঁর কাছে ওজর-আপত্তি পেশ করতে লাগল এবং কসম খেতে আরম্ভ করলো। এরা সংখ্যায় আশি জনের কিছু বেশি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের বাহ্যিক ওজর গ্রহণ করে নিলেন, তাদের বায়আত নিলেন, তাদের জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং তাদের গোপনীয় অবস্থা আল্লাহকে সঁপে দিলেন। অবশেষে আমিও তাঁর কাছে হাজির হলাম।

এরপর যখন আমি তাঁকে সালাম দিলাম, তখন তিনি রাগান্বিত ব্যক্তির হাসির মতো মুচকি হাসলেন। এরপর তিনি বললেন, ‘সামনে এসো!’ আমি তাঁর সামনে এসে বসে পড়লাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কেন জেহাদ থেকে পেছনে রয়ে গেলে? তুমি কি বাহন ক্রয় করনি?’

আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর কসম! আমি যদি আপনি ছাড়া দুনিয়ার অন্য কোনো লোকের কাছে বসতাম, তাহলে নিশ্চিতভাবে কোনো মিথ্যা ওজর পেশ করে তার অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে যেতাম। বাকচাতুর্য বা তর্ক-বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা আমার যথেষ্ট রয়েছে।

কিন্তু আল্লাহর কসম! আমি জানি, যদি আপনার সামনে মিথ্যা বলি, যাতে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন; তাহলে অতি সত্বর আল্লাহ তাআলা (ওহির দ্বারা) আপনাকে আমার উপর অসন্তুষ্ট করে দেবেন।

পক্ষান্তরে আমি যদি আপনাকে সত্য কথা বলি, তাহলে আপনি আমার উপর অসন্তুষ্ট হবেন। কিন্তু আমি আল্লাহর কাছে এর সুফলের আশা রাখি। (সেহেতু আমি সত্য কথা বলছি যে,) আল্লাহর কসম! (আপনার সঙ্গে জেহাদে যাওয়ার ব্যাপারে) আমার কোনো অসুবিধা ছিল না। আল্লাহর কসম! আপনার সঙ্গ ছেড়ে পেছনে থাকার সময় আমি যতটা সমর্থ ও সচ্ছল ছিলাম ততটা কখনো ছিলাম না।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এ লোকটি নিশ্চিতভাবে সত্য কথা বলেছে। বেশ, তুমি এখান থেকে চলে যাও, যে পর্যন্ত তোমার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কোন ফায়সালা না করবেন।’

আমার পেছনে পেছনে বানু সালামাহ (গোত্রের) কিছু লোক এল এবং আমাকে বলল যে, ‘আল্লাহর কসম! আমরা অবগত নই যে, তুমি এর আগে কোনো পাপ করেছ কিনা। অন্যান্য পেছনে থেকে যাওয়া লোকেদের ওজর পেশ করার মতো তুমিও কোনো ওজর পেশ করলে না কেন?

তোমার পাপ মোচনের জন্য এটাই যথেষ্ট ছিল যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার জন্য (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।’

কাব বললেন, ‘আল্লাহর কসম! লোকেরা আমাকে আমার সত্য কথা বলার জন্য তিরস্কার করতে থাকলো।

পরিশেষে আমার ইচ্ছা হলো যে, আমি দ্বিতীয়বার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে প্রথম কথা অস্বীকার করি এবং কোনো মিথ্যা ওজর পেশ করে দেই।

আবার আমি তাদেরকে বললাম, ‘আমার এ ঘটনা কি অন্য কারো সঙ্গে ঘটেছে?’ তাঁরা বললেন, ‘হ্যাঁ'; তোমার মতো আরো দুই জন সমস্যায় পড়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে তারাও সেই কথা বলেছে, যা তুমি বলেছ এবং তাদেরকে সেই একই কথা বলা হয়েছে; যা তোমাকে বলা হয়েছে।’

আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, ‘তারা দুই জন কে কে?’

তারা বললো, ‘মুরারাহ ইবনু রাবী আমরি ও হিলাল ইবনু উমাইয়্যাহ ওয়াকিফি।’

এই দুইজন যাঁদের কথা তারা আমার কাছে বর্ণনা করলো; তাঁরা সৎলোক ছিলেন এবং বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন; তাঁদের মধ্যে আমার জন্য আদর্শ ছিল। যখন তারা সে দুইজন ব্যক্তির কথা বললো, তখন আমি আমার আগের অবস্থার (সত্যের) উপর অনড় থেকে গেলাম। (এরপর) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকেদেরকে পেছনে অবস্থানকারীদের মধ্যে আমাদের তিনজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে দিলেন।’

কাব বললেন, ‘লোকেরা আমাদের থেকে পৃথক হয়ে গেলো।’ অথবা বললেন, ‘লোকেরা আমাদের জন্য পরিবর্তন হয়ে গেলো। পরিশেষে পৃথিবী আমার জন্য আমার অন্তরে অপরিচিত মনে হতে লাগল। যেন এটা সেই পৃথিবী নয়, যা আমার পরিচিত ছিল।

এভাবে আমরা ৫০টি রাত কাটালাম। আমার দুই সঙ্গীরা তো নরম হয়ে ঘরের মধ্যে কান্নাকাটি আরম্ভ করে দিলেন। কিন্তু আমি গোত্রের মধ্যে সবচেয়ে যুবক ও বলিষ্ঠ ছিলাম। ফলে আমি ঘর থেকে বের হয়ে মুসলিমদের সঙ্গে নামাজে হাজির হতাম এবং বাজারসমূহে ঘোরাফেরা করতাম। কিন্তু কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতো না।

আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যেতাম এবং তিনি যখন নামাজের পর বসতেন, তখন তাঁকে সালাম দিতাম, আর আমি মনে মনে বলতাম যে, তিনি আমার সালামের উত্তর দিতে ঠোঁট নাড়াচ্ছেন কিনা? তারপর আমি তাঁর কাছে নামাজ পড়তাম এবং আড়চোখে তাঁকে দেখতাম।

(দেখতাম) যখন আমি নামাজে মনোযোগী হচ্ছি, তখন তিনি আমার দিকে তাকাচ্ছেন এবং যখন আমি তাঁর দিকে দৃষ্টি ফিরাচ্ছি, তখন তিনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন!

অবশেষে যখন আমার সঙ্গে মুসলিমদের বিমুখতা দীর্ঘ হয়ে গেল, তখন একদিন আমি আবু কাতাদার বাগানে দেয়াল ডিঙ্গিয়ে (তাতে প্রবেশ করলাম।) সে (আবু কাতাদাহ) আমার চাচাতো ভাই এবং আমার সর্বাধিক প্রিয় লোক ছিল। আমি তাকে সালাম দিলাম।

কিন্তু আল্লাহর ক্বসম! সে আমাকে সালামের জওয়াব দিল না। আমি তাকে বললাম, ‘হে আবু ক্বাতাদাহ! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করছি, তুমি কি জান যে, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে ভালোবাসি?’

সে নিরুত্তর থাকল। আমি দ্বিতীয়বার কসম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম। এবারেও সে চুপ থাকল। আমি তৃতীয়বার কসম দিয়ে প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করলে সে বলল, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি জানেন।’

এ কথা শুনে আমার দুই চোখ থেকে পানি ঝরতে লাগলো এবং যেভাবে গিয়েছিলাম, আমি সেভাবেই দেয়াল ডিঙ্গিয়ে ফিরে এলাম। এরই মধ্যে একদিন মদিনার বাজারে হাঁটছিলাম।

এমন সময় শাম দেশের কৃষকদের মধ্যে একজন কৃষককে বলতে শুনালাম, (যে মদিনায় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করতে এসেছিল) কে আমাকে কাব ইবনু মালেককে দেখিয়ে দেবে?

লোকেরা আমার দিকে ইঙ্গিত করতে লাগলেঅ। ফলে সে ব্যক্তি আমার কাছে এসে আমাকে ‘গাসসান’-এর বাদশার একখানি পত্র দিল। আমি লেখা-পড়া জানতাম, তাই আমি পত্রখানি পড়লাম। পত্রে লিখা ছিল-

‘এরপর আমরা এই সংবাদ পেয়েছি যে, আপনার সঙ্গী (মুহাম্মাদ) আপনার প্রতি দুর্ব্যবহার করেছে। আল্লাহ আপনাকে লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত অবস্থায় থাকার জন্য সৃষ্টি করেননি। আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন; আমরা আপনার প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করব।’

পত্র পড়ে আমি বললাম, ‘এটাও অন্য এক বালা (পরীক্ষা)।’

সুতরাং আমি ওটাকে চুলোয় ফেলে জ্বালিয়ে দিলাম।

এরপর যখন ৫০ দিনের মধ্যে ৪০ দিন গত হয়ে গেল এবং ওহি আসা বন্ধ ছিল। এই অবস্থায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একজন দূত আমার কাছে এসে বললো, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমাকে তোমার স্ত্রী থেকে পৃথক থাকার আদেশ দিচ্ছেন!’

আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আমি কি তাকে তালাক দেব, না কী করব?’

সে বলল, ‘তালাক নয় বরং তার কাছ থেকে আলাদা থাকবে, মোটেই ওর কাছাকাছি হবে না।’

আমার দুই সঙ্গীর কাছেও এই বার্তা পৌঁছে দিলেন।

আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, ‘তুমি তোমার বাবার বাড়ি চলে যাও এবং সেখানে অবস্থান কর; যে পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে কোনো ফায়সালা না করেন।’

(আমার সঙ্গী দুইজনের মধ্যে একজন সঙ্গী) হিলাল ইবনু উমাইয়ার স্ত্রী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিলাল ইবনু উমাইয়াহ খুবই বৃদ্ধ মানুষ, তার কোনো খাদেমও নেই, সেহেতু আমি যদি তার খেদমত করি, তবে আপনি কি এটা অপছন্দ করবেন?’

তিনি বললেন, ‘না, (অর্থাৎ তুমি তার খেদমত করতে পার।) কিন্তু সে যেন (মিলনের উদ্দেশে) তোমার কাছাকাছি না হয়।’ (হিলালের স্ত্রী বললো, ‘আল্লাহর কসম! (দুঃখের কারণে এ ব্যাপারে) তার কোনো সক্রিয়তা নেই। আল্লাহর কসম! যখন থেকে এ ব্যাপার ঘটেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত সে সর্বদা কাঁদছে।’

কাব বললেন, ‘আমাকে আমার পরিবারের কিছু লোক বললেঅ যে, ‘তুমিও যদি নিজ স্ত্রীর ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চাইতে, (তাহলে তো তোমার জন্য ভালো হত।) তিনি হিলাল ইবনু উমাইয়ার স্ত্রীকে তো তার খেদমত করার অনুমতি দিয়ে দিয়েছেন।’

আমি বললাম, ‘এ ব্যাপারে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চাইবো না। জানি না, যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চাইবো, তখন তিনি কী বলবেন। কারণ, আমি তো যুবক মানুষ।’

এভাবে আরও দশদিন কেটে গেলো। যখন থেকে লোকেদের আমাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, তখন থেকে এ পর্যন্ত আমাদের পঞ্চাশ রাত পূর্ণ হয়ে গেলেঅ। আমি পঞ্চাশতম রাতে আমাদের এক ঘরের ছাদের উপর ফজরের নামাজ পড়লাম।

নামাজ পড়ার পর আমি এমন অবস্থায় বসে আছি যার বর্ণনা আল্লাহ তাআলা আমাদের ব্যাপারে দিয়েছেন। আমার জীবন আমার জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও আমার প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল। এমন সময় আমি এক চিৎকারকারীর আওয়াজ শুনতে পেলাম।

সে সালআ পাহাড়ের উপর চড়ে উচ্চঃস্বরে বলছে, ‘হে কাব ইবনু মালিক! তুমি সুসংবাদ নাও!’

আমি তখন (খুশিতে শুকরিয়ার) সাজদায় পড়ে গেলাম এবং বুঝতে পারলাম যে, (আল্লাহর পক্ষ থেকে) মুক্তি এসেছে।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামে ফজরের নামাজ পড়ার পর লোকেদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আল্লাহ তাআলা আমাদের তওবা কবুল করে নিয়েছেন।

সুতরাং লোকেরা আমাদেরকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য আসতে আরম্ভ করল। এক ব্যক্তি আমার দিকে অতি দ্রুত গতিতে ঘোড়া ছুটিয়ে এল। সে ছিল আসলাম (গোত্রের) এক ব্যক্তি। আমার দিকে সে দৌঁড়ে এল এবং পাহাড়ের উপর চড়ে (আওয়াজ দিল)। তার আওয়াজ ঘোড়ার চেয়েও দ্রুতগামী ছিল।

সুতরাং যখন সে আমার কাছে এল, যার সুসংবাদের আওয়াজ আমি শুনেছিলাম, তখন আমি তার সুসংবাদ দানের বিনিময়ে আমার দেহ থেকে দুইখানি বস্ত্র খুলে তাকে পরিয়ে দিলাম।

আল্লাহর কসম! সে সময় আমার কাছে এ দুইটি ছাড়া আর কিছু ছিল না। আর আমি নিজে দুইখানি কাপড় অস্থায়ীভাবে ধার নিয়ে পরলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। পথে লোকেরা দলে দলে আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাকে মোবারকবাদ জানাতে লাগলেঅ এবং বলতে লাগলো, ‘আল্লাহ তাআলা তোমার তওবা কবুল করেছেন; তাই তোমাকে ধন্যবাদ।’

এরপর আমি মাসজিদে প্রবেশ করলাম। (দেখলাম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বসে আছেন এবং তাঁর চারপাশে লোকজন আছে। ত্বালহা ইবনু উবাইদুল্লাহ উঠে ছুটে এসে আমার সঙ্গে মুসাফাহা করলেন এবং আমাকে মোবারকবাদ জানালেন। আল্লাহর কসম! মুহাজিরদের মধ্যে তিনি ছাড়া আর কেউ উঠলেন না।’

সুতরাং কাব ইননে মালিক কখনো তালহা ইবনু উবাইদুল্লাহর এই ব্যবহার ভুলতেন না। কাব বললেন, ‘যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাম জানালাম, তখন তিনি তাঁর খুশীময় উজ্জ্বল চেহারা নিয়ে আমাকে বললেন-

‘তোমার মা তোমাকে যখন প্রসব করেছে, তখন থেকে তোমার জীবনের বিগত সর্বাধিক শুভদিনের সুসংবাদ তুমি গ্রহণ কর!’

আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! এই শুভসংবাদ আপনার পক্ষ থেকে, নাকি আল্লাহর পক্ষ থেকে?’

তিনি বললেন, ‘না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে।’

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুশি হতেন, তখন তাঁর চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যেত, মনে হতো যেন তা একফালি চাঁদ এবং এতে আমরা তাঁর এ (খুশি হওয়ার) কথা বুঝতে পারতাম।

এরপর যখন আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বসলাম, তখন আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমার তওবা কবুল হওয়ার দরুণ আমি আমার সব মাল আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের রাস্তায় সাদাকা করে দিচ্ছি।’

তিনি বললেন, ‘তুমি কিছু মাল নিজের জন্য রাখ, তোমার জন্য তা উত্তম হবে।’

আমি বললাম, ‘যাই হোক! আমি আমার খায়বারের যুদ্ধে (প্রাপ্ত) অংশ রেখে দিচ্ছি।’

আর আমি এ কথাও বললাম যে, ‘হে আল্লাহর রাসুল! নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা আমাকে সত্যবাদিতার কারণে (এই বিপদ থেকে) উদ্ধার করলেন। আর এটাও আমার তওবার দাবি যে, যতদিন আমি বেঁচে থাকবো, সর্বদা সত্য কথাই বলবো।’

সুতরাং আল্লাহর কসম! যখন থেকে আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সত্য কথা বলার প্রতিজ্ঞা করলাম, তখন থেকে আজকের দিন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা কোনো মুসলিমকে সত্য কথা বলার প্রতিদান স্বরূপ এর চেয়ে উৎকৃষ্ট কোনো পুরস্কার দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই।

আল্লাহর কসম! আমি যেদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ কথা বলেছি, সেদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমি মিথ্যা কথা বলার ইচ্ছা করিনি। আর আশা করি যে, বাকী জীবনেও আল্লাহ তাআলা আমাকে এ থেকে নিরাপদ রাখবেন।’

কাব বললেন : ‘আল্লাহ তাআলা (আমাদের ব্যাপারে আয়াত) অবতীর্ণ করেছেন-

لَقَدْ تَابَ اللهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّه بِهِمْ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ - وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتّٰى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ - يٰۤاَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ

‘আল্লাহ ক্ষমা করলেন নবিকে এবং মুহাজির ও আনসারদেরকে যারা সংকট মুহূর্তে নবির অনুগামী হয়েছিল, এমন কি যখন তাদের মধ্যকার এক দলের অন্তর বাঁকা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল, তারপর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করলেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাদের প্রতি বড় স্নেহশীল, পরম করুণাময়। আর ঐ তিন ব্যক্তিকেও ক্ষমা করলেন, যাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছিল; পরিশেষে পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের প্রতি সংকীর্ণ হয়ে উঠেছিল এবং তাদের জীবন তাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়েছিল আর তারা উপলব্ধি করেছিল যে, আল্লাহ ছাড়া আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচার অন্য কোনো আশ্রয়স্থল নেই। পরে তিনি তাদের প্রতি অনুগ্রহপরায়ণ হলেন, যাতে তারা তওবা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ হচ্ছেন তওবা গ্রহণকারী, পরম করুণাময় (সুরা তওবা : ১১৭-১১৯)।' (বুখারি, মুসলিম)

আল্লাহ তাআলা মুমিনদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন জান্নাতের বিনিময়। আর সে কথাও ঘোষণা করেছেন এভাবে-

اِنَّ اللّٰهَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَهُمۡ وَ اَمۡوَالَهُمۡ بِاَنَّ لَهُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ ۟ وَعۡدًا عَلَیۡهِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ مِنَ اللّٰهِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِهٖ ؕ وَ ذٰلِکَ هُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ

'আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহেঃ অতঃপর মারে ও মরে। তওরাত, ইঞ্জিল ও কোরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেন-দেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।' (সুরা তওবা : আয়াত ১১১)

আল্লাহ তাআলা এসব মুমিনদের গুণগুলোও তুলে ধরেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের সুসংবাদ দিতে এভাবে সম্ভোধন করেছেন-

اَلتَّآئِبُوۡنَ الۡعٰبِدُوۡنَ الۡحٰمِدُوۡنَ السَّآئِحُوۡنَ الرّٰکِعُوۡنَ السّٰجِدُوۡنَ الۡاٰمِرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ النَّاهُوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡحٰفِظُوۡنَ لِحُدُوۡدِ اللّٰهِ ؕ وَ بَشِّرِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ

‘তারা তওবাকারী, এবাদতকারী, শোকরগোযার, (দুনিয়ার সাথে) সম্পর্কচ্ছেদকারী, রুকু ও সিজদা আদায়কারী, সৎকাজের আদেশ দানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিবৃতকারী এবং আল্লাহর দেওয়া সীমাসমূহের হেফাযতকারী। বস্তুতঃ সুসংবাদ দাও ঈমানদারদেরকে। (সুরা তওবা : আয়াত ১১২)

আল্লাহ তাআলা ঈমানদার বান্দাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তাকে ভয় করার জন্য এবং দুনিয়াতে সত্যবাদীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য। আল্লাহ বলেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰهَ وَ کُوۡنُوۡا مَعَ الصّٰدِقِیۡنَ

'হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক।' (সুরা তওবা : আয়াত ১১৯)

হাফেজে কোরআনদের কণ্ঠে সাহাবিদের তওবা কবুলের এ চমৎকার ঘটনায় মুখরিত হবে রোজাদারদের হৃদয় ও মন। তওবার প্রতি বাড়বে আকর্ষণ। ন্যয় ও সত্যবাদিতার উপর অটল ও অবিচল থাকলে মহান আল্লাহ বিজয় দান করবেন। তিন সাহাবির ন্যয় ও সত্যতায় মহান আল্লাহ ক্ষমার আয়াত নাজিল করে তাই প্রমাণ করলেন। ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য তওবা এর চেয়ে বড় শিক্ষা আর কী হতে পারে!

সর্বোপরি বিশ্বনবি ছিলেন উম্মতের জন্য দরদি। তার সে গুণের কথাও ওঠে এসেছে এ সুরার শেষাংশে। আর আল্লাহ তাআলাই ঈমানদারদের যে কোনো কাজের জন্য যথেষ্ট। সুরা শেষ আয়াত দুইটি মুমিন মুসলমানদের জন্য অনেক ফজিলতপূর্ণও বটে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

لَقَدۡ جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌ مِّنۡ اَنۡفُسِکُمۡ عَزِیۡزٌ عَلَیۡهِ مَا عَنِتُّمۡ حَرِیۡصٌ عَلَیۡکُمۡ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ -  فَاِنۡ تَوَلَّوۡا فَقُلۡ حَسۡبِیَ اللّٰهُ ۫٭ۖ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ عَلَیۡهِ تَوَکَّلۡتُ وَ هُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ

'তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসুল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়। এরপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট; তিনি ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহাআরশের প্রভু।' (সুরা তওবা : আয়াত ১২৮-১২৯)

সুরা ইউনুস

মক্কায় নাজিল হওয়া ১১ রুকু এবং ১০৯ আয়াত বিশিষ্ট সুরা হলো সুরা ইউনুস। এ সুরার ৯৮নং আয়াতে প্রসঙ্গ ক্রমে হজরত ইউনুছ আলাইহি সালামের কথা আসলেও এ সুরার আলোচ্য বিষয় হজরত ইউনুছ আলাইহিস সালামের ঘটনা নয়।

মক্কায় নাজিল হওয়া এ সুরাটি সুরা তওবার আগে অবতীর্ণ হয়। আর এ কারণেই সুরাটিতে আল্লাহর একত্ববাদ তথা তাওহিদ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়ত প্রাপ্তি তথা রেসালাত এবং পরকালীন জীবনের বিবরণসমূহ চিত্রিত হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্যই ছিল- মানুষকে মহান আল্লাহর পথে আহ্বান করা।

কুরআন আল্লাহর কালাম, কাফেররা সে কথা মানত না। তারা বলত, ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ থেকে তা বানিয়ে বলছেন’। উত্তরে বলা হয়েছে, চল্লিশ বছর যিনি পৃথিবীর কোনো সৃষ্টির ব্যাপারেই কোনো ধরনের মিথ্যা বলেননি, তিনি এ বয়সে এসে মহান স্রষ্টা আল্লাহর ব্যাপারে কেন মিথ্যা বলতে যাবেন? তাছাড়া তিনি তো দুনিয়ায় কারও শিষ্যত্ব গ্রহণ করেননি। কাব্য চর্চাও করেননি। এ সত্ত্বেও তিনি এমন অলৌকিক ও অলংকারপূর্ণ কথা নিজ থেকে কীভাবে বলতে পারেন? আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ اٰیَاتُنَا بَیِّنٰتٍ ۙ قَالَ الَّذِیۡنَ لَا یَرۡجُوۡنَ لِقَآءَنَا ائۡتِ بِقُرۡاٰنٍ غَیۡرِ هٰذَاۤ اَوۡ بَدِّلۡهُ ؕ قُلۡ مَا یَکُوۡنُ لِیۡۤ اَنۡ اُبَدِّلَهٗ مِنۡ تِلۡقَآیِٔ نَفۡسِیۡ ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ ۚ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اِنۡ عَصَیۡتُ رَبِّیۡ عَذَابَ یَوۡمٍ عَظِیۡمٍ

'আর যখন তাদের কাছে আমার প্রকৃষ্ট আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে সমস্ত লোক বলে, যাদের আশা নেই আমার সাক্ষাতের, নিয়ে এসো কোন কোরআন এটি ছাড়া, অথবা একে পরিবর্তিত করে দাও। তাহলে বলে দাও, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তিত করা আমার কাজ নয়। আমি সে নির্দেশেরই আনুগত্য করি, যা আমার কাছে আসে। আমি যদি স্বীয় পরওয়ারদেগারের নাফরমানী করি, তবে কঠিন দিবসের আযাবের ভয় করি।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ১৫)

قُلۡ لَّوۡ شَآءَ اللّٰهُ مَا تَلَوۡتُهٗ عَلَیۡکُمۡ وَ لَاۤ اَدۡرٰىکُمۡ بِهٖ ۫ۖ فَقَدۡ لَبِثۡتُ فِیۡکُمۡ عُمُرًا مِّنۡ قَبۡلِهٖ ؕ اَفَلَا تَعۡقِلُوۡنَ

'বলে দাও, যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে আমি এটি তোমাদের সামনে পড়তাম না, আর নাইবা তিনি তোমাদেরেকে অবহিত করতেন এ সম্পর্কে। কারণ আমি তোমাদের মাঝে ইতিপূর্বেও একটা বয়স অতিবাহিত করেছি। তারপরেও কি তোমরা চিন্তা করবে না? (সুরা ইউনুস : আয়াত ১৬)

فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰهِ کَذِبًا اَوۡ کَذَّبَ بِاٰیٰتِهٖ ؕ اِنَّهٗ لَا یُفۡلِحُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ

'অতঃপর তার চেয়ে বড় জালেম, কে হবে, যে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করেছে কিংবা তাঁর আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলে অভিহিত করছে? কস্মিনকালেও পাপীদের কোন কল্যাণ হয় না।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ১৭)

কুরআন চিরসত্য, মহান আল্লাহর কালাম- এ কথা বলে চ্যালেঞ্জ ছোঁড়া হয়েছে, যদি এটা মানুষের কথা হয়ে থাকে তাহলে তোমরাও এর অনুরূপ কোনো সুরা বানিয়ে দেখাও দেখি। এ কাজের জন্য তোমরা আরব-অনারব, মানব-দানব যাকে খুশি ডেকে নিতে পারো। আল্লাহ বলেন-

وَ مَا کَانَ هٰذَا الۡقُرۡاٰنُ اَنۡ یُّفۡتَرٰی مِنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ وَ لٰکِنۡ تَصۡدِیۡقَ الَّذِیۡ بَیۡنَ یَدَیۡهِ وَ تَفۡصِیۡلَ الۡکِتٰبِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ مِنۡ رَّبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ

' আর কুরআন সে জিনিস নয় যে, আল্লাহ ব্যতিত কেউ তা বানিয়ে নেবে। অবশ্য এটি পূর্ববর্তী কালামের সত্যায়ন করে এবং সে সমস্ত বিষয়ের বিশ্লেষণ দান করে যা তোমার প্রতি দেয়া হয়েছে, যাতে কোনো সন্দেহ নেই-তোমার বিশ্বপালনকর্তার পক্ষ থেকে।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৩৭)

اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰىهُ ؕ قُلۡ فَاۡتُوۡا بِسُوۡرَۃٍ مِّثۡلِهٖ وَ ادۡعُوۡا مَنِ اسۡتَطَعۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِ اللّٰهِ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ

'মানুষ কি বলে যে, এটি বানিয়ে এনেছ? বলে দাও, তোমরা নিয়ে এসো একটিই সূরা, আর ডেকে নাও, যাদেরকে নিতে সক্ষম হও আল্লাহ ব্যতিত, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।' (সুরা ইউনুস : ৩৮)

বিশেষ তিন ঘটনা

এ সুরায় উপদেশ হিসেবে তিনটি ঘটনা উল্লেখ করা হয়ছে। যা কোরআন প্রেমিক মুমিন মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ শিক্ষা।

প্রথম ঘটনা

প্রথম ঘটনা হজরত নুহ আলাইহিস সালামের। তিনি দীর্ঘকাল দ্বীনের দাওয়াত দিয়েছেন জাতিকে। কিন্তু তার জাতি সে দাওয়াত শুনেনি। আল্লাহ বলেন-

وَ اتۡلُ عَلَیۡهِمۡ نَبَاَ نُوۡحٍ ۘ اِذۡ قَالَ لِقَوۡمِهٖ یٰقَوۡمِ اِنۡ کَانَ کَبُرَ عَلَیۡکُمۡ مَّقَامِیۡ وَ تَذۡکِیۡرِیۡ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ فَعَلَی اللّٰهِ تَوَکَّلۡتُ فَاَجۡمِعُوۡۤا اَمۡرَکُمۡ وَ شُرَکَآءَکُمۡ ثُمَّ لَا یَکُنۡ اَمۡرُکُمۡ عَلَیۡکُمۡ غُمَّۃً ثُمَّ اقۡضُوۡۤا اِلَیَّ وَ لَا تُنۡظِرُوۡنِ

' আর তাদেরকে শুনিয়ে দাও নুহের অবস্থা যখন সে স্বীয় সম্প্রদায়কে বলল, হে আমার সম্প্রদায়, যদি তোমাদের মাঝে আমার অবস্থিতি এবং আল্লাহর আয়াতসমূহের মাধ্যমে নসিহত করা ভারী বলে মনে হয়ে থাকে, তবে আমি আল্লাহর উপর ভরসা করছি। এখন তোমরা সবাই মিলে নিজেরদের কর্ম সাব্যস্ত কর এবং এতে তোমাদের শরীকদেরকে সমবেত করে নাও, যাতে তোমাদের মাঝে নিজেদের কাজের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ-সংশয় না থাকে। অতপর আমার সম্পর্কে যা কিছু করার করে ফেল এবং আমাকে অব্যাহতি দিও না।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭১)

فَاِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ فَمَا سَاَلۡتُکُمۡ مِّنۡ اَجۡرٍ ؕ اِنۡ اَجۡرِیَ اِلَّا عَلَی اللّٰهِ ۙوَ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

'তারপরও যদি বিমুখতা অবলম্বন কর, তবে আমি তোমাদের কাছে কোনো রকম বিনিময় কামনা করি না। আমার বিনিময় হল আল্লাহর দায়িত্বে। আর আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেন আমি আনুগত্য অবলম্বন করি।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭২)

দ্বিতীয় ঘটনা

হজরত মুসা ও হারুন আলাইসি সালামকে নিয়ে। প্রভু হওয়ার দাবিদার ফেরাউনের মোকাবিলায় পাঠানো হয়েছিল তাদের। এ দুই পয়গাম্বরের দাবি অস্বীকার করায় আল্লাহ ফেরাউনকে তার দলবলসহ পানিতে ডুবিয়ে ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ বলেন-

ثُمَّ بَعَثۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهِمۡ مُّوۡسٰی وَ هٰرُوۡنَ اِلٰی فِرۡعَوۡنَ وَ مَلَا۠ئِهٖ بِاٰیٰتِنَا فَاسۡتَکۡبَرُوۡا وَ کَانُوۡا قَوۡمًا مُّجۡرِمِیۡنَ

'অতঃপর তাদের পেছনে পাঠিয়েছি আমি মূসা ও হারুনকে, ফেরাউন ও তার সর্দারের প্রতি স্বীয় নির্দেশাবলী সহকারে। অথচ তারা অহংকার করতে আরম্ভ করেছে। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭৫)

فَلَمَّا جَآءَهُمُ الۡحَقُّ مِنۡ عِنۡدِنَا قَالُوۡۤا اِنَّ هٰذَا لَسِحۡرٌ مُّبِیۡنٌ

'বস্তুতঃ তারা ছিল গোনাহগার। তারপর আমার পক্ষ থেকে যখন তাদের কাছে সত্য বিষয় উপস্থিত হল, তখন বলতে লাগলো, এগুলো তো প্রকাশ্য যাদু। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭৬)

قَالَ مُوۡسٰۤی اَتَقُوۡلُوۡنَ لِلۡحَقِّ لَمَّا جَآءَکُمۡ ؕ اَسِحۡرٌ هٰذَا ؕ وَ لَا یُفۡلِحُ السّٰحِرُوۡنَ

মুসা বলল, সত্যের ব্যাপারে একথা বলছ, তা তোমাদের কাছে পৌঁছার পর? একি যাদু? অথচ যারা যাদুকর, তারা সফল হতে পারে না। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭৭)

قَالُوۡۤا اَجِئۡتَنَا لِتَلۡفِتَنَا عَمَّا وَجَدۡنَا عَلَیۡهِ اٰبَآءَنَا وَ تَکُوۡنَ لَکُمَا الۡکِبۡرِیَآءُ فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ مَا نَحۡنُ لَکُمَا بِمُؤۡمِنِیۡنَ

তারা বলল, তুমি কি আমাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে দিতে এসেছ যাতে আমরা পেয়েছি আমাদের বাপ-দাদাদের কে? আর যাতে তোমরা দুইজন এদেশের সর্দারী পেয়ে যেতে পার? আমরা তোমাদেরকে কিছুতেই মানব না। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭৮)

وَ قَالَ فِرۡعَوۡنُ ائۡتُوۡنِیۡ بِکُلِّ سٰحِرٍ عَلِیۡمٍ

আর ফেরাউন বলল, আমার কাছে নিয়ে এস সুদক্ষ যাদুকরদিগকে। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৭৯)

فَلَمَّا جَآءَ السَّحَرَۃُ قَالَ لَهُمۡ مُّوۡسٰۤی اَلۡقُوۡا مَاۤ اَنۡتُمۡ مُّلۡقُوۡنَ

তারপর যখন যাদুকররা এল, মূসা তাদেরকে বলল, নিক্ষেপ কর, তোমরা যা কিছু নিক্ষেপ করে থাক। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৮০)

فَلَمَّاۤ اَلۡقَوۡا قَالَ مُوۡسٰی مَا جِئۡتُمۡ بِهِ ۙ السِّحۡرُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ سَیُبۡطِلُهٗ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُصۡلِحُ عَمَلَ الۡمُفۡسِدِیۡنَ

‘এরপর যখন তারা নিক্ষেপ করল, মূসা বলল, যা কিছু তোমরা এনেছ তা সবই যাদু-এবার আল্লাহ এসব ভন্ডুল করে দিচ্ছেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ দুস্কর্মীদের কর্মকে সুষ্ঠুতা দান করেন না। (সুরা ইউনুস : আয়াত ৮১)

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের আহ্বান ও দোয়া

আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন ও ভরসা করতে মুসা আলাইহিস সালাম তাঁর জাতির প্রতি আহ্বান করেছিলেন। আর আল্লাহর প্রতি ভরসা স্থাপনে দোয়া করেছিলেন এভাবে-

وَ قَالَ مُوۡسٰی یٰقَوۡمِ اِنۡ کُنۡتُمۡ اٰمَنۡتُمۡ بِاللّٰهِ فَعَلَیۡهِ تَوَکَّلُوۡۤا اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّسۡلِمِیۡنَ

'আর মুসা বলেছিলেন, হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান এনে থাক, তবে তোমরা তারই উপর নির্ভর কর, যদি তোমরা মুসলিম হয়ে থাক।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৮৪)

فَقَالُوۡا عَلَی اللّٰهِ تَوَکَّلۡنَا ۚ رَبَّنَا لَا تَجۡعَلۡنَا فِتۡنَۃً لِّلۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ - وَ نَجِّنَا بِرَحۡمَتِکَ مِنَ الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণ : (ফাকালু) 'আলাল্লাহি তাওয়াক্কালনা রাব্বানা লা তাঝআলনা ফিতনাতাল লিলকাওমিজ জালিমিন। ওয়া নাঝঝিনা বিরাহমাতিকা মিনাল কাওমিল কাফিরিন।'

'(এরপর তারা বলল) আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করলাম। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে জালিম সম্প্রদায়ের উৎপীড়নের পাত্র করবেন না। আর আমাদেরকে আপনার অনুগ্রহে কাফির সম্প্রদায় থেকে রক্ষা করুন।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৮৫)

তৃতীয় ঘটনা

ইউনুস আলাইহিস সালামের। তাঁর নামেই এই সুরার নামকরণ করা হয়েছে। নিজ কওমের ঈমান আনার বিষয়ে আশাহত হয়ে এবং আল্লাহর আজাব আপতিত হওয়ার নিশ্চিত অবস্থা দেখে তিনি ‘নিনাওয়া’ নামক স্থান ছেড়ে চলে আসেন। ইউনুস আলাইহিস সালাম চলে যাওয়ার পর তার কওমের লোকেরা ভুল বুঝতে পেরে তওবা, ইস্তেগফার করে। ফলে তাদের থেকে আল্লাহ তায়ালা আজাব সরিয়ে নেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-

فَلَوۡ لَا کَانَتۡ قَرۡیَۃٌ اٰمَنَتۡ فَنَفَعَهَاۤ اِیۡمَانُهَاۤ اِلَّا قَوۡمَ یُوۡنُسَ ؕ لَمَّاۤ اٰمَنُوۡا کَشَفۡنَا عَنۡهُمۡ عَذَابَ الۡخِزۡیِ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ مَتَّعۡنٰهُمۡ اِلٰی حِیۡنٍ

'সুতরাং কোনো জনপদ কেন এমন হল না যা ঈমান এনেছে অতপর তার সে ঈমান গ্রহণ হয়েছে কল্যাণকর? অবশ্য ইউনুসের সম্প্রদায়ের কথা আলাদা। তারা যখন ঈমান আনে তখন আমি তুলে নেই তাদের উপর থেকে অপমানজনক আযাব-পার্থি ব জীবনে এবং তাদের কে কল্যাণ পৌছাই এক নিধারিত সময় পর্যন্ত।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ৯৮)

সুরার শেষ দিকে মোমিনদের সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘এটা আমার নিয়ম, সবশেষে আমি মুমিনদেরই মুক্তি দিই।’ অতপর সুরার সূচনায় যেভাবে কুরআন হাকিমের আলোচনা দিয়ে হয়েছিল, সমাপ্তিও হয়েছে এই সত্য কিতাবের অনুসরণের হুকুম প্রদানের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন-

قُلۡ یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ قَدۡ جَآءَکُمُ الۡحَقُّ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۚ فَمَنِ اهۡتَدٰی فَاِنَّمَا یَهۡتَدِیۡ لِنَفۡسِهٖ ۚ وَ مَنۡ ضَلَّ فَاِنَّمَا یَضِلُّ عَلَیۡهَا ۚ وَ مَاۤ اَنَا عَلَیۡکُمۡ بِوَکِیۡلٍ

'বলে দাও, হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে সেপথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি তোমাদের উপর অধিকারী নই। (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৮)

وَ اتَّبِعۡ مَا یُوۡحٰۤی اِلَیۡکَ وَ اصۡبِرۡ حَتّٰی یَحۡکُمَ اللّٰهُ ۚ وَ هُوَ خَیۡرُ الۡحٰکِمِیۡنَ

'আর তুমি চল সে অনুযায়ী যেমন নির্দেশ আসে তোমার প্রতি এবং সবর কর, যতক্ষণ না ফয়সালা করেন আল্লাহ। বস্তুতঃ তিনি হচ্ছেন সর্বোত্তম ফয়সালাকারী।' (সুরা ইউনুস : আয়াত ১০৯)

সুরা হুদ

সুরা হুদ মক্কায় অবর্তীণ। এতে ১০ রুকু এবং ১২৩ আয়াত রয়েছে। আজকের তারাবিতে প্রথম ৫ আয়াত তেলাওয়াতের মাধ্যমে শেষ হবে রমজানের অষ্টম তারাবি। এ সুরার আলোচ্য বিষয় সুরা ইউনুছের আলোচ্য বিষয়ের সঙ্গে মিল রয়েছে। এ সুরায় আল্লাহ তাআলা কড়াকড়িভাবে মানুষকে সতর্ক করেছেন।

আয়াত ০১-৫

আল্লাহ তাআলঅ সুরা হুদের প্রথম পাঁচ আয়াতে শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদাতের দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা আল্লাহর ইবাদাত-বন্দেগি করবে; শিরক ও কুফরমুক্ত জীবন-যাপন করবে; কোনো অন্যায় করলে তওবার মাধ্যমে আবার তাঁরই দিকে ফিরে আসবে; তাদের দুনিয়ার জীবন হবে উপভোগ্য আবার পরকালের মহা অনুগ্রহ দান করা হবে তাদেরকে। যারা তারপরও আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের জন্য রয়েছে পরকালের কঠিন শাস্তি।

১১ পারার শেষ আয়াতে আল্লাহ তাআলা সবাইকে এ কথাই স্মরণ করিয়ে দেন যে, দুনিয়ার জীবনে মানুষ যেভাবেই জীবন-যাপন করুক না কেন? মৃত্যুর পর সবাইকেই আল্লাহর সম্মুখে তাঁর সান্নিধ্যে যেতে হবে। কারণ তাঁর কাছে যাওয়া ব্যতিত কেউ রেহাই পাবে না। তিনি পুনরায় সবাইকে তাঁর কাছে উপস্থিত করতে সক্ষম। আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلَاۤ اِنَّهُمۡ یَثۡنُوۡنَ صُدُوۡرَهُمۡ لِیَسۡتَخۡفُوۡا مِنۡهُ ؕ اَلَا حِیۡنَ یَسۡتَغۡشُوۡنَ ثِیَابَهُمۡ ۙ یَعۡلَمُ مَا یُسِرُّوۡنَ وَ مَا یُعۡلِنُوۡنَ ۚ اِنَّهٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ

‘জেনে রেখ! তারা নিজ নিজ বুক কুঞ্চিত করে রাখে, যাতে তাঁর (আল্লাহর) দৃষ্টি থেকে লুকিয়ে থাকতে পারে। জেনে রেখ! তারা যখন নিজেদের কাপড় (শরীরে) জড়ায়, তখনও তিনি সব জানেন, যা কিছু তারা গোপন করে এবং যা কিছু প্রকাশ করে। তিনি তো মনের ভেতরের কথাও জানেন।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৫)

আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন বুঝে পড়ার এবং তাঁর ওপর আমল করার পাশাপাশি নিজেদের আকিদা-বিশ্বাসকে শিরকমুক্ত রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জেআইএম