মতামত

রমজানের প্রথম জুমায় তোমার রহমত কামনা করি

আজ আমরা পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমা এবং রহমতের দশকের ষষ্ঠ দিনের রোজা অতিবাহিত করার সৌভাগ্য পাচ্ছি, আলহামদুলিল্লাহ। একদিকে আজ জুমার দিন অপর দিকে রমজান। রমজান মাসের জুমার দিনটি মুসলমানদের জন্য আরো বেশি গুরুত্ব ও ফজিলতপূর্ণ একটি দিন।

Advertisement

ইসলামে পবিত্র জুমার গুরুত্ব অতিব্যাপক। কোরআন ও হাদিস থেকে জুমার নামাযের পবিত্রতা ও গুরুত্ব পরিলক্ষিত হয়। পবিত্র কোরআনে জুমার গুরুত্ব তুলে ধরে আল্লাহতায়ালা বলেন- ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর ইবাদতের জন্য দ্রুত যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বোঝো’ (সুরা জুমা: ৯)। ইসলামে জুমার দিনের নামাজের যে বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে তা এই আয়াত স্পষ্ট করে।

হাদিস পাঠেও জুমার নামাজের গুরুত্ব অনুধাবন করা যায়। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তি, এ চার প্রকার মানুষ ছাড়া সব মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য’ (আবু দাউদ)। তাই আমাদের এমন কোন কারণ নেই যে জুমার নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকব, আমাদেরকে অবশ্যই জুমার দিন বাজামাত নামাজ আদায় করতে হবে। অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, অতঃপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, চুপ করে মনোযোগসহকারে তার খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে’ (আবু দাউদ)।

জুমার ফজিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)। হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)। জুমার ফযিলত সম্পর্কে মহানবি (সা.) আরো বলেছেন, ‘মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন’ (ইবনে মাজাহ)। হাদিসে আরো উল্লেখ আছে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মহান আল্লাহর কাছে জুমার দিনটি ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনের মতো শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনটি আল্লাহর কাছে অতি মর্যাদাসম্পন্ন’ (ইবনে মাজাহ)।

Advertisement

একটু ভেবে দেখুন, মহান আল্লাহপাক পবিত্র জুমার দিনকে আমাদের জন্য সাপ্তাহিক ঈদের দিন হিসেবে গোষণা করেছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এই দিনের যথাযথ মূল্যায়ণ করছি? আমরা কি আমাদের জাগতিক কাজকর্ম বন্ধ করে আজানের সাথে সাথে মসজিদে গিয়ে খুতবা, নামাজ আদায় এবং দিনের অন্যান্য সময় আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করি? তাই এদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। বিশ্বনবী (সা.) আরো বলেছেন, ‘হে মুসলমানগণ, তোমরা এ দিন মিসওয়াক করো, গোসল করো ও সুগন্ধি লাগাও’ (মিশকাত)। পবিত্র জুমার দিনের ফযিলত সম্পর্কে হাদিসে আরো উল্লেখ রয়েছে যে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কোনো মুসলমান জুমার দিনে কিংবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে। নিশ্চয়ই আল্লাহতায়ালা তাকে কবরের ফিতনা হতে নিরাপদ রাখেন’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, বাইহাকি, মিশকাত)

জুমার গুরুত্ব এতই ব্যাপক যে, কোরআন শরিফের একটি সুরার নামই রাখা হয়েছে সুরা ‘জুমা’। এ থেকে বুঝা যায়, আল্লাহতায়ালা জুমাকে কত গুরুত্বই না দিয়েছেন। তাই যখন জুমার নামাজের জন্য আহ্বান করা হয় তখন আমাদের উচিত হবে, সব কাজকর্ম ও ব্যবসা বণিজ্য গুটিয়ে মসজিদের দিকে রওয়ানা হওয়া। মসজিদে গিয়ে খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা, কেননা খুতবার মাঝে দুই রাকাত নামাজ নিহিত। তাই জুমার খুতবা শোনাও জরুরী। এছাড়া জুমার দিন আল্লাহতায়ালা মুমিনের পুণ্যের প্রতিদান কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেন। এজন্য জুমার দিন জুমার নামাজ ছাড়াও যথাসম্ভব সকল প্রকার পুণ্য কাজ আমাদেরকে করতে হবে।

মুসলিম উম্মাহর জন্য রমজান মাস অনেক বরকত আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উত্তম মাস। যেভাে মহানবি (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কসম! মুসলমানদের জন্য রমজানের চেয়ে উত্তম কোনো মাস আসেনি এবং মুনাফিকদের জন্য রমজান মাসের চেয়ে অধিক ক্ষতির মাসও আর আসেনি। কেননা মুমিনরা এ মাসে (সারা বছরের জন্য) ইবাদতের শক্তি ও পাথেয় সংগ্রহ করে। আর মুনাফিকরা তাতে মানুষের উদাসীনতা ও দোষত্রুটি অন্বেষণ করে। এ মাস মুমিনের জন্য গনিমত আর মুনাফিকের জন্য ক্ষতির কারণ।’ (মুসনাদে আহমদ)

রাসুল (সা.) আরো বলেন, ‘অবশ্যই আল্লাহতায়ালা রমজান মাসের প্রত্যেক দিন ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ)

Advertisement

তাই আসুন, মাহে রমজানের প্রত্যেকটি মুহূর্ত বিশেষ ইবাদত-বন্দেগীতে রত থেকে অতিবাহিত করার চেষ্টা করি আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।

এইচআর/জিকেএস