যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। কিন্তু দেশটিই যেন রাবণের। শ্রীলঙ্কায় যে লঙ্কাকাণ্ড চলছে তা নজিরবিহীন। দশকের পর দশক গৃহযুদ্ধের ভয়াবহতাও দেখেছে লঙ্কাবাসী। তবে ভাত-কাপড়ের জন্য তাদের এতটা অনিশ্চয়তায় পড়তে হয়নি কখনও। কী ধনী, কী গরিব, সবার অবস্থাই ত্রাহি ত্রাহি।
Advertisement
২০১৯ সালে যে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল রাজাপাকশের সরকার, সেই জনতাই এখন বিদায় চায় এই সরকারের। সরকার বিরোধী বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ সবাই। কুমার সাঙ্গাকারা, মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো ক্রিকেট তারকারাও আছেন এই দলে। অবস্থা বেগতিক দেখে পুরো মন্ত্রিপরিষদ পদত্যাগ করেছেন। পদ ছেড়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও। ক্ষমতাসীন দলের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন ৪০ সংসদ সদস্য।
কখনো উগ্রবাদী, কখনো সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে চেয়েছে ক্ষমতাসীনরা। তবে, দলমত নির্বিশেষে জনতার অভূতপূর্ব আন্দোলনে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকশের পদত্যাগের প্লাকার্ড হাতে প্রতিদিনই রাস্তায় নামছে মানুষ। কেউ সপরিবারে, কেউ আবার বন্ধুদের সাথে রাজপথে নেমেছেন। একে তারা বলছেন, নিজেদের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম।
Advertisement
লোকরঞ্জনবাদ একটি দেশকে কত দ্রুত ধ্বংসের পথ দেখাতে পারে, তার আধুনিক সংস্করণ শ্রীলঙ্কা। বাছ-বিচার ছাড়াই বিভিন্ন খাতে কর ছাড়, আগেপিছে না ভেবে ঝা চকচক সড়ক, সমুদ্র বন্দর তৈরির সিদ্ধান্ত পথে বসিয়েছে দেশটিকে। জন পারকিন্সের কনফেশন অভ অ্যান ইকনেমিক্যাল হিটম্যান বইতে মার্কিন ওই ভদ্রলোক জানান, বিভিন্ন দেশকে অকারণ বড় বড় প্রকল্প নিতে প্রলুব্ধ করতেন তিনি। শ্রীলঙ্কায় এই হিটম্যান কারা ছিলেন? কোনো বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নাকি রাজাপাকশের পরিবার, তা অবশ্য এখনই জানা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ এক দফায় শ্রীলঙ্কাকে ঋণ দিয়েছে। সেই ঋণ কবে নাগাদ পরিশোধ হবে তার কোনো নিশ্চিয়তা নেই। এখন আবার ঋণ চাইছে দেশটি। যা দিতে আগ্রহী নয় ঢাকা। এমনটি হওয়া উচিতও নয়। কারণ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে ডুবতে থাকা কোনো রাষ্ট্রকে টেনে তোলার মতো অবস্থায় নেই বাংলাদেশ। ভারত পাশে দাঁড়ালেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অনেক কম। চীন ও আইএমএফের কাছ থেকেও কিছু সাহায্য পেতে পারে। কিন্তু এখন যেভাবে চলছে সেটি দিয়েও পরিস্থিতি অনুকূলে নেয়া কঠিন।
শ্রীলঙ্কাকে বাঁচাতে এখন বিভিন্ন জোট ও দেশের যৌথ সহায়তার বড় তহবিল দরকার। এটি করতে হলে, দেশটির সরকারের ওপর আস্থা থাকাটাও জরুরি। কিন্তু যে সরকারের ওপর তার নিজ দেশের মানুষেরই এখন আস্থা নেই, তাদের ওপর অন্যরা আস্থা রাখে কীভাবে?
লেখক: বার্তা সম্পাদক, চ্যানেল ২৪।
Advertisement
এইচআর/এএসএম