দেশজুড়ে

নড়াইলে বিদ্যালয়ের জমি জালিয়াতির অভিযোগ

নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের এক একর ৫৮ শতক জমি জালিয়াতি করে ব্যক্তির নামে রেকর্ড দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের তিন একর চার শতক জমিও মাঠ জরিপে এক ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ায় বেদখলের আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।স্কুল এবং কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১৮৫৭ সালে নড়াইলের জমিদাররা মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে এফএ ক্লাস খোলার মাধ্যমে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত ১শ` বছর স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম একসঙ্গে পরিচালিত হয়। স্কুল ও কলেজটি সম্প্রসারণের স্বার্থে ১৯৫৮ সাল থেকে আলাদা দুটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৭৯ সালে নড়াইলের তৎকালীন মহাকুমা প্রশাসক এবং প্রতিষ্ঠান দু’টির সভাপতি তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে জমিদারদের দানকৃত সম্পত্তি স্কুল ও কলেজের নামে পৃথকভাবে বণ্টন করে সীমানা নির্ধারণ, নকশা (ম্যাপিং) ও পর্চা প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সিদ্ধান্তটি ১৯৮৬ সালের ২৯ জুলাই বাস্তবায়ন হয়। জমিদারদের দানকৃত সম্পত্তি হাল রেকর্ডে (আরএস) নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুল ৬৯ নম্বর কুড়িগ্রাম মৌজায় ২৩ নম্বর খতিয়ানে পাঁচটি দাগে চার একর ৮৬ শতক জমি রেকর্ড করে পর্চা সংরক্ষণ করে। এ সম্পত্তিতে বিদ্যালয়ের মূল ভবন, ক্যাম্পাস, বনায়ন, পুকুর ও সুলতান মঞ্চের দক্ষিণ অংশ অবস্থিত। কিন্ত বর্তমানে নড়াইল সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিস থেকে ২৩ নম্বর খতিয়ানের পর্চায় পাঁচটি দাগের পরিবর্তে চারটি দাগে ৩ একর ৮৬ শতক শতক জমির পর্চা সরবরাহ করে। উক্ত সম্পত্তি থেকে এক একর ৫৮ শতক জমি জালিয়াতি করে সেটেলমেন্ট অফিসের মূল রেকর্ড বই থেকে মুছে ডিপি ১৬১ নম্বর খতিয়ানে কামাল উদ্দাহার নামে রেকর্ড দেখানো হয়েছে। এছাড়া নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের তিন একর ৪ শতক জমি মাঠ জরিপে কামাল উদ্দাহারের নামে অত্র খতিয়ানে রেকর্ড করা হয়েছে। কলেজের এসব সম্পত্তিতে ক্যাম্পাস, শিক্ষকদের আবাসিক ও পুকুর অবস্থিত। কামাল নড়াইল পৌর এলাকার কুড়িগ্রামের জালাল উদ্দাহারের ছেলে।পরে কামাল উদ্দাহারের কাছ থেকে ১৬১ খতিয়ানের মোট চার একর ৬২ শতক জমি ভওয়াখালী গ্রামের নুর হোসেন বিশ্বাসের ছেলে ইলিয়াস হেসেন বিশ্বাসের নামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।এ ব্যাপারে কামাল উদ্দাহারের বাড়িতে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, তার ছেলে কানিজ উদ্দাহার সাংবাদিকদের বলেন, বাবা বাড়িতে আছেন। এদিকে, তার মেয়ে জানান, বাবা বাড়িতে নেই। তার বাবার মোবাইল ফোনটিও বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন তিনি।এ ব্যাপারে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিমাই চন্দ্র পাল জাগো নিউজকে বলেন, এক একর ৫৮ শতক জমির রেকর্ড সংশোধনের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে আপিল করেছি।নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট উচ্চ বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ বরুন কুমার বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, কলেজের তিন একর চার শতক জমি অন্য ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়া দুঃখজনক। কলেজের পক্ষ থেকে রেকর্ড সংশোধনের জন্য আপিল করেছি। নড়াইল সদর সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসের আপিল কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, সংরক্ষিত মূল রেকর্ড বইয়ে ২৩ নম্বর খতিয়ানের একটি দাগ মুছে ফেলায় রেকর্ড বই ঘষামাজা দেখা যাচ্ছে। একটি চক্র মূল রেকর্ড বইয়ের খতিয়ানের দাগ মুছে ফেলার পাশাপাশি মৌজার খসড়া থেকে হাল রেকর্ডের দখলের পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। তবে, কে বা কারা মূল রেকর্ড বইয়ের খতিয়ান থেকে দাগ মুছে ফেলার পাশাপাশি মৌজার খসড়া থেকে হাল রেকর্ডের দখলের পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলেছে তা বলা মুশকিল। তবে এটা খুবই অন্যায় কাজ হয়েছে। এ ব্যাপারে আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানাবো।হাফিজুল নিলু/এমজেড/এমএস

Advertisement