পুলিশের বর্বর নির্যাতনের শিকার হয়ে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী। চারদিকে নিন্দার ঝড়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যমেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এ নারকীয় ঘটনায়। এর জের না কাটতেই আবারো একই রূপে দেখা গেল পুলিশকে। এবার পুলিশি বর্বরতার শিকার হলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)`র পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশ (৪০)। একটি বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। প্রশ্ন হচ্ছে পুলিশের এই বর্বর নির্যাতন কি চলতেই থাকবে? দেশটা কি পুলিশি রাষ্ট্র হয়ে গেল? যখন খুশি তখন যাকে তাকে ধরে ধরে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠাবে আর নির্যাতক পুলিশ থাকবে বহাল তবিয়তে! এভাবে এসআই মাসুদদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা কি একবার ভেবে দেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?শুক্রবার ভোর সোয়া ৫টার দিকে ধোলাইপাড় এলাকা দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে যাত্রাবাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন বিকাশ। এ সময় ওই এলাকায় টহলরত পুলিশের সিভিল টিম দাঁড়াতে বললে তাদেরকে ছিনতাইকারী মনে করে মোটরসাইকেল নিয়ে ধোলাইপাড় এলাকার দিকে চলে যাচ্ছিলেন তিনি। পরে পুলিশ তাকে ধরে ফেলে । পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ তাকে লাঠি ও পিস্তলের বাট দিয়ে বেধড়ক পেটায়। বিকাশের মুখমণ্ডল, ডান কান ও কপালে আঘাত করা হয়েছে। নাক দিয়ে প্রচুর রক্তপাত হয়েছে। দুই পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে নীল-ফোলা জখম হয়েছে। বন্দুকের বাঁট ও বুটের আঘাতের ফলে এসব জখম হয়েছে বলে চিকিৎসরা বলছেন। পুলিশ বলছে, তারা সাদা পোশাকে ছিল। তো সাদা পোশাকের লোকজন যদি কাউকে থামতে বলে সে থামবে কেন? সাদা পোশাকধারীরা যে পুলিশ এটা মানুষজন বুঝবে কি করে। মোটরসাইকেল আরোহী বিকাশ ছিনতাইকারী মনে করে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিল। আর সাদা পোশাকধারী পুলিশ বলছে তারা বিকাশকে ছিনতাইকারী মনে করেছে। পরিচয় পাওয়ার পরও তাহলে তাকে কেন পেটানো হল। আর বিকাশের জায়গায় যদি সত্যি সত্যি ছিনতাইকারী থাকতো তাহলে তাকেই বা পুলিশ পেটাবে কেন। পুলিশতো কাউকে পেটাতে পারে না। কেউ দোষী হলে আইনের হাতে সোপর্দ করাই পুলিশের কাজ। কাউকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো পুলিশের কাজ নয়। আসলে মাত্র কয়দিন আগে ব্যাংক কর্মকর্তা রাব্বীকে নির্যাতনের ঘটনায় যদি মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের এসআই মাসুদসহ দোষী অন্য পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতো তাহলে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাশকে পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর সাহস দেখাতো না পুলিশ। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে যেসব পুলিশ আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় তিরস্কারের বদলে তাদের পুরস্কার জোটে। দমন-পীড়নের কাজে তাকে উপযুক্ত মনে করা হয়। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চরিত্র তো এটি হতে পারে না। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পালিত পুলিশের দায়িত্ব হচ্ছে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। যাত্রাবাড়ির ঘটনাকে পুলিশ ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলছে। এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখবে কিনা সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। আসলে এক্ষেত্রে দোষী পুলিশের যথাযথ শাস্তিই হচ্ছে একমাত্র উপশম। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করা হলে তা আখেরে বুমেরাং হতে পারে। পুলিশকে যারা চালান তাদের এই সত্য উপলব্ধি করার সময় এসেছে। এইচআর/এমএস
Advertisement