জলাবদ্ধতা সাতক্ষীরা অঞ্চলের মানুষের অন্যতম সমস্যা। প্রতি বছরই লাখ লাখ মানুষকে জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। মানুষের এসব দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সরকার সাতক্ষীরা সদরের উপর দিয়ে প্রবাহিত বেতনা নদীতে খনন কাজ চালিয়েছে। নদীর দুই তীরে সৃষ্টি করা হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রন বেড়ি বাঁধ। বর্তমানে সেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটা মালিকদের কাছে। আর সেই মাটি দিয়েই চলছে বিনেরপোতা এলাকার ১০টি ইট ভাটা। ফলে আসছে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। প্রশ্ন শত কোটি টাকার নদী খনন প্রকল্পের সুবিধা নিয়েও।জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা যায়, এই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত স্থানীয় এক আ.লীগ নেতা। তিনি ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে এই মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন তাদের কাছে। এই আ.লীগ নেতা মাটি কাটার জন্য নিয়োগ করেছেন অসংখ্য শ্রমিক। মাটি কাটা শ্রমিকরা জানান, আমাদের অর্ডার দেছে সরদার। মাটি কাটা সরদার। আর সরদার নেছে জিয়ার কাছ থেকে। এই মাটি কাঁটা অবৈধ আমরা জানি তারপরও আমরা আয়ছি পেটের দায়ে ক্ষুদার তাড়নায় কাজ করতি। আমাদের যেখানে বলতিছে সেখানে কাটতিছি।এদিকে, মাটি কাঁটা শ্রমিক সরদার জানান, ২৫ হাজার টাকায় জিয়া আমাদের কাছে বিক্রি করেছে। তাই আমরা মাটি কেটে মকছেদ সাহেবের ইট ভাটায় নিয়ে যাচ্ছি। অন্যদিকে, এই বাঁধের মাটি বিক্রির প্রধান হোতা লাবসা ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজের কাছে মাটি বিক্রির কথা অস্বীকার করেন। এক সময়কার খর স্রোতা বেদনা নদীতে এখন আর নৌকারও দেখা মেলে না। এ নদীর তীরে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসতি। নদী নাব্যতা না থাকায় পানি নিষ্কাসিত না হলে প্রতি বছরই প্লাবিত হয় এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ। তীরবর্তী এলাকাগুলো দখল উৎসবের সঙ্গে চলছে মাটি বিক্রি। কেউবা পুকুর কেটে তীরবর্তী এলাকা দখল কেউবা করছে মৎস্য ঘের। স্থানীয় বাসিন্দা মহসিন হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, এই বাঁধের মাটি কেটে ফেলায় বেতনার উপচে পড়া পানিতে আবারও প্লাবিত হবে বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের পেছনে যে এত টাকা খরচ করে নদী খনন করেছে তার কোনো সুবিধাই আমরা পাবো না।স্থানীয় নাজমুল হুদা পলাশ জাগো নিউজকে জানান, বর্তমান সময় পর্যন্ত ইট ভাটা মালিকদের কাছে ৩০-৪০ লক্ষ টাকার মাটি বেচা-বিক্রি করে ফেলেছে। এখানকার গণ্যমান্য মানুষ এলাকাবাসীকে বাঁচানোর জন্য নিষেধ করলেও তারা শুনছেন না। বিনেরপোতা এলাকার কেবি ব্রিকসের ম্যানেজার হায়দার আলী বাঁধ কাটার কথা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, নদীতেতো স্রোত নেই। যেখানে বাঁধ দশ হাত থাকার কথা ছিল সেখান থেকে হয়ত দুই হাত বাঁধ কাটতে পারে। অন্যদিকে, অপর এক ইটভাটা মালিক সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জাগো নিউজকে জানান, নদী কাঁটার পরে যে মাটিগুলা উঠেছে সে মাটি নদীর দুইপাড়ে বড় বাঁধ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিছু কিছু জায়গায় কোনো কোনো অসাধু ব্যক্তি এই মাটি কেঁটে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা তাদেরকে এ্যাটড্রেস করছি। যদি এমন কোনো অনিয়ম করে থাকেন যাতে নদী ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো। এদিকে, নদী তীরবর্তী লক্ষ লক্ষ মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।এমজেড/এমএস
Advertisement