ইতিহাসের অনেক ঘটনার সাক্ষী হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম প্রবীণ সদস্য ড. আরএ গণি। দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত কারণে বৃহস্পতিবার রাতে ৯১ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।অনুসন্ধানে দেখে গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর থানায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিএনপির এই বর্ষীয়ান নেতা। জন্মগ্রহণের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ালেখা শেষ করেন নিজ এলাকা থেকেই।পরবর্তীতে কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ (বর্তমান বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয-বুয়েট) থেকে পড়ালেখা করেন। তারপর যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ডক্টরেট অব সায়ন্স ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরেই রাজনীতিতে আসেন তিনি। জিয়াউর রহমানের সরকারে তাকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়।পরবর্তীতে এরশাদ বিরোধী আন্দালেনেও তৎপর ছিলেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা। জিয়াউর রহমান হাত ধরে রাজনীতি শুরু করলেও পরবর্তীতে খালেদা জিয়ার পাশে থেকে দলের জন্য কাজ করেছেন তিনি।অবশ্য এরপর ১৯৯১ সাল থেকে তিন বার রাষ্ট্রপরিচালনা সুযােগ বিএনপি পেলেও তখন নির্বাচনে অংশ নেননি ড. আরএ গণি। নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দলে থেকে কাজ করেছেন তিনি।পরবর্তীতে স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অন্যতম রূপকার দলের তৎকালীন মহাসচিব মান্নান ভূঁইয়া মাইনাস টু ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করলে গণি এর প্রতিবাদ জানান।তখন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দল থেকে বাদ দেয়ার চেষ্টা করলে আরএ গণি ঘোর বিরোধিতা করেন। এমনকি মান্নান ভূঁইয়ার বাসায় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের কথিত বৈঠক শেষে দলের চেয়ারপারসন হিসেবে খালেদা জিয়াকে সরে যাওয়ার পক্ষে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মত দিয়েছেন মান্নান ভূঁইয়ার এমন বক্তব্য প্রচারেরও বিরোধিতা করেন আরএ গণি। তখন আরএ গণি প্রকাশ্যে বলেছেন, খালেদা জিয়াই বিএনপির প্রধান। খন্দকার দেলোয়ার হোসেন মহাসচিব হিসেবে বিএনপির দায়িত্ব পালন করবেন। অবশ্য এ নিয়ে পরবর্তীতে কোর্টে মামলা গড়ালে খালেদা জিয়াই বিএনপির নেত্রী বলে রায় দেয়া হয়।এদিকে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সদ্য প্রয়াত ড. আরএ গণি তিন মেয়ে ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তাদের মধ্যে দুই মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে সিটিজেন হয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন। আর এক ছেলে ও এক মেয়ে কানাডার সিটিজেন হয়ে সেই দেশেই বসবাস করছেন।তবে দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার সময় তার স্ত্রীর এক বোন ড. আরএ গণির দেখাশোনা করেন। অবশ্য তার সন্তানেরাও মাঝে মাঝে দেশে এসে বাবার খোঁজ খবর নিয়েছেন।সূত্রে আরো জানিয়েছে, জিয়ার হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার পর জিয়া পরিবারের সঙ্গে গণির সর্ম্পকটি পারিবারিক বন্ধনে মিলিত হয়। খালেদা জিয়ার বড় বোন খুরশিদ জাহান হকের সঙ্গে ড. আরএ গণির স্ত্রীর বান্ধবী-বোনের মতো সম্পর্ক ছিল।আরএ গণির ব্যক্তিগত সহকারী লেলিন জাগো নিউজকে বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে স্যার (ড. আরএ গনি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বেশিরভাগ সময় স্যারের বাসাতেই আশ্রয় নিতেন।তিনি বলেন, স্যারের ভাষায় বাংলাদেশের ৭ কোটি মানুষ প্রত্যেকেই প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে যুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। মু্ক্তিযুদ্ধের পর সার্টিফিকেট নিতে হবে এরকম চিন্তা তিনি করেননি। স্যার মনে করতেন স্বাধীনতা যুদ্ধে সবার অবদান আছে, তাই সার্টিফিকেট জরুরি ছিল না। ড. আরএ গণি যে সততা নিয়ে রাজনীতি করেছেন তা অনস্বীকার্যও বটে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জাগো নিউজকে বলেন, ড. আরএ গণি দলের প্রবীণ নেতা ছিলেন। তার মতো লোকের দলে অনেক বেশি প্রয়োজন ছিল। রাজনীতিতে তার অনেক অবদান রয়েছে বলেও জানান তিনি।জাগো নিউজকে দলের আরেক স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, রাজনীতিতে সৎ কোন মানুষ থাকলে আরএ গণি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন। অনেক ভাল মানুষ ছিলেন।এমএম/জেডএইচ
Advertisement