মাহে রমজান ও তাকওয়ার মধ্যে নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। কেননা, রমজান মাসে প্রত্যেক রোজাদার ব্যক্তিকে অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলি অর্জন করতে হয়। বছরের এক মাসব্যাপী সিয়াম পালনের উদ্দেশ্য নিছক উপবাস থাকা নয়; এর মূল উদ্দেশ্য হলো, তাকওয়া অর্জন করা। তাই মুসলমানদের জন্য তাকওয়া অর্জনের লক্ষ্যে মাহে রমজানের পূর্ণাঙ্গ একটি মাস রোজা পালন করা ফরজ করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মোমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজা ফরজ করা হলো, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল, তাদের প্রতি। যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা : ১৮৩)।
Advertisement
তাকওয়ার আভিধানিক অর্থ‘তাকওয়া’ আরবি শব্দ। এর মূল অর্থ হলো, শঙ্কিত বিষয় থেকে কোনো জিনিসকে হেফাজত করা বা কষ্টদায়ক ও ক্ষতিকর বিষয় থেকে কোনো জিনিসকে সংরক্ষণ করা। পবিত্র কোরআনে কারিমে ‘তাকওয়া’ শব্দটি পাঁচটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে-
এক. ভয়-ভীতি : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো।’ (সুরা নিসা : ১)।
দুই. ইবাদত ও আনুগত্য করা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও আনুগত্য করবে?’ (সুরা নাহল : ৫২)।
Advertisement
তিন. গোনাহ বর্জন করা ও তা থেকে বেঁচে থাকা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা গৃহসমূহে তার দরোজা দিয়ে প্রবেশ করো এবং আল্লাহকে ভয় করো। (অর্থাৎ আল্লাহর আদেশের অমান্য কোরো না)।’ (সুরা বাকারা : ১৮৯)।
চার. একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা ও সাক্ষ্য প্রদান করা : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। (অর্থাৎ তোমরা আল্লাহকে এক অদ্বিতীয় সাব্যস্ত করো।’ (সুরা আহজাব : ৭০)।
পাঁচ. ইখলাস ও ইয়াকিন : আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। (অর্থাৎ নিঃসন্দেহে তা অন্তরের বিশ্বাস ও ইখলাসের বহিঃপ্রকাশ।’ (সুরা হজ : ৩২)।
তাকওয়ার পারিভাষিক অর্থওলামায়ে কেরাম তাকওয়ার অনেক সংজ্ঞা বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো-
Advertisement
এক. শায়খ আবদুল আজিজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বায (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় আল্লাহর ভয়ে তাঁর এবং রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় ও জান্নাতের আশায় সব ধরনের অন্যায়, অত্যাচার ও পাপাচার বর্জন করে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশানুযায়ী আল্লাহর ইবাদত করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া : ৯)।
দুই. শায়খ আবদুল্লাহ আত তানুসি (রহ.) বলেন, ‘নির্দেশিত বিষয়গুলোকে মানা ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলোকে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ৫/২৫৭)।
তিন. ওমর ইবনে আবদুল আজিজ (রহ.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা যা কিছু হারাম করেছেন, সেগুলোকে বর্জন করা এবং যা কিছু ফরজ করেছেন, সেগুলোকে পালন করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া :১০)।
চার. ইমাম রাগিব আল ইস্পাহানি (রহ.) বলেন, ‘শরিয়তের পরিভাষায় যাবতীয় গোনাহের কাজ থেকে নফসকে হেফাজত করার নামই তাকওয়া।’ (আল মুফরাদাত : ৫৩০)।
পাঁচ. তাবেয়ি তলাক ইবনে হাবিব (রহ.) বলেন, ‘সওয়াবের আশায় দলিলের ভিত্তিতে আল্লাহর ইবাদত করা ও আজাবের ভয়ে দলিলের ভিত্তিতে পাপাচারকে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম : ১৪৯)।
ছয়. জনৈক বিজ্ঞ আলেম বলেন, ‘আল্লাহকে ভয় করা, কোরআন অনুযায়ী আমল করা, অল্পতে তুষ্ট থাকা ও পরকালের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার নামই তাকওয়া।’ (আত তাকওয়া : ১১)।
সাত. আল্লামা ফিরোজ আবাদি (রহ.) বলেন, ‘দ্বীনি বিষয়ের জন্য ক্ষতিকর, এমন সব বিষয়কে বর্জন করার নামই তাকওয়া।’ (বাসাইরু যায়িত্তামিজ : ২/২৯৯)।
আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে পূর্ণ তাকওয়া হাসিল করে মাহে রমজানকে মহিমান্বিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
মুনশি/এসইউ/জেআইএম