দেশজুড়ে

পলিথিনের তাবু এখন ওদের বাড়ি-ঘর

প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নীচে পলিথিন তাবু বানিয়ে করুণ জীবন যাপন করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের আওলাখুড়ী হঠাৎপাড়া গ্রামের ৮টি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশুরা।গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টায় অগ্নিকাণ্ড এসব পরিবারের ঘরসহ সবকিছু পুড়ে যাওয়ায় তাদের বাড়ি হয়েছে এখন এখন এই পলিথিনের তাবু। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মো. সহির আলী জানান, সহায় সম্বল যা কিছু ছিল সব আগুনে পুড়ে গেছে। শুধু মাত্র পরনের কাপড় ছাড়া কিছু রক্ষা করা যায়নি। ঘরের চাল, ডাল ছাগল এবং হাঁস-মুরগি সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ৪ দিন ধরে খোলা আকাশে পলিথিন তাবু বানিয়ে রাত্রী যাপন করলেও সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোনো সাহায্য পাইনি। ঘটনার পর এখানে আসেনি কোনো সরকারি কর্মকর্তা। তবে প্রতিবেশি ও এলাকাবাসীর সহযোগিতার কথা আজীবন মনে থাকবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে সদস্য আমিনা ও কমির বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মোছা. রুবিনা আকতার জানায়, আগুনে সব বই পুড়ে গেছে। এখন আগামী দিনে আর পড়াশুনা করতে পারবো কিনা সন্দেহ। এমনিতেই মেয়ে হিসেবে পড়াশুনা করা কঠিন। তারপর আবার সবকিছু নতুন করে কিনতে হবে। এখন ঘরবাড়ি তৈরি করবে না বই-খাতা কিনে দিবে। তাই আর পড়াশুনা করা হবে না।প্রতিবেশি রেজাউল করিম জানান, অগ্নিকাণ্ডের পর এলাকাবাসী তাদের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা করে। স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং সমাজের বিত্তবানরা তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য চাল এবং শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করে। তাদের প্রাপ্ত চাল এবং প্রতিবেশিদের কাছে এক কেজি করে চাল এবং সাধ্যমত সবজি দিয়ে প্রতিদিন পরিবারগুলোর খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পলিথিন কিনে তাবু বানিয়ে তাদের সাময়িকভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।শুক্রবার ঢাকাস্থ বীরগঞ্জ সমিতি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে শীতবস্ত্র প্রদান করেন। এ ব্যাপারে বীরগঞ্জ সমিতির সভাপতি মো. আনোয়ার পারভেজ জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পুনর্বাসন করার চিন্তা ভাবনা আমাদের আছে। আমরা তাদের মাথা গোজানো ঠাঁই করার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি। সমাজের সবাইকে নিয়ে সবার আগে তাদের ঘর মেরামত করা উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এরপর শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার সমস্যার সমাধান করতে চাই। তারপর যদি সহযোগিতা লাগে তাহলে বীরগঞ্জ সমিতি বিষয়টি দেখবে।নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল খালেক সরকার জানান, তাদের মানবিক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারিভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস কর্তৃক আমার মারফতে ২৮টি কম্বল প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে অনেকে এগিয়েছে। তাদের সহযোগিতায় দু-এক দিনের মধ্যে আমরা তাদের নতুন ঘর তৈরি করে দেওয়া চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার আগুন লেগে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের নিজপাড়া ইউনিয়নের আওলাখুড়ী হঠাৎ পাড়া গ্রামের ৮টি পরিবারের ঘর, আসবাবপত্র, ছাগল, হাঁস-মুরগি, চাল-ডাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। তারপর থেকে তারা খোলা আকাশের নীচে পলেথিন তাবুতে বসবাস করছে।এমদাদুল হক মিলন/এমএএস/এমএস

Advertisement