ভ্রমণ

নেপাল ভ্রমণে যা যা দেখলাম

মোহাম্মাদ শাহরিয়ার খান

Advertisement

পাহাড়ে ঘেরা এক দেশ। হিমালয়কে চারদিক থেকে আগলে রেখেছে দেশটি। উপর থেকে দেখলে মনে হবে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যেন পুরো দেশকেই জড়িয়ে রেখেছে। একপাশে চীন ও অন্যপাশে ভারত এই দুই দেশের মাঝখানে অনেকটা বার্গার এর মতো নেপাল অবস্থিত। পৃথিবীর দ্বিতীয় আমাজন বলা হয় নেপালকে। এখানে আছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘মাউন্ট এভারেস্ট’।

এর আগেও দু’বার নেপাল ভ্রমণ করেছি। তবে এবারের ভ্রমণ ছিল বেশ ভিন্ন। ছাত্র অবস্থায় যখন নেপাল গিয়েছিলাম, সেটি ছিল আমার প্রথম বিদেশ ভ্রমণ তাও আবার সিনিয়র কাজিনদের সঙ্গে। এই সফরে আমার সঙ্গে ছিলেন এন্টারপ্রেনারস ক্লাব অব বাংলাদেশের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মারুফ লিয়াকত ও জেনারেল সেক্রেটারি কামরুল হাসান ভাই।

প্রায় দীর্ঘ দুই বছর করোনার জন্য অনেকটা দেশ এ বন্দি থেকে এই রকম এটি ভ্রমণ ছিল আমার কাছে গ্রীষ্মের শেষে বর্ষাতে ভিজতে যাওয়ার মতো। শেষমেশ যাওয়া না যাওয়ার দোনাচলে টিকিট করেই ফেললাম।

Advertisement

‘গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ নেপালের আয়োজনে ‘নেক্সট জেনারেশান ইন্টারন্যাশনাল লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২২’ এ মনোনীত হয়েই এবার নেপাল ভ্রমণ করলাম গত ২৪ সে মার্চ। ‘গ্লোবাল ইয়ুথ পার্লামেন্ট’ গত কয়েক বছর ধরে সারা বিশ্বে যারা ইয়ুথ ও ক্লাইমেট চেঞ্জ নিয়ে কাজ করে তাদেরকে সম্মননা প্রদান করে আসছে। এ বছর এন্টারপ্রেনারস ক্লাব অব বাংলাদেশে ইয়ুথদের এন্টারপ্রেনিউরশিপ নিয়ে কাজ করার সুবাদে আমাকে মনোনীত করা হয়। এবার আমি ই-ক্লাব বাংলাদেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। যুব উদ্যোক্তাদের গুরুত্ব ও সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ উদ্যেক্তা ইকো-সিস্টেম সম্পর্কে বক্তব্য রেখেছি।

বিস্তীর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ইতিহাস তথা দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে নেপালের ইতিহাস। এটি একটি বহু জাতির, বহুসংস্কৃতির, বহু ধর্মের এবং বহুভাষার দেশ। নেপালের আসল কথ্য ভাষা নেপালী হলেও আরও বেশ কয়েকটি জাতিগত ভাষা আছে। বিংশ শতাব্দীতে ও একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে নেপাল গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিল।

১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দেশটি একটি গৃহদ্বন্দ্বে ভুগছিল। এরপর ২০০৬ সালে একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ও একই বছরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবিধানিক নির্বাচনের জন্য নেপালের সংসদ ২০০৬ সালের জুন মাসে রাজতন্ত্রের অবসানের পক্ষে ভোট দেয়।

নেপাল একটি ফেডারেল বা যুক্তরাষ্ট্রীয় প্রজাতন্ত্র হয়ে ওঠে ও ২০০ বছরের পুরনো শাহ রাজবংশের পতন ঘটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল হয়ে ওঠে, ‘যুক্তরাষ্ট্রীয় গণপ্রজাতান্ত্রিক নেপাল’। প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল নেপালের আয়তন। যা প্রায় বাংলাদেশের সমান কিন্তু জনসংখ্যা এখনো ৩ কোটির কম। সার্কের সদস্যদের মধ্যে ভূমিবেষ্টিত দেশগুলোর একটি হলো নেপাল।

Advertisement

নেপাল ভ্রমণে যেতে চাইলে বাংলাদেশে নেপাল অ্যাম্বাসির মাধ্যমে ভিসা করাতে হবে। ভিসা করতে পাসপোর্ট , হোটেল বুকিং, রিটার্ন টিকিট, করোনার টিকার সার্টিফিকেট ও অনলাইন থেকে নেপাল এন্টারেন্স ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে। ২/৪ দিনের মধ্যে ভিসা হয়ে যায় সাধারত। তবে নেপাল ও এরাইভাল ভিসাও দিয়ে থাকে যেটা নেপাল এয়ারপোর্টে গিয়ে করতে হয়। তবে ভিসা নিয়ে গেলেই ভালো।

এরপর অনলাইনে আপনি কাঠমান্ডুতে হোটেল বুকিং করতে পারবেন ৫০০-১৫০০ টাকার মধ্যে। বেশ ভালো মানের হোটেল বুকিং করতে পারবেন। আমরা যেহেতু তিন জন গিয়েছিলাম তাই আমরা সব কিছু বাংলাদেশ থেকে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম। নেপালে গিয়ে পেমেন্ট করেছি। ২৪ মার্চ প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট আকাশভ্রমণ শেষে বিকেল ৬টার দিকে আমরা নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুতে পৌঁছায়।

এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের হোটেল ছিল ২/৩ কিলোমিটারের মধ্যে। প্রায় ৮০০ নেপালি রুপি দিয়ে একটি ট্যাক্সি নিয়ে আমরা হোটেলে পৌঁছে গেলাম। সেদিন নেপালের আবহাওয়া ছিলো একটু গরম কিন্তু রাত বাড়তেই গরম কমতে থাকে।

নেপালের লোকাল খাবার হিসেবে তারা ভাতের থালিকেই প্রাধান্য দেয়। সাধারণত প্রায় দোকানেই এই খাবার পাওয়া যায়। স্বাদ অনেকটা এদেশের খাবারের মতোই। তাই নেপালে আপনার খাবারের দিক দিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এছাড়া পাওয়া যায় নানা ধরনের চা যেমন- গ্রিন টি, তুলসি চা, গোলাপ চা, জেসমিন চা, হলুদ চা ইত্যাদি। এছাড়া যেহেতু নেপালে প্রচুর ট্যুরিস্ট থাকে তেই পিৎজা, স্টেক, বার্গারের মতো বিভিন্ন ফাস্টফুডও পাওয়া যায়। ২৫ তারিখ আমাদের এওয়ার্ড প্রোগ্রাম থাকায় সেই দিন খুব একটা ঘোরাঘুরি করতে পারি নি। তবে প্রোগ্রাম শেষে আমরা গিয়েছিলাম শহরের মধ্যে দরবার স্কয়ার ও তার আশেপাশের অংশ দেখতে।

দরবার স্কোয়ার মূলত নেপালের প্রসিদ্ধ নিদর্শনগুলোর মধ্যে একটি। নেপালে এই ধরণের অনেকগুলো দরবার স্কয়ার আছে। যার মধ্যে বেশি বিখ্যাত হলো কাঠমান্ডু উপত্যকার দরবার স্কয়ারগুলো। কাঠমান্ডু, ভক্তপুর ও পাটনের দরবার স্কয়ারগুলোকে ২০০৬ সালে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

আরও আছে ধারাহারা টাওয়ার ও বেশ কিছু ভবন যেগুলা বেশ ক্ষতিগ্রস্থ হয় ভয়াল সেই ভূমিকম্পে। সেদিন সেখান থেকে আমরা থামেল চলে যায় ও সেখানকার লোকাল মার্কেট থেকে আমরা মালা, টুপি, চুড়ি, হাতে আঁকা পেইন্টিং ও কিছু শো-পিস কিনে একটি মুসলিম হোটেলে খাবার খেয়ে নিজেদের হোটেলে ফিরে যাই।

২৬ মার্চ আমরা সকালে চলে যাই শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে প্রায় চন্দ্রগিরি পাহাড়ে। জায়গাটির নাম থানকোট। সেখানে ক্যাবল কারে চড়ে প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ মাত্র ১০ মিনিটে চন্দ্রগিরি পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়া ছিল অন্য রকম একটি অনুভূতি। সঙ্গে সবুজ পাহাড়ের একটি মনোরম দৃশ্যে প্রায় ৪৫০০ ফিট উপর থেকে দেখার অনুভূতিও ছিল ভিন্ন।

ক্যাবল কার এ চড়তে আপনাকে খরচ করতে হবে প্রায় ১০০০ নেপালি রুপি। আর ট্যাক্সিতে যাওয়া আসতে প্রায় ১৫০০ নেপালি রুপি লাগবে। চন্দ্রগিরি পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে আমি, মারুফ ও কামরুল এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে জিপ-লাইন ড্রাইভ দিলাম। যা ছিল এক অন্য রকম অনুভূতির। প্রায় ৫০০ মিটার লম্বা এই জিপ লাইন ড্রাইভ শুধু একটি তারের মাধ্যমে আপনাকে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পৌঁছে দেয়।

নেপালের সংস্কৃতি অনেকগুলো দেশীয় আদিবাসী গোষ্ঠীর সংস্কৃতির সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে নেপালের জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি তাদের গান ও নাচের জন্য সুপরিচিত। সেখানকার প্রতিটি বাটিক হোটেলে দেশীয় গান পরিবেশন হয়। এছাড়া সেদিন পশুপতিনাথ মন্দির, বুধানাথ স্তূপা, সায়াম্বুনাথ টেম্পল, বুধনীল কান্ঠা দেখে রাতে হোটেলে ফেরত আসি।

কারণ পরদিন সকালে আমাদের যাত্রা শুরু হবে হিমালয় এলাকা পোখারা শহরে। সেখানে যাওয়ার জন্য মন আনচান করছিল। পোখরা এয়ারপোর্টে নেমে যখন একটি হালকা বাতাস গায়ে স্পর্শ করল তখনই মনে হলো অন্যরকম শান্তি আছে এই শহরে। এয়ারপোর্টে থেকে খুব কাছেই আমাদের হোটেল। বলা যায় একদম লেকের সামনে।

এয়ারপোর্ট থেকে লেকের পাড় দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন শিহরিত হচ্ছিলাম। একদিকে লেক আরেকদিকে পাহাড় মাঝখানে আমাদের হোটেল খুবই অন্য রকম একটা অনুভূতি। বাতাস ছিল হালকা ঠান্ডা ও মৃদু। গত তিন দিনের ক্লান্তি যেন নিমিষেই উধাও হয়ে গিয়েছিল।

সেদিন আমাদের যেতে যেতে রাত হয়ে গিয়েছিল বলে তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। তবে শহরটা অনেকটা থাইল্যান্ডের ফুকেটের মত মনে হলো কারণ প্রকৃতির এক পাশে লেক আরেক পাশে পাহাড় আর লেকের পাশের সড়কে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলো সাজানো থাকে। সেদিন লেক পাড়ে একটি লোকাল কনসার্ট হচ্ছিলো , আমরা তিন জন সন্ধ্যায় কনসার্টে গিয়ে গান শুনে হোটেলে ফিরে আসি।

রাতে বসে প্ল্যান করে ফেললাম পরবর্তী দিন কী কী করব। কারণ আমাদের হাতে সময় আর বেশিদিন ছিল না। শুক্রবার সকালে আমরা চিন্তা করলাম যে হিমালয় দেখতে যাব। হেলিকপ্টারে করে বেইজ ক্যাম্প পর্যন্ত যাওয়া যাবে। আর সেখান থেকে খুব কাছেই হিমালয় দেখা যায়। পরদিন সকালে আমরা ঘুম থেকে উঠে গেলাম ডেভিস ফল দেখতে।

বিমানবন্দর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান। সামনে থেকে না দেখলে এর সৌন্দর্য টের পাবেন না। দাবি নামের এক নারী ডুবে যাওয়ার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে তার নাম অনুযায়ী এই ঝড়নার নামকরণ করা হয়। শুনেছি বর্ষাকালে এই ঝরনা দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে।

ডেভিস ফল দেখা হলে সোজা চোলে গেলাম গুপ্তেশ্বর মহাদেব মন্দির দেখতে। এটি সাধারণত তিব্বতীরা শরণার্থী হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। মাটি থেকে খুব সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে পর্যটকদের জন্য। সেখানে একটি সাত ফুট লম্বা বুদ্ধমূর্তিটি আছে যা দেখতে অনেকেই চলে আসে।

এরপর ওই স্থান ত্যাগ করে একটি লোকাল একটি ভারতীয় একটি হোটেলে আমরা বেশ মজা করে মুরগির মাংস, তাওয়া রুটি ও ফলের সালাদ খেয়ে নিলাম। সেখান থেকে সোজা একটি ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেলাম স্বরনকোর্ট। এটি নেপালের জনপ্রিয় টুরিস্ট স্পটগুলোর মধ্যে অন্যতম।

এখান থেকে অন্নপূর্ণা চূড়া দেখা যায়। সকালের সূর্যের আগমনের দৃশ্য দেখা যায়। তবে এখান থেকে সূর্যোদয় দেখতে না পারলেও আমরা সূর্যাস্ত ঠিকই উপভোগ করেছি। শেষের দিকে আমরা ট্যাক্সি ড্রাইভার কাছে শুনতে পেয়েছি ইন্টারন্যাশনাল মিউজিয়ামের কথা। সেখানেও ঢুঁ মেরে এলাম।

এই মিউজিয়ামে পাহাড়ের ইতিহাস, নেপালের ইতিহাস, পর্বতের ইতিহাসের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ডকুমেন্টের মাধ্যমে পাহাড়ের ভৌগলিক অবস্থান। এই মিউজিয়ামে গেলে নেপাল সম্পর্কে একটি ইতিহাস জন্মে যাবে। মেমোরিয়াল মিউজিয়াম থেকে ফেরার পথে আমাদের ট্যাক্সির ড্রাইভার সাহেব বললেন যে অন্নপূর্ণাতে প্রজাপতি জাদুঘর। সেখানে গেলে আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে।

২৭ মার্চ ভোর চারটার দিকে এয়ারপোর্ট থেকে আমাদের গাড়ি পাঠিয়ে দিল। ৫ মিনিটের মধ্যে আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম। এয়ারপোর্ট থেকে হেলিকপ্টারে করে আমরা চলে গেলাম অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে। তখন বুঝি নাই যে ঠিক কোথায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। তখন বাজে প্রায় ৫টা হঠাৎ মাথা উঁচু করে তাকিয়ে দেখি অর্ণপূর্ণার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সূর্যের আবছা আলোয় যেন তার সব সৌন্দর্য উজাড় করে দিয়েছে।

চারদিকে শুধু সাদা সাদা বরফ। ১৫ মিনিট সেখানে অবস্থান করার পরে হেলিকপ্টার করে আবারো ফিরে আসলাম এয়ারপোর্টে। তবে সেদিন আবহাওয়া ভালো না থাকায় অন্নপূর্ণার আরও কাছে আমরা যেতে পারিনি। এয়ারপোর্টে পৌঁছে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা আলট্রা লাইট হেলিকপ্টারে করে নেপালকে আকাশ থেকে দেখব।

যথারীতি তাই আমি, মারুফ ও কামরুল তিনজনই আড়ষ্ট হয়ে ছোট আলট্রা হেলিকপ্টারে উঠে বসলাম। আমার পাইলট অবশ্য রাশিয়ান ছিলেন। প্রায় ৮০০০ ফিট উপর থেকে নেপালের বিভিন্ন টুরিস্ট স্পট আবারো আকাশ থেকে দেখলাম। ফিওয়া লেকের উপর দিয়ে আবার এসে এয়ারপোর্টে নামলাম।

এয়ারপোর্ট থেকে হোটেলে এসে সকালে খাওয়া-দাওয়া করে ফ্রেশ হয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম প্যারাগ্লাইডিং এর উদ্দ্যেশে। পাহাড় বেয়ে প্রথমে আমাদের নিধারিত ফ্লাইং জোনে নিয়ে যাওয়া হলো। পাইলট বুঝিয়ে দিলেন কীভাবে ও কখন জাম্প দিতে হবে। কথা অনুযায়ী ড্রেস পরে পাইলটের সঙ্গে প্রায় ৪৫০০ ফিট উপর থেকে লাফ দিয়ে বাজপাখির মতো আকাশে উড়াল দিলাম।

আকাশে থাকা অবস্থায় কয়েকটি মুভ ও সুইং দিলাম। এটি ছিল এক অন্য রকম অনুভূতি। ৩০ মিনিট উড়াল শেষে আমরা যখন ল্যান্ডিং করি তখন প্রায় বিকেল ৪টা বেজে গেছে। কাল সকালে পোখরা হয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবো তাই তাড়াতাড়ি হোটেলে ফায়ার এসে ফিওয়া লেকে যাবার প্ল্যান করে ফেললাম।

ফিওয়া লেকের দেখতে আমাদের হোটেল থেকে অনেক কাছে ছিল তাই হেঁটে হেঁটে আমরা ৩ জন গেলাম। বাইরে তখন হালকা ঠান্ডা বাতাস। ফিওয়া লেকের অপরূপ সৌন্দর্যের পাশে বসলে আপনার মনটা এমনিতেই ভালো হয়ে যাবে। বেশ কিছু ছবি তুললাম। লেকের নৌকায় করে এক প্রান্তের কিছু অংশ ঘুরে দেখলাম। সন্ধ্যায় লেকের পাশের হোটেলে বসে নেপালি ভাতের সঙ্গে সবজি ও মাংস খেয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম।

পোখরা থেকে কাঠমান্ডু হয়ে যখন হিমালয় এয়ারলাইন্সে ঢাকায় ফিরছি তখন প্রায় দুপুর ৩টা। মেঘের উপরে যখন প্লেন উঠে গেলো তখন স্পষ্ট করে আমরা হিমালয়ের চূড়া দেখতে পেলাম। প্রায় ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট পর আমরা ঢাকা পৌঁছালাম। আমার এই ছোট্ট জীবনে প্রায় ১৫ দেশ ঘুরেছি। তবে নেপাল ভ্রমণ জীবনের এক অন্য রকম এক স্মৃতি হয়ে থেকে যাবে।

লেখক: প্রেসিডেন্ট-ই-ক্লাব (এন্টারপ্রেনারস ক্লাব অব বাংলাদেশ)

জেএমএস/জিকেএস