সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশে রয়েছে সম্পদের ভাণ্ডার। মূল্যবান এসব সম্পদ আহরণ করে বিভিন্ন দেশ তাদের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশেরও সামনে উন্মোচিত হয়েছে সমুদ্রের এ বিশাল সম্পদকে কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার নতুন দিগন্ত।
Advertisement
কারণ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটারের সমপরিমাণ টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকা এখন বাংলাদেশের হাতে। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি হওয়ায় বিশাল এই এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। ফলে খুলে যায় নীল বিপ্লবের অপার দুয়ার।
ধারণা করা হয়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে যে খনিজ সম্পদ রয়েছে, তা পৃথিবীর অন্য কোনো সাগর-উপসাগরে নেই। অথচ বর্তমানে সমুদ্র গবেষণা বা সুনীল অর্থনীতির (ব্লু-ইকোনমি) অনুসন্ধান হয় ভাড়া করা ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে।
এই নৌকার মাধ্যমে সমুদ্রের ১০-১২ কিলোমিটার গভীরে যাওয়া যায়। এর বেশি যাওয়া যায় না। ফলে উপকূলে থেকে সংগ্রহ করা হয় স্যাম্পল। এতে করে বিশাল সমুদ্রে কী সম্পদ লুকিয়ে আছে তা সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা যায় না। এজন্য ছোট ডিঙ্গি নৌকার বদলে বড় জাহাজ কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যাতে করে সমুদ্রের ১০০ কিলোমিটার গভীরে যাওয়া যায়। এছাড়া ১০-১২ দিন সমুদ্রে অবস্থান করে স্যাম্পল সংগ্রহ করা যায়।
Advertisement
উদ্যোগটি নিয়েছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট। এর উদ্দেশ্য হলো সমুদ্রে কী সম্পদ লুকিয়ে রয়েছে তা সঠিকভাবে অনুসন্ধান করা।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে সমুদ্রের সম্পদ অনুসন্ধানের কাজ চলছে ডিঙ্গি নৌকা ভাড়া করে। এই নৌকা দিয়ে শুধু উপকূলে কাজ করা যায়। তার মধ্যে আবার দিনে দিনে ফিরে আসতে হয়। ফলে সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না সমুদ্রের। এজন্য জাহাজ কিনবো আমরা। এটাকে ‘ওশান স্যাম্পল কালেক্টিং’ বোট বলে। এর মাধ্যমে সমুদ্রে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে যাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে সমুদ্রের গভীরে ১০-১২ দিন থেকে সংগ্রহ করা যাবে তথ্য। ফলে সঠিক তথ্য অনুসন্ধান করতে পারবো।
তিনি আরও বলেন, আমরা একটা ল্যাব তৈরি করবো। আন্তর্জাতিক মানের একটি ডরমেটরি নির্মাণ করা হবে। যাতে করে বিদেশি গবেষক এসে থাকতে পারেন।
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট
Advertisement
বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে। প্রকল্পের প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৪৪ কোটি টাকা।
এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) উপস্থাপন করা হবে।
প্রকল্পের উদ্দেশ্য
দেশের সমুদ্র গবেষণায় পুরোপুরি সক্ষমতা তৈরির মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতি উন্নয়নে সফলতা অর্জন করা। আন্তর্জাতিক মানের ওশানোগ্রাফি ল্যাবরেটরি তৈরি ও এতে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে সমুদ্র গবেষণার সক্ষমতা বাড়ানো। গবেষণা কাজের পরিধি বাড়ানোর জন্য বর্তমান মূল ভবনের সম্প্রসারণ, ওশান অবজারভেশন সিস্টেম স্থাপন, মেরিন বায়োলজিক্যাল কালচার ইউনিট তৈরি, ওশান ইকুইপমেন্টেশন ও প্রকৌশল ওয়ার্কশপ স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি করা।
এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে সামুদ্রিক সম্পদ অন্বেষণ ও গবেষণার নমুনা সংগ্রহে স্যাম্পল কালেকটিং বোট (স্মল রিসার্চ ভেসেল) যোগ করা। অপরদিকে সমুদ্র গবেষণার বিষয়ে কারিগরি ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্থাপন করা হবে প্রশিক্ষণ সেন্টার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে উপকূলীয় অঞ্চল ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন কৌশল সম্পর্কে গবেষণার সুযোগ হবে। এছাড়া এর মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির উন্নয়নে গবেষণা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে সক্ষমতা বাড়বে।
২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সমুদ্রের গবেষণা কাজে হালকা যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। ফলে সমুদ্রের নিচে আধুনিক যন্ত্রপাতি পাঠিয়ে গবেষণার প্রয়োজন থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
এমওএস/জেডএইচ