উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কিশোরগঞ্জের হাওরে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকার বোরো ধান। ফসলরক্ষা বাঁধ রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন স্থানীয়রা। জেলার ইটনায় চর এলাকায় পানির নিচ থেকে কাঁচা-পাকা ধান কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকরা। পাকার আগ মুহূর্তে কষ্টের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আর্তনাদ করছেন কৃষকরা।
Advertisement
চোখের সামনে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে জমির কাঁচাপাকা ধান। চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই কৃষকদের। অনেকেই বাধ্য হয়ে কেটে ফেলছেন কাঁচাপাকা ধান। কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের ইটনায় মাঠে মাঠে এখন ফসলহারা কৃষকদের আর্তনাদ।
ভারতের আসামের চেরাপুঞ্জিতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে। নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সুনামগঞ্জ হয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে কিশোরগঞ্জের ইটনা হাওরে। শনিবার বিকেল নাগাদ ইটনার ধনু নদীর পানি বেড়ে ঢুকে পড়ে চরাঞ্চলের নিচু জমিতে।
ইটনা সদরের চরপাড়া গ্রামের মইধর আলী জিওলের হাওর সাব মার্সিবল সড়কে বসে দেখছিলেন ক্ষেতের ধান ডুবে যাওয়া। আর মাত্র ১৫ দিন পরই জমির ধান কাটা শুরু হতো। এ সময় জমির ধান ডুবে যাওয়ায় তার চোখে-মুখে শুধুই বিষাদের ছায়া।
Advertisement
ইটনা উপজেলার জিওলের হাওরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রবল বেগে নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডুবছে নতুন নতুন জমি। জিওলের বাঁধসহ বেশকিছু বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা বাঁশ, মাটি ও চাটাই দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।
কৃষকদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ড ফসল রক্ষাবাঁধগুলো সময় মতো মেরামত না করায় এগুলো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এগুলো দ্রুত সংস্কার না করা হলে বিভিন্ন হাওর দ্রুত ডুবে যাবে।
ইটনা সদর ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম সোহাগ জানান, হঠাৎ করে উজানের পানি চাপ দেওয়ায় জিওলের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামবাসীকে নিয়ে বাঁধটি মেরামত করা হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সময়মতো ফসলরক্ষা বাঁধ মেরামত করতে না পারায় সহজেই জমিতে পানি চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
Advertisement
তবে কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মতিউর রহমান জানান, হাওরের ৭৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। তবে জমি অধিগ্রহণ শেষ না হওয়ায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ ১২টি বড় ফসলরক্ষা বাঁধ প্রকল্প এখনও শেষ হয়নি।
এদিকে রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক সাইফুল হাসান আলামিনের নেতৃত্বে কৃষি বিভাগের ৪ সদস্যের একটি দল জিওলের হাওরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত কী পরিমাণ জমি পানিতে ডুবে গেছে তা নিরুপণের কাজ চলছে। তবে এ হাওরে প্রাথমিকভাবে ২শ একর জমিতে পানি উঠেছে বলে জানান তিনি।
ইটনাসহ কিশোরগঞ্জের তিনটি হাওর উপজেলায় এবার ১ লাখ ৪ হাজার মেট্রিক টন বোরো ধান আবাদ হয়েছে।
এফএ/জেআইএম