দেশজুড়ে

আগৈলঝাড়ায় মারবেল মেলায় মেতেছে নারী-পুরুষ

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলায় সোয়া দু’শ বছরের ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার সকালে শুরু হয়ে মেলা চলবে মধ্য রাত পর্যন্ত। মেলায় আগৈলঝাড়াসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ মারবেল খেলায় অংশগ্রহণ করছে। মেলায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলাকে ঘিরে উপজেলার রামানন্দের আঁক গ্রামের ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। একদিন আগে থেকেই আয়োজন শুরু হয় এই মেলার। সকাল থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকে মেলায়। বাড়িতে বাড়িতে চিড়া, মুড়ি, খেঁজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পড়েছে। এবছরও মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষদের মধ্যে মারবেল খেলার প্রতিযোগিতা। সকাল থেকেই কয়েক বর্গ কি.মি এলাকা জুড়ে মারবেল খেলা চলছে। রাস্তার ওপর, বাড়ির আঙিনা, অনাবাদী জমি, বাগানসহ সর্বত্রই মারবেল খেলার আসর বসেছে। মেলাকে কেন্দ্র করে বাঁশ-বেত শিল্প সামগ্রী, মনিহারী, খেলনা নিয়ে দোকানীরা পসরা সাজিয়ে বসেছে। রয়েছে চটপটি, ফুসকা, জিলাপি, বাতাসাসহ বিভিন্ন মিষ্টান্নের দোকান। আয়োজন করা হয়েছে নাম সংকীর্ত্তন ও কবিগানের।গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা সমীর বিশ্বাস জানান, আমরা মারবেল মেলার কথা শুনে এসেছি। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা আমাদের খুব ভালো লেগেছে। রামানন্দের আঁক গ্রামের জয়দেব বাগচির ছেলে ৫ম শ্রেণির ছাত্র দিগন্ত বাগচি জানায়, সারা বছর টাকা জমিয়েছে মারবেল খেলার জন্য। মেলায় মারবেল খেলার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন এসেছেন। তাদের জন্য পূর্ব থেকেই ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলার আয়োজক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মলিনা রানী রায় জানান, রামানন্দের আঁক গ্রামে প্রায় আড়াই’শ বছর পূর্বে সোনাই চাঁদ নামে এক কন্যা শিশুর ৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়। ৭ বছর বয়সে স্বামী মারা গেলে নিঃসন্তান অবস্থায় শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের নীচে মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন। ক্রমেই তার অলৌকিকত্ব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। তখন থেকেই ওই স্থানে বাৎসরিক পূজা হয়ে আসছে। মেলা কমিটির সভাপতি যতীশ চন্দ্র বাড়ৈ জানান, মা সোনাই চাঁদ আউলিয়ার জীবদ্দশায় আনুমানিক ১৭৮০ খ্রিঃ থেকে শুরু করে পঞ্জিকামতে অদ্যাবধি প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে নবান্ন উৎসবের মাধ্যমে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তার মৃত্যুর পর ওই বাড়িটি সোনাই আউলিয়ার বাড়ি হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। প্রতিবছর এই দিনটি উপলক্ষে বৈষ্ণব সেবা, নাম সংকীর্ত্তন, কবিগান শেষে সোয়ামণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সঙ্গে সোয়ামণ গুড়, ৫০ জোড়া নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী মিশিয়ে নবান্ন তৈরি করে মেলায় আগত দর্শনার্থীদের প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে বাস্তুপূজা উপলক্ষে প্রায় দুইশ ২৫ বছর ধরে এ গ্রামে মারবেল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। মারবেল খেলা সম্পর্কে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, আমাদের পূর্বপুরুষরা এ খেলার মাধ্যমে মেলার প্রচলন করেছিল, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমরা সেই প্রাচীণ ঐতিহ্য ধরে রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। স্থানীয় অধিবাসীরা তাদের মেয়ে-জামাইসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের এ মারবেল মেলায় আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছে। সাইফ আমীন/এমএএস/এমএস

Advertisement