সাহিত্য

‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে রচিত ‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইটি এক অনবদ্য সৃষ্টি। এই বইয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মসহ জাতি সমৃদ্ধ হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা বইটিতে তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বইটিতে জাতির পিতার জন্ম, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতা, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড উঠে এসেছে। কাজেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুকে জানার জন্য তরুণ প্রজন্মের বইটি পড়া উচিত।’

Advertisement

শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলামোটরে ‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেলের সভাপতিত্বে এবং বিবার্তার সাহিত্য সম্পাদক সামিনা বিপাশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি অসীম সাহা।

তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয় শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে। ইতিহাসে বাংলাকে শাসন করেছে এমন বহু শাসক আছেন। বল্লাল সেন, লক্ষণ সেনও তো বাঙালি ছিলেন। কিন্তু তারা কেউ মহানায়কের উপাধি পাননি। ইতিহাসের প্রথম বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যদি ইতিহাসের আরও পেছনে ফিরে যাই, তবে আমরা সুভাস চন্দ্র বোসকে দেখতে পাই। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেবো।’ তিনি তার জনগণের কাছে রক্ত চেয়েছেন। কিন্তু আমাদের বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো’। তিনি নিজেও বাঙালির সঙ্গে রক্ত দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখানেই বঙ্গবন্ধু সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন।

Advertisement

বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত এই কবি বলেন, সম্প্রতি আমি হিসাব করে দেখেছি, ৩৬১ জন এমন কবি আছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখনো সংশয়ে আছেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চান। কিন্তু সহস্র বাঙালির এই গল্প, গান, কবিতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে মুছবেন? এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের কোনো লোভ দেখিয়েই স্বাধীনতাবিরোধীদের দলে ভেড়ানো যাবে না। এই অকুতোভয় মানুষগুলোই আমাদের মূল শক্তি।

‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইটির লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। আর শেখ বংশ হচ্ছে তেজস্বী বীর। এই বংশেই শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত সবকিছুতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। তবে বঙ্গবন্ধুকে শুধু দেখলে হবে না। তাকে মানতে হবে, জানতে হবে। আর কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে না মানে, তার বাংলাদেশে থাকার অধিকার নাই, নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নাই।

তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে স্বাধীনতার সপক্ষে কথা বলা, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা, দেশের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। সেই কাজটি আমি করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নসহ তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নপূরণে আমরণ কাজ করে যাবো।

‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বই নিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখতে পারার জন্য, বলতে পারার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এটা আমার বিশাল প্রাপ্তি।

Advertisement

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্ম না নিলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ২১ হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার লিখিত ‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবে। বইটিতে এদেশের ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধুর জন্ম থেকে শুরু করে সংগ্রামী জীবনের অবদানের সবটুকু তুলে ধরা হয়েছে। কাজেই আমি মনে করি, বইটির মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবেন।

তরুণ প্রজন্মের বই পড়ার প্রতি অনীহার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমাদের বর্তমান প্রজন্ম বেশি পড়াশোনা করতে চায় না। এই যে তাদের অনীহা, এটা থেকে উত্তরণের জন্য ভিন্ন কিছু করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা দেশভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাসের সারাংশ লেখায়, অডিও, ভিডিও ও প্রামাণ্যচিত্র আকারে তুলে ধরে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিলে সেটি বেশ কার্যকর হবে বলে আমি মনে করি।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে বীর বিক্রম (পিএসসি) মেজর (অব.) হামিদুল হোসেন তারেক বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক নেতাকে দেখিনি। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যখন আমার দেখা হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত উঁচু করে বলছিলেন, এই দেখো আমার সোনার ছেলে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে বীর বিক্রম উপাধি পেয়েছে। এই সোনার ছেলেরাই সোনার বাংলাদেশ গড়বে।

শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যতদিন থাকবে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতাও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেল বলেন, বাংলা জার্নালের জন্য একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধার লেখা বই প্রকাশ করা অত্যন্ত সৌভাগ্য, আনন্দ ও গর্বের। ১৯৪৮ সালে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই আন্দোলনে তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করা হয়। এজন্য জেলখানায় তিনি অনশনও করেছেন। বুদ্ধিজীবী নামক বিবেক বিক্রেতারা এই ইতিহাসকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে বিকৃত করেছে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিবার্তা২৪ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি।

এইচএস/ইএ/জেআইএম