স্বাস্থ্য

কমিশন বাণিজ্যে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়

সারাদেশে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠছে নামে-বেনামে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। সেই সঙ্গে কমিশন বাণিজ্যে ক্রমাগত বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। এক শ্রেণির নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত অর্থলোভী চিকিৎসক বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরির সঙ্গে গোপন চুক্তিতে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর কমিশন গ্রহণ করছে। অভিযোগ রয়েছে, কমিশনের লোভে বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষারও করাচ্ছেন। এমনকি নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়ে আনতে বাধ্য করছেন তারা। জাগো নিউজের অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, মেডিকেল কলেজসহ সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে এমআরআই, সিটি স্ক্যান, এক্সরেসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে থাকার নেপথ্যেও রয়েছে কমিশন বাণিজ্যে। স্বাস্থ্য সেক্টরে কমিশন বাণিজ্যের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট হলেও এটি বন্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিংবা স্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যকর কোনো পদক্ষেপই নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্যের কারণে রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। কমিশন না পেলে চিকিৎসকরা রোগীকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়ার ভয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে নিরুপায় হয়ে কমিশন দিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এ কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করা গেলে চিকিৎসা ব্যয় অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তারা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ৫০ পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞদের মধ্যে একজন অধ্যাপক ডা. বিএম আতিকুজ্জামান বলেন, দেশের এক শ্রেণির ডাক্তারের কমিশন বাণিজ্যের কারণে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। দেশের প্রচলিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ডাক্তাররা কোন ধরনের রোগীকে কী রোগের জন্য কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছেন, এ পরীক্ষার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কী না তা দেখতে অডিট ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না থাকায় এক শ্রেণির চিকিৎসক এমন দুঃসাহস দেখাচ্ছেন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম কর্মীরা সতর্ক দৃষ্টি রেখে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির মাধ্যমে কমিশন ব্যবসা বন্ধে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন বলেও মনে করেন ডা. বিএম আতিকুজ্জামান।শুক্রবার (১৫ জানুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে ফ্লোরিডার এক চিকিৎসকের দায়িত্বে অবহেলার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওষুধ কোম্পানির কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিনি একটি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জেনেও তথ্য গোপন রাখেন। এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে প্রথমে মামলা হয়। পরে ফ্লোরিডা অঙ্গ রাজ্যের মেডিকেল বোর্ড তাদের নিজস্ব তদন্তে অপেশাগত কাজের জন্য ওই ডাক্তারের মেডিকেল চিকিৎসার সনদপত্র বাতিল করে।”“ফৌজদারি আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন এবং তার সব সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়। গত দু`বছর ধরে তিনি ওই সাজা ভোগ করছেন। যা তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা চলবে।”রাজধানীর ইনসাফ বারাকা কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মো. আলতাফ হোসেন জাগো নিউজকে জানান, তাদের হাসপাতালে অধ্যাপকসহ ৩০ জন ডাক্তার চেম্বারে রোগী দেখেন। তারা রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠান। কিন্তু তারা ডাক্তারদের একটি টাকাও কমিশন দেন না। বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর শতকরা ২০ থেকে ৩০ ভাগ কমিশন প্রদান করেন। ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ হলে চিকিৎসা ব্যয় বহুলাংশে হ্রাস করা সম্ভব।এমইউ/এসকেডি/আরএস/এমএস

Advertisement