অর্থনীতি

তরমুজ খুচরায় দ্বিগুণ, আপেল-কমলা-মাল্টার দাম চড়া

রাজধানীর যে কোনো বাজারে ঢুঁ দিলেই দেখা মিলছে গ্রীষ্মের রসালো ফল তরমুজ। কেউ কেউ মজা করে ‘গরমের আরাম’ বলেও অভিহত করেই এই মৌসুমি ফলটিকে। পুষ্টিগুণে ভরপুর তরমুজ বাজারে থাকলেও পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়ে দাম বেশ চড়া। তবে পাইকারি বা আড়তের থেকে খুচরা পর্যায়ে দাম একটু বেশিই চড়া।

Advertisement

আড়তে তরমুজ এখন যে দাম বিক্রি হচ্ছে, রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে তার প্রায় দ্বিগুণ দামে। শুধু তাই না আড়তে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন কেজি হিসেবে। এতে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছেন, অন্যদিকে ঠকছেন ভোক্তারা।

মৌসুমি ফল তরমুজের পাশাপাশি বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আপেল, কমলা, মাল্টা ও আঙ্গুর। মাসের অধিক সময় ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া এই ফলগুলোর দাম রোজাকেন্দ্রিক আরও একটু বেড়েছে। ফলে এসব ফল এখন স্বল্প আয়ের মানুষের অনেকটাই নাগালের বাইরে চলে গেছে। তরমুজের মতো, আপেল, মাল্টা ও কমলা দামেও পাইকারি ও খুচরায় বড় ধরনের পার্থক্য দেখা যাচ্ছে।

রাজধানীতে অন্যতম বড় ফলের আড়ত বাদামতলীতে। এই বাজারে এখন তরমুজ বিক্রি হয় পিস হিসেবে। আর দর দাম হয় ১০০ পিস ধরে। প্রতি পিস ১০-১২ কেজি ওজন এমন তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৩৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। ৪-৫ কেজি ওজন এমন তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। তার থেকে একটু বড় তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।

Advertisement

এদিকে আড়ত থেকে পিস হিসেবে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করছেন কেজি দরে। ১০-১২ কেজি ওজনের তরমুজের কেজি খুচরাই বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা। এ হিসাবে ১০ কেজির একটি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকায়, অথচ খুচরা ব্যবসায়ীদের এই তরমুজ কিনছেন সাড়ে তিনশ টাকার মধ্যে। আবার ৪-৫ কেজি ওজনের ১০০ পিস তরমুজ ৮-১০ হাজার টাকায় কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে। এতে ৫ কেজির একটি তরমুজের দাম খুচরাই পড়ছে ২০০-২৫০ টাকা। অথচ আড়ত থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই তরমুজের পিস কিনছেন ১০০ থেকে ১২০ টাকা দিয়ে।

বাদামতলী আড়তে তরমুজ বিক্রি করা মো. শরিফুল বলেন, তরমুজের ভরা মৌসুম এখনো শুরু হয়নি। তবে বাজারে ভালো মানের পর্যাপ্ত তরমুজ আসছে। এখন বরিশালের রাঙ্গাবালী ও খুলনা ও যশোর থেকে বাদামতলীতে তরমুজ আসছে। আর ১০-১৫ দিন পর বাজারে তরমুজের সরবরাহ অনেক বেড়ে যাবে। তখন দামও কমে যাবে বলে আমাদের ধারণা।

তিনি বলেন, বাদামতলীতে বরাবরই তরমুজ পিস হিসেবে বিক্রি হয়। আড়তে খুচরা বিক্রির নিয়ম নেই। এখান থেকে তরমুজ নিতে হলে এক’শ পিস হিসেবে দরদাম করে নিতে হবে। এখন বাজারে সব থেকে বড় যেসব তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে, তার গড় ওজন ৯-১২ কেজি। এই তরমুজ আমরা ৩৫ হাজার টাকার মতো বিক্রি করছি। খুচরা ব্যবসায়ীরা কীভাবে বিক্রি করছেন তা তো আমরা বলতে পারবো না।

তিনি আরও বলেন, এখই যে হারে বড় বড় তরমুজ আসছে তাতে যে কোনো সময় দাম কমে যেতে পারে। কারণ তরমুজ বড় হলে ও পেকে গেলে বেশিদিন রাখা যায় না। ১০-১৫ দিনের পর বাজারে যেসব তরমুজ আসবে তার সবই হবে পাকা। ওই সময়ের তরমুজ অনেক মিষ্ট ও লাল হবে। কিন্তু সেই তরমুজ বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। তাই যে দাম পাবে, ব্যাপারীরা সেই দামেই বিক্রি করে দেবেন। তবে রোজার কারণে বাজার আরও কয়েকদিন চড়া থাকবে বলে আমাদের ধারণা।

Advertisement

আড়তে পিস হিসেবে তরমুজ বিক্রি হলেও রাজধানীর প্রতিটি খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজি হিসেবে। রামপুরায় ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করা মো. আশরাফুল বলেন, আড়ত থেকে আমরা যে তরমুজ কিনি তার সবগুরোর ওজন ও সাইজ একই হয় না। আড়ত থেকে তরমুজ এনে, সেই তরমুজ বাছাই করে ভালোটা এখন ৫০ টাকা কেজি বিক্রি করছি। আড়তে থেকে মাল আনতে গাড়ি ভাড়া আছে, এখানে দোকান ভাড়া আছে। সব খরচ হিসাব করলে আমাদের খুব একটা ভালা হয় না।

প্রায় একই ধরনের কথা বলেন সেগুনবাগিচায় ভ্যানে তরমুজ বিক্রি করা বোরহান উদ্দিন। তিনি বলেন, ৩৫ হাজার টাকায় ১০০ পিস তরমুজ কিনলে ২০-৩০টির ওজন হয় ১০ কেজির ওপরে। বাকিগুলোর ওজন ১০ কেজির নিচে। ছোট-বড় সব তরমুজ আমাদের একই দামে কেনা পড়ে। কিন্তু একই দামে তো বিক্রি করতে পারি না। বড় তরমুজগুলোতে হয় তো একটু বেশি লাভ হয়, কিন্তু ছোটগুলাতে তেমন লাভ হয় না। আসলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক লাভ করছে, এমন ধারণা ঠিক না। যে তরমুজ আমরা ৫০০ টাকা বিক্রি করছি, সব খরচ হিসাব করলে দেখা যাবে ওই তরমুজের জন্য আমাদের সাড়ে চারশো টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে।

এদিকে তরমুজের পাশাপাশি বাজারে আপেল, আঙ্গুর, কমলা, মাল্টা বেশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা ব্যবসায়ীরা আপেলের কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কমলা। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। লাল আঙ্গুরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা ও সবুজ আঙ্গুর বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি।

অন্যদিকে বাদামতলীতে আপেলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। মাল্টার কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। একইভাবে কমলা ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি করছেন আড়দাররা। লাল আঙ্গুরের কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা ও সবুজ আঙ্গুরের কেজি ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। তবে বাদামতলীতে এসব ফল খুচরা বিক্রি হচ্ছে না। এই বাজারটি থেকে ফল কিনতে হলে কার্টুন ধরে কিনতে হয়।

ফলের দামের বিষয়ে বাদামতলীর ব্যবসায়ী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এখন কমলার সিজন না। তাই বাজারে কমলার সরবরাহ কম। এ কারণে দাম একটু বেশি। আর মাল্টাও আমদানি হচ্ছে কম। আপেলের সরবরাহও তুলনামূলক কম। আবার রোজাও চলে এসেছে। সাধারণত অন্য সময়ের তুলনায় রোজায় ফলের চাহিদা একটু বেশি থাকে। সবকিছু মিলেই আসলে এখন ফল একটু বেশি দাম বিক্রি হচ্ছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে ফলের দাম একটু কমতে পারে। অবশ্য খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না।

খিলগাঁওয়ে ২০০ টাকা কেজি কমলা ও ২১০ টাকা কেজি সবুজ আপেল বিক্রি করা সাহবুদ্দিন বলেন, রোজার কারণে কয়েকদিন ফলের বাজার অনেক চড়া। আড়তে গিয়ে ফল দরদাম করে কেনার মতো নেই। দরদাম করতে গেলে কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলে বসেন- যান আপনার কাছে ফল বিক্রি করবো না। এখন দাম বেশি হলেও আমাদের ধারণা ১৫ রোজা যাওয়ার পর সব ধরনের ফলের দাম কমবে।

এমএএস/এমআরএম/এএসএম