রাজশাহীতে রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে পেঁয়াজের চাষ। এদিকে উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারে দাম কমেছে পেঁয়াজের। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানাচ্ছে, গত পাঁচ বছরে রাজশাহী জেলায় প্রায় ১ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে করে পেঁয়াজের চাষ বেড়েছে। এতে বৃদ্ধি পেয়েছে উৎপাদনও। ভালো ফলন হওয়ায় পেঁয়াজে লাভের মুখ দেখেছেন চাষিরা।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ সালে পেঁয়াজের চাষ হয়েছিল ১৫ হাজার ৫৮৬ হেক্টর জমিতে। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৩২২ মেট্রিক টন। গড় ফলন ১৩ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর। ২০১৭-১৮ সালে আবাদ হয়েছিল ১৪ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ৪ হাজার ৫৩৩ মেট্রিক টন। গড় ফলন ১৩ দশমিক ৮৭ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর যা আগের বছরের তুলনায় ৮৫০ হেক্টর কম জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। আর তাই উৎপাদন কম হয়।
পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে আবাদ হয় ১৫ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে। ওই সময় উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩৬২ মেট্রিক টন। গড় ফলন ১৪ দশমিক ৫৬ মেট্রিক টন প্রতি হেক্টর। এবার আগের বছরের তুলনায় ৫৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ বৃদ্ধি পায়। এবছর উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৮২৯ মেট্রিক টন।
এদিকে ২০১৯-২০ সালে চাষাবাদ ও উৎপাদন আবারো বৃদ্ধি পায়। এবছরে পেঁয়াজের চাষ হয় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে। অন্যদিকে উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ মেট্রিক টনে যা আগের চেয়ে ৬০ হাজার ৪৩৭ মেট্রিক টন।
Advertisement
২০২০-২১ সালের দিকে পেঁয়াজের আবাদ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এবছর এক হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ বাড়ে। জেলায় মোট ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়। এসময় উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৬ হাজার ১৩৯ মেট্রিক টনে। ২০-২১ সালে গড় উৎপাদন আসে ১৭ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন। বিগত চার বছরের আগের তুলনায় এক লাখ ১৬ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যা ছিল রেকর্ড পরিমাণ।
এদিকে ২০২১-২২ সালে পেঁয়াজের আবাদ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানায় রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এবছর প্রায় ১৮ হাজার ৮৮১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি দপ্তর। এবছর পেঁয়াজের সাম্ভাব্য উৎপাদন ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ মেট্রিক টন। মাঠে এখনো পেঁয়াজের পর্যাপ্ত চাষ চলমান রয়েছে এবং এখনো পুরোপুরিভাবে পেঁয়াজ উত্তোলন না হওয়ায় পেঁয়াজের উৎপাদন আগের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে বলেও ধারণা করছে কৃষি দপ্তর।
দূর্গাপুর হাটকানপাড়া বাজার এলাকার চাষি শান্ত সরকার বলেন, এক বিঘা পেঁয়াজ লাগাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এক বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ৭০ মণ। এসব পেঁয়াজ হাটে বিক্রি করেছি মণ প্রতি এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। দিন শেষে খরচ বাদে লাভের খাতায় যোগ হয়েছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
একই এলাকার নূর ইসলাম নামের আরেক চাষি জানান, পেঁয়াজের দাম সব সময় বেশি থাকার কারণে এবার প্রায় ২০ কাঠা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছিলাম। কিন্তু দুতিন সপ্তাহ আগে যে দাম ছিল, বর্তমানে তা নেই। তবে ফলন ভালো হওয়ায় দামে বেশ পুষিয়ে গেছে। মোটামুটি খরচ বাদে প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লাভ হয়েছে।
Advertisement
পেঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধির বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, দেশে কিছুদিন আগেই পেঁয়াজের ঘাটতির কারণে আকাশচুম্বি দাম বেড়েছিল। যার কারণে বিগত দিনের তুলনায় পেঁয়াজের চাষ ব্যাপক হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, আমাদের সরকার পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে গত দুবছর ধরে প্রণোদনা দিচ্ছে। এছাড়াও কৃষকদের বারি-৫ প্রজাতির পেঁয়াজ চাষ করছেন যা মূলত গ্রীষ্মকালেও আবাদ হয়। মূলত এসব কারণে পেঁয়াজের আবাদ ও উৎপাদন তুলনামূলক অনেকগুণ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের প্রণোদনার পাশাপাশি আমরাও পেঁয়াজ চাষিদের কৃষিতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি। যার কারণে বর্তমানে পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় অবস্থানে আসতে সক্ষম হয়েছে। তবে পেঁয়াজের আবাদযোগ্য জমি না বাড়িয়ে আমরা বারি-৫ জাতের পেঁয়াজ চাষে কৃষকদের বেশি উৎসাহিত করছি। কারণ এ জাতের পেঁয়াজ চাষে খরচ কম এবং এটি শুষ্ক মৌসুমেও দারুণ চাষ হয়।
ফয়সাল আহমেদ/এমএমএফ/এএসএম