আল্লাহর কাছে জুমার দিনের মর্যাদা ও সম্মান অনেক বেশি। তিনি মানুষকে জুমার দিন তাঁর স্মরণ ও বিশেষ আমলের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন আবার জুমার দিনের বিশেষ কল্যাণ প্রাপ্তি ও গুনাহ মফের ঘোষণা দিয়েছেন এভাবে-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ - فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দ্রুত বেরিয়ে পড়ো এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর; যদি তোমরা বুঝতে পারো। এরপর (জুমার) নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর; যাতে তোমরা (তোমাদের কাজ ও চাহিদায়) সফলকাম হতে পারো।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)
Advertisement
কোরআন-সুন্নাহর দিকনির্দেশনায় জুমার দিন মুমিন বান্দার জন্য গুনাহ মাফের এবং অনেক কল্যাণ পাওয়ার দিন। কেননা আল্লাহ তাআলার মর্যাদাপূর্ণ দিনসমূহের মধ্যে জুমা বিশেষ মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য বহন করে। আল্লাহ তাআলা বিশেষ মর্যাদার কারণে এ দিন মানুষের গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং কল্যাণ দান করেন। হাদিসের বর্ণনা থেকে প্রমাণিত কারণগুলো হলো-
১. মর্যাদার দিন জুমানবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিঃসন্দেহে দিনসমূহের মধ্যে জুমা সেরা দিন ও আল্লাহর কাছে সর্বোত্তম দিন। আল্লাহ তাআলার কাছে তা ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিনের চেয়েও উত্তম।’ (ইবনে মাজাহ)
তিনি আরো বলেছেন, ‘যেসব দিনগুলোতে সূর্য উঠে; তন্মধ্যে সর্বোত্তম দিন জুমা। এ দিনেই আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং এ দিনেই তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল আর এ দিনেই জান্নাত থেকে তাকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠানো) হয়েছিল।’ (মুসলিম)
Advertisement
২. ঈদের মর্যাদাপূর্ণ দিনের সমতুল্যহজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তিনি যখন এ আয়াতটি তেলাওয়াত করেন- ‘তখন তার কাছে একজন ইয়াহুদি ছিল। সে বলল, যদি আয়াতটি আমাদের ওপর নাজিল হতো তাহলে আমরা দিনটিকে ঈদের দিন বানিয়ে নিতাম। এরপর ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আয়াতটি ঈদের দিনেই নাজিল হয়েছে (আর তা ছিল) জুমার দিন ও আরাফার দিন।’ (তিরমিজি)
৩. গুনাহ মাফের বিশেষ দিননবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘এক জুমা থেকে অপর জুমা; উভয় জুমার মাঝে (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারা হয়ে যায়, যদি কবিরা (বড়) গুনাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত না হয়ে থাকে।’ (মুসলিম)
৪. বছরজুড়ে নামাজ-রোজার সওয়াব পাওয়ার দিননবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমা’র দিন ভালো করে গোসল করে আগে আগে মসজিদে আসবে এবং ইমামের কাছাকাছি হবে এবং মনোযোগ দিয়ে (খুতবা) শুনবে এবং চুপ থাকবে তার জুমার নামাজে আসার প্রতি কদমে এক বছরের নামাজ ও রোজা পালনের সওয়াব হবে।’ (তিরমিজি, নাসাঈ)
৫. দোয়া কবুলের দিননবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয়ই জুমার দিন এমন একটি সময় আছে; যে সময়ে কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে কোনো ভালো জিনিসের প্রার্থনা করলে তিনি তাকে তা দান করেন। তিনি বলেন, তা সামান্য সময় মাত্র।’ (বুখারি ও মুসলিম); কেউ কেউ বলেন, এটি আসরের নামাজের পরের সময়।
Advertisement
৬. ইবাদতের বিশেষ দিন জুমানবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘জুমা থেকে আল্লাহ আমাদের আগের উম্মতকে বিভ্রান্ত করে রেখেছিলেন। ফলে ইয়াহুদিদের জন্য ছিল রোববার। এরপর আল্লাহ আমাদের নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের জুমার দিনের জন্য পথ দেখিয়েছেন এরপর শনি তারপর রোববার। এমনিভাবে কেয়ামতের দিনও তারা আমাদের পরে হবে। দুনিয়ার অধিবাসীদের মধ্যে আমরা সবার পরে এবং কেয়ামতের দিন আমাদের ফয়সালা হবে সাবার আগে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
৭. ফেতনা মুক্তির দিন জুমানবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো মুসলিম যদি জুমার দিন অথবা জুমার রাতে মৃত্যুবরণ করে তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে কবরের ফেতনা থেকে হেফাজত করবেন।’ (তিরমিজি)
সুতরাং মুমিন মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ ও এ দিনের ইবাদত-বন্দেগি এবং আমল অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা জুমার গুরুত্ব কোরআনে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরেছেন-يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِي لِلصَّلَاةِ مِن يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ - فَإِذَا قُضِيَتِ الصَّلَاةُ فَانتَشِرُوا فِي الْأَرْضِ وَابْتَغُوا مِن فَضْلِ اللَّهِ وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيراً لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত বের হও এবং বেচাকেনা বন্ধ কর। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম যদি তোমরা বুঝ। এরপর নামাজ শেষ হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা : আয়াত ৯-১০)
মনে রাখতে হবেজুমার দিন নামাজ থেকে বিমুখ হয়ে খেলাধুলা, ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা পার্থিব কোনো কাজ-কর্মে নিজেকে ব্যস্ত থাকা যাবে না। যারা আল্লাহর এ নির্দেশ থেকে বিমুখ থাকে; আল্লাহ তাআলাও তাদের দিক থেকে বিমুখ থাকেন। অর্থাৎ সে ব্যক্তির কোনো ইবাদাত-বন্দেগি আল্লাহর তাআলার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে এটা অনেক বড় অভিসম্পাত। কুরআনুল কারিমের অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ কথা এভাবে তুলে ধরেছেন-‘তারা যখন কোনো ব্যবসায়ের সুযোগ অথবা ক্রীড়াকৌতুক দেখে; তখন আপনাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে তারা সেদিকে ছুটে যায়। (হে রাসুল) আপনি বলে দিন, আল্লাহর কাছে যা আছে (ছাওয়াব ও নৈকট্য লাভে), তা ক্রীড়াকৌতুক ও ব্যবসায় অপেক্ষা উৎকৃষ্ট। আল্লাহ সর্বোত্তম রিযিকদাতা।’ (সুরা জামআ : আয়াত ১১)
কুরআনে আয়াত নাজিলের পরও হাদিসে বিশেষভাবে জুমা থেকে বিরত না থাকার ব্যাপারে তাগিদ দেওয়া হয়েছে এভাবে-হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমার নামাজ হতে বিমুখ থাকে এবং খেলাধুলা ও ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত থাকবে আল্লাহ তাআলা তার থেকে বিমুখ থাকবেন। আল্লাহ স্বয়ং সমৃদ্ধ এবং অধিক প্রশংসিত। (দারাকুতনি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিন দুনিয়ার সব কাজ-কর্ম, খেল-তামাশা, ক্রীড়াকৌতুক, ব্যবসা-বাণিজ্য পরিহার করে নামাজের প্রতি মনোযোগী হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসে সরাসরি জুমা পরিত্যাগকারীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে।
তাই আল্লাহর অভিশাপ ও উত্তম রিযিক থেকে বঞ্চিত না হতে উম্মতে মুহাম্মাদির সব সময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ জুমার প্রতি গুরুত্বরোপ করা জরুরি। আল্লাহর ঘোষণা তিনি জুমা পালনকারীদের জন্য রেখেছেন সর্বোত্তম রিজিক, গুনাহ থেকে মুক্তি এবং অসংখ্য কল্যাণ।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর বিধান পালনে যথা সময়ে জুমার নামাজ আদায়ের প্রতি যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন। গুনাহমুক্ত কল্যাণকর জীবন পাওয়ার তাওফিক দান করুন। কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস