দেশজুড়ে

চিনিকল না থাকায় সাতক্ষীরার আখে তৈরি হচ্ছে গুড়

একযুগ আগেও সাতক্ষীরা জেলার তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় কয়েক জাতের আখ চাষ হতো। তবে এ অঞ্চলে কোনো চিনিকল না থাকায় সেই আখের বড় একটি অংশ দিয়ে তৈরি হতো গুড় ও পাটালি। স্থানীয় হাট-বাজারে অল্প দামে মিলতো ভাড় ভর্তি আখের গুড়।

Advertisement

তবে জলবায়ু পরিবর্তন ও বাজারদর পড়ে যাওয়ায় ২০০৯ সালের পর থেকে সাতক্ষীরা জেলায় কমতে থাকে আখ চাষ। কৃষি জমিতে দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতা, লবণাক্ততা বৃদ্ধিসহ নানা কারণে কৃষকরা আখ চাষ একেবারে কমিয়ে দেন। সম্প্রতি আমদানি করা বিটের চিনির বিকল্প হিসেবে আখের চিনি ও গুড়ের চাহিদা বৃদ্ধিতে নতুন করে জেলায় আখ চাষ বাড়ছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি বিভাগ। আর কৃষকরা বলছেন, উৎপাদিত আখ চিনিকলে বিক্রি করতে পারলে তারা লাভবান হবেন। পাশাপাশি আরও বাড়বে আখ চাষ।

তালা উপজেলার ইসলামকাটি এলাকার কৃষক মাহমুদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আখ চাষের উপযোগী। ২০১১ সালের আগে আমাদের এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জমিতে আখ চাষ হতো। সাতক্ষীরা জেলার সবচেয়ে বেশি আখ চাষ হতো আমাদের ইউনিয়নে। কিন্তু পলি জমে ভরাট হওয়া কপোতাক্ষ নদ দিয়ে বৃষ্টির পানি সরতে না পারায় বিলগুলোতে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। সেসময় শতশত কৃষকের মাঠের আখ ও বীজ নষ্ট হয়ে যায়। সেসময় বছরের প্রায় ছয়মাস জলাবদ্ধতা থাকতো। এখন কপোতাক্ষ নদ খনন করা হয়েছে। জলাবদ্ধতা কমেছে। কিন্তু আগের মতো আর আখ চাষ হচ্ছে না। তবে বাজারে আখের গুড়ের চাহিদা বাড়ায় নতুন করে অনেকে আখ চাষ শুরু করেছেন।

তালা উপজেলার কুমিরা ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের গ্রামে লতাজাবা, কাঁটোরা, লোহারডান্ডি জাতের আখ চাষ বেশি হয়। তবে এখন কেউ কেউ কুশোরি জাতের আখও চাষ করছেন। সম্প্রতি এখানে লবণ সহিষ্ণু কিছু জাতের আখের চাষ করে সফলতা মিলেছে।

Advertisement

তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় চিনিকল নেই। ফলে এসব আখ থেকে গুড় ও পাটালি তৈরি হয়। বাজারে এর প্রচুর চাহিদা, দামও ভালো। এজন্য চাষিরা আখ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

দেবহাটা উপজেলার হাদিপুর গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আগে আমাদের গ্রামে শুধু চিনিচাপা জাতের আখ চাষ হতো। এই আখ মূলত চিবিয়ে ও রস করে খাওয়া হয়। এখন জমিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় আখের চাষ কমে যাচ্ছে। সম্প্রতি পাবনা আখ গবেষণা ইনস্টিটিউটের লবণ সহিষ্ণু নতুন জাত ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। এ জাতের আখ চাষে কৃষকরা এরই মধ্যে সফল হয়েছেন।

তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা এলাকার আখ চাষি জামাল উদ্দীন বলেন, আখ চাষে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কেবল আখ বিক্রি করে বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। তবে চিনিকলগুলোতে সরাসরি আখ বিক্রি করতে পারলে আমাদের লাভ বেশি হতো। এখান থেকে কোনো চিনিকলে আখ বিক্রি হয় না। চিনিকলগুলো অনেক দূরে হওয়ায় কৃষকের পক্ষে সেখানে আখ পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিষয়ে সরকারি উদ্যোগের দাবি জানান তিনি।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে উপ-পরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা অঞ্চলে আখ উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরইমধ্যে জেলায় লবনসহিষ্ণু জাতের আখ চাষ বাড়ছে।

Advertisement

তিনি বলেন, দূরত্ব বেশি হওয়ার ফলে চিনিকলগুলোতে এখানকার কৃষকরা আখ বিক্রি করতে পারেন না। এ বিষয়ে জেলা কৃষি বিভাগ থেকে চিনিকলগুলোতে যোগাযোগ করা হবে। জেলায় গত বছর ১৫০ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। এবছর সেটি বেড়ে চাষ হয়েছে প্রায় ১৭০ হেক্টর জমিতে।

আহসানুর রহমান রাজীব/এমআরআর/জেআইএম