তথ্যপ্রযুক্তি

১০৬৪৫ কোটি টাকার তরঙ্গ কিনলো চার অপারেটর

ফাইভজিসহ অন্যান্য সেবার মানোন্নয়নে দুই ব্যান্ডে ১০ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার তরঙ্গ (স্প্রেকট্রাম) কিনেছে চার মোবাইল অপারেটর।

Advertisement

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আয়োজনে বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অনুষ্ঠিত নিলামে অংশ নিয়ে এ তরঙ্গ কিনেছে টেলিটক, গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংক।

নিলামে টেলিটক ২৩শ’ (২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ) ব্যান্ডে ১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকায় তিনটি ব্লকে ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে। রবি ২৬শ’ (২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ) ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। গ্রামীণফোন ২৬শ’ ব্যান্ডে ৬টি ব্লকে ৩ হাজার ৩৬০ কোটি টাকায় কিনেছে ৬০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ। বাংলালিংক ২৩শ’ (২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ) ব্যান্ডে ৪টি ব্লকে ৪০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে ২ হাজার ২৪১ কোটি টাকায়। দুই ব্যান্ডে মোট ১৯০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে চার অপারেটর।

আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সময়োপযোগী, অর্থনৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য ও কারিগরিভাবে বাস্তবসম্মত উপায়ে বাংলাদেশে ৫জি সেবা চালুর জন্য ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ, ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ও ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ড তিনটি নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় টেলিটকের মাধ্যমে ৩ দশমিক ৫ গিগাহার্টজ ব্যান্ডে ৫জি সেবা পরীক্ষামূলক চালুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Advertisement

গ্রাহক সেবার মান উন্নত করার বিষয়টি বিবেচনার পাশাপাশি মোবাইল অপারেটরদের তরঙ্গ চাহিদা, বাজার পরিস্থিতি ও বৈশ্বিক অবস্থা এবং সর্বোপরি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন থেকে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের বরাদ্দযোগ্য ১০০ মেগাহার্টজ (১০ মেগাহার্টজের ১০টি ব্লক) এবং ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের বরাদ্দযোগ্য ১২০ মেগাহার্টজ (১০ মেগাহার্টজের ১২টি ব্লক) তরঙ্গ নিলামে বরাদ্দের জন্য গত ৩ মার্চ নির্দেশিকা জারি করা হয়। এতে তরঙ্গ ব্যান্ডের ভিত্তিমূল্য, মেয়াদ, পরিশোধ পদ্ধতি, নিলাম সংশ্লিষ্ট অন্যান্য চার্জসহ তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুক মোবাইল অপারেটরদের জন্য সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা সন্নিবেশিত করা হয়।

এবারের নিলামে ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ও ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গ মোবাইল অপারেটরদের অনুকূলে বরাদ্দের জন্য ১৫ বছরের জন্য প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সরকারের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রে অপারেটরকে নতুন প্রাপ্ত তরঙ্গের মোট অধিগ্রহণ মূল্যের ১০ শতাংশ ৩০ জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে সংশ্লিষ্ট অপারেটরকে ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে মূল তরঙ্গ বরাদ্দপত্র কমিশন থেকে নিতে হবে। তরঙ্গ বরাদ্দপত্র জারির দিন থেকে প্রতি এক বছর অন্তর বাৎসরিক ১০ শতাংশ হারে বাকি ৯০ শতাংশ চার্জ ৯টি কিস্তিতে ৯ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তরঙ্গের মেয়াদ প্রাথমিকভাবে জি লাইসেন্স মেয়াদ তথা ২০৩৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এক্ষেত্রে সমন্বিত মোবাইল লাইসেন্স জারির পর প্রযোজ্য ফি পরিশোধ সাপেক্ষে তরঙ্গের মেয়াদ ১৫ বছরের জন্য বাড়ানোর সুযোগ রাখা হয়েছে।

নিলামে প্রাপ্ত সর্বশেষ ফলাফল অনুযায়ী, আজকের চূড়ান্ত নিলাম মূল্য ১৫ বছরের জন্য ৬ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণফোন ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্টজ, রবি ২ দশমিক ৬ গিগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে ৬০ মেগাহার্টজ, বাংলালিংক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে ৪০ মেগাহার্টজ এবং টেলিটক ২ দশমিক ৩ গিগাহার্টজ ব্যান্ড থেকে ৩০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বরাদ্দ নিয়েছে। ১৫ বছরের জন্য যার মূল্য ১ হাজার ২৩৫ (ভ্যাট ছাড়া) মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যার পরিমাণ বাংলাদেশি টাকায় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৬৪৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

অপারেটরভিত্তিক তরঙ্গের সর্বশেষ হিসেবে গ্রামীণফোনের মোট একসেস তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজ থেকে ১০৭ দশমিক ৪০ মেগাহার্টজে উন্নীত হবে। রবির মোট একসেস তরঙ্গ ৪৪ মেগাহার্টজ থেকে ১০৪ মেগাহার্টজে উন্নীত হবে। বাংলালিংকের মোট একসেস তরঙ্গ ৪০ মেগাহার্টজ থেকে ৮০ মেগাহার্টজে উন্নীত হবে। টেলিটকের মোট একসেস তরঙ্গ ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ থেকে ৫৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজে উন্নীত হবে।

Advertisement

নিলাম অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার।

পরে সংবাদ সম্মেলনে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, গ্রাহকরা সেবার মান নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন, নতুন বরাদ্দ দেওয়া তরঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে তা আর থাকবে না। পাশাপাশি এ তরঙ্গ ফাইভজি তথা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত করবে।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান বলেন, বরাদ্দ করা তরঙ্গ ব্যবহারে ইকোসিস্টেম তৈরির জন্য আগামী ৯ মাসের মধ্যে অপারেটরদের প্রস্তুত হতে হবে।

নিলাম অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নিলাম পরিচালনা করেন সিস্টেম অ্যান্ড সার্ভিসেস বিভাগের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাসিম পারভেজ।

এইচএস/এমএএইচ/জেআইএম