বিশেষ প্রতিবেদন

৫ বছরে ১ কোটি সাড়ে ১১ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি

দেশের চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর প্রায় ৯৬ শতাংশ চিনি আমদানি করতে হয়। গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে এক কোটি সাড়ে ১১ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত চিনি। ব্যক্তিখাতের পাঁচ শিল্পগ্রুপ এর আমদানিকারক। মোট আমদানির ৭১ শতাংশই চিনি শিল্পের জায়ান্ট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিটি ও মেঘনা গ্রুপের। অবশিষ্ট বাজার রয়েছে এস আলম, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও দেশবন্ধু সুগার মিলের হাতে।

Advertisement

জানা যায়, দেশে বছরে কমবেশি ১৮ থেকে ২০ লাখ টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় চিনিকলগুলো থেকে আসে ৫০ থেকে এক লাখ টনের মতো। চলতি অর্থবছর এর পরিমাণ আরও কম। অবশিষ্ট চিনি আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে (২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২১) দেশে এক কোটি ১১ লাখ ৫২ হাজার ৫৬০ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৪৭ শতাংশ আমদানি করেছে সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এই সময়ে ৪৪ লাখ ২ হাজার ১৯২ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ৩৬ শতাংশ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে মেঘনা গ্রুপ। মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও ইউনাইটেড সুগার মিলস লিমিটেডের নামে মেঘনা গ্রুপ আমদানি করেছে ৩৪ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৯ টন অপরিশোধিত চিনি। এছাড়া আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ১২ লাখ ২৮ হাজার ৩৮৯ টন, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৫ এবং দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৯ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেছে।

তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১ লাখ ৬১ হাজার ৯৭২ টন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২২ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮৮ টন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২২ লাখ ৩৮ হাজার ৮২৯ টন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ লাখ ৭০ হাজার ১৬৮ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২২ লাখ ৮৫ হাজার ৬০৩ টন অপরিশোধিত চিনি।

Advertisement

দেশের অন্যতম বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সারাদেশে ডিও (ডেলিভারি অর্ডার) প্রথার মাধ্যমে চিনি বিপণন করা হয়। কোনো চিনিই খাতুনগঞ্জের বাজারে আসে না। কারখানা মালিকের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে দ্বিতীয় সারির আড়তদাররা ডিও কিনে বাজারে তৃতীয় সারির ব্যবসায়ীদের (ডিও ব্যবসায়ী) কাছে বিক্রি করে। দ্বিতীয় সারির আড়তদার কিংবা তৃতীয় সারির ডিও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে জেলা উপজেলা পর্যায়ের মুদি দোকানি কিংবা খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ডিও কিনে কারখানাগুলো থেকে চিনি সংগ্রহ করে। এরপর মুদি দোকান হয়ে ভোক্তা পর্যায়ে চলে যায়।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে কারখানা হওয়ার সুবাধে খাতুনগঞ্জে বেশি চিনির সরবরাহ আসে এস আলম সুগার মিল থেকে। তাছাড়া সিটি ও মেঘনা গ্রুপের চিনির ডিও বাজারে পাওয়া যায়। গত সপ্তাহে কমলেও চলতি সপ্তাহে চিনির দাম বেড়েছে। খাতুনগঞ্জে বুধবার সকালে প্রতি মণ চিনি ২৭শ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ৬২০ থেকে ২ হাজার ৬৩০ টাকায়।

অন্যদিকে সরকারি ১৫টি সুগারমিলের উৎপাদন সক্ষমতা বার্ষিক প্রায় দুই লাখ টনের মতো। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা থাকে সোয়া লাখ টন উৎপাদনের। কিন্তু তাও উৎপাদন করতে পারে না সরকারি এসব প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ওই অর্থবছর ৮২ হাজার ১৪০ টন চিনি উৎপাদিত হয়েছে। তবে পরের ২০২০-২১ অর্থবছরে এ উৎপাদন ২৫ হাজার টনে নেমে এসেছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) পরিচালক (বাণিজ্যিক, যুগ্ম সচিব) মো. আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮২ হাজার টন চিনি উৎপাদিত হলেও এরপর সরকার ছয়টি চিনিকল বন্ধ ঘোষণা করে। ফলে বিগত অর্থবছর (২০২০-২১) অন্য ৯টি চিনিকল থেকে ২৫ হাজার টন উৎপাদন এসেছে।’

Advertisement

তিনি বলেন, সরকারি চিনিকলগুলোতে আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদন করা হয়। দেশে আখের ফলন অনেক কমেছে। চাহিদা অনুযায়ী আখ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন সরকারিভাবে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিএটি) সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। তারা (বিএটি) চিনিকলগুলো পরিদর্শন করেছে। চাহিদা অনুযায়ী উন্নত জাতের আখ ফলনের পরিকল্পনা নিচ্ছে তারা।’ তবে ‘র’ সুগার (অপরিশোধিত চিনি) রিফাইন করে চিনি উৎপাদন করার সুবিধা সরকারি চিনিকলগুলোতে নেই বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এএ/জেআইএম