আসন্ন রোজায় চিনির বাজার সহনীয় রাখতে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্কছাড় ১০ শতাংশ বহাল রেখেছে সরকার। সরকারি হিসাবে দেশে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ মেট্রিক টনের বেশি। যার সিংহভাগই আমদানি করে চিনি পরিশোধনকারী রিফাইনারি প্রতিষ্ঠানগুলো। খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও কিছু পরিশোধিত চিনি আমদানি করে। তবে কাস্টম ডিউটি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বেশি থাকায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীরা দ্বারস্থ হচ্ছে রিফাইনারির।
Advertisement
দেশের চিনি শিল্পের সুরক্ষায় সাধারণ সময়ে আমদানিতে ৩০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করা হয়। কিন্তু গত বছরের অক্টোবর মাসে চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সেই শুল্ক ২০ শতাংশে নামিয়ে আনে। তখন প্রজ্ঞাপনে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ১০ শতাংশ শুল্ক ছাড় আগামী ১৫ মে পর্যন্ত বহাল রাখার সিদ্ধান্ত সম্প্রতি জানিয়েছে রাজস্ব বোর্ড।
রিফাইনারি ছাড়া আমদানি করলে আগের মতো ৩০ শতাংশ হারে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিতে হচ্ছে খাদ্যপণ্য শিল্প উদ্যোক্তাদের। এতে রিফাইনারিগুলোর সুবিধা হলেও খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বিপাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চিনির চাহিদা। প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত দেশের চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান (রিফাইনারি) থেকে পরিশোধিত চিনি কেনে। মাঝে মধ্যে তারাও বিদেশ থেকে পরিশোধিত চিনি আমদানি করে। কাস্টম ডিউটি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক বেশি থাকায় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দ্বারস্থ হচ্ছে রিফাইনারির।
Advertisement
তারা বলছেন, পরিশোধিত চিনি যখন শিল্পপ্রতিষ্ঠান আমদানি করে কাস্টমে তখন মেট্রিক টনপ্রতি ছয় হাজার টাকা দিতে হয়। অন্যদিকে রিফাইনারিগুলোকে পরিশোধ করতে হয় তিন হাজার টাকা। রেগুলেটরি ডিউটি বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক রিফাইনারিগুলোকে দিতে হচ্ছে ২০ শতাংশ অথচ অন্যদের ৩০ শতাংশ। ফলে অসমতা তৈরি হয়েছে। রিফাইনারিগুলো মনোপলি ব্যবসা করছে।
এ বিষয়ে বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের জিএম তানজির হেলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘রিফাইনারিগুলো চিনির দাম নিয়ে এক ধরনের গ্যাম্বলিং করছে। রিফাইনারির জন্য যে নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক করা হয়েছে তা যদি সবার জন্য সমান থাকতো তাহলে মার্কেটটা স্টাবল পজিশনে থাকতো। চিনির দাম এত বেশি হতো না।’
তিনি বলেন, যেহেতু সরকার ক্রুড সুগারে (অপরিশোধিত চিনি) শুল্ক কমিয়েছে, এর সুবিধা পাচ্ছে রিফাইনারিগুলো। আমাদেরটা কমায়নি। ফলে ১০ টাকার মতো গ্যাপ হয়েছে যারা ক্রুড সুগার এনে রিফাইন করে তাদের সঙ্গে। ওরা এখন জানে যে আমাদের আমদানির সুযোগ কম। এ কারণে রিফাইনারিগুলো দাম বাড়িয়ে রাখছে।
তবে বিষয়টি মানতে নারাজ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্টরা। চিনির বাড়তি দামের পেছনে তারা রাশিয়া-ইউক্রেন সংকট, জলবায়ুসহ বিরূপ আবহাওয়া, করোনার প্রভাব ও সম্প্রতি জাহাজ ভাড়া কয়েকগুণ বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণের কথা বলছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির উৎপাদন ও দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ অবস্থায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পণ্যটি আমদানিতে পুনরায় ট্যাক্স কমানোর প্রস্তাব দিয়েছেন রিফাইনারি সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম রহমান বলেন, ‘৩০ শতাংশ থেকে রেগুলেটরি ডিউটি কমিয়ে যেটি ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে, সেটি আরও কমানোর প্রস্তাব দিয়েছি আমরা। একই সঙ্গে আগামী জুন পর্যন্ত এই সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছি।’
শুল্ক ছাড়ের বিষয়ে কারও প্রস্তাব থাকলে তা নিয়ে রাজস্ব বোর্ড আলোচনা করবে ও বিবেচনা করার কথা জানিয়েছেন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা।
শুল্ক ছাড়ের প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনা করা হবে জানিয়ে এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিক জাগো নিউজকে বলেন, আসন্ন রমজানে চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে আমরা আগের সিদ্ধান্ত আবারও কার্যকর করেছি। নতুন সিদ্ধান্ত ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে।
এসএম/এএ/জিকেএস