দেশজুড়ে

কিশোরগঞ্জ কালিয়াচাপড়া চিনিকল এখন ড্রাইভিং স্কুল!

এক সময় হাজার হাজার শ্রমিকের পদভারে মুখর ছিল কালিয়াচাপড়া চিনিকল। এখন সেখানে কেবলই নীরবতা। লেঅব ঘোষণার পর উৎপাদন অব্যাহত রাখতে শত একর আয়তনের বৃহত্তম এ ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানটি বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বেসরকারি মালিকানায়ও বেশিদিন ঘোরেনি মিলের চাকা।

Advertisement

নামমাত্র টাকায় কিনে নেওয়া হাজার কোটি টাকার এ মিলটিতে বর্তমানে নিটল-নিলয় গ্রুপ ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ স্কুল গড়ে তোলা হয়েছে। আখচাষের জমির চারদিকে উঁচু দেওয়াল তুলে নির্মাণ করা হচ্ছে কিশোরগঞ্জ ইকোনমিক জোনের (কেইজেড) স্থাপনা। অটো মোবাইল কোম্পানি, সিরামিক কোম্পানি, কাপড় তৈরি কারখানাসহ অপরিকল্পিত অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান করা হচ্ছে এখানে।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে কিশোরগঞ্জ-ভৈরব আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পাকুন্দিয়া উপজেলার মাইজহাটি এলাকায় কালিয়াচাপড়া চিনিকলটি অবস্থিত। দেশের অন্যতম প্রধান ভারী শিল্পকারখানা কিশোরগঞ্জের এই কালিয়াচাপড়া চিনিকল।

১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষণা করে। তবে ক্রমাগত লোকসানের মুখে ১৯৯৪ সালে মিলটি ‘লেঅব’ ঘোষণা করা হয়।

Advertisement

দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকার পর ২০০৪ সালে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়া হয় চিনি কারখানা, বাণিজ্যিক খামার ও জৈব সার কারখানা, অফিস ও আবাসন ভবনের সমন্বয়ে প্রতিষ্ঠিত বিশালায়তনের এ শিল্প কমপ্লেক্সটি। উৎপাদন অব্যাহত রাখার শর্তে এটি কিনে নেয় নিটল-নিলয় গ্রুপ।

স্থানীয় কৃষকদের দিয়ে আখচাষ করে মিলে চিনি উৎপাদন করা হবে এবং বছরের অবশিষ্ট সময় বিদেশ থেকে কাঁচামাল এনে উৎপাদন অব্যাহত রাখা হবে- এমন শর্তে মাত্র ১০ কোটি টাকা মূল্যে ১০০ একর আয়তনের মিল ও এর অধীনে থাকা জমি এবং স্থাপনা কিনে নেয় নিটল-নিলয় গ্রুপ।

তবে প্রথম দুই বছর সীমিত পরিসরে চিনি উৎপাদনের পর বন্ধ করে দেওয়া হয় মিলটি। মিলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেওয়া হয়। ইজারা চুক্তি ভঙ্গ করে সেখানে গড়ে তোলা হয় গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।

বেসরকারি মালিকানায় দেওয়ার পর স্থানীয় শ্রমিক ও আখচাষিরা আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু চিনিকলটি বন্ধ হওয়ায় সেখানে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও আখচাষিরা বিপাকে পড়েন।

Advertisement

মিলের সাবেক শ্রমিক ও আখচাষিরা জানান, বেসরকারি মালিকানা থেকে বিক্রি হওয়ার পর চুক্তিভিত্তিক লোকবল নিয়োগ দিয়ে দুই বছর সীমিত আকারে চিনি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু এরপরই মিলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্থানীয় কৃষকরা আখচাষ করতে রাজি নয় বলে অজুহাত দেখানো হয় তখন।

জেলা ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক মো. আ. রহমান বলেন, কালিয়াচাপড়া চিনিকলটি ছিল কিশোরগঞ্জসহ আশপাশের জেলার একমাত্র কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। এক সময় শত শত শ্রমিকের পদচারণায় মুখর ছিল এটি। মিলে চাকরি করে এবং আখচাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন হাজারো মানুষ। মিলটি বন্ধ হওয়ায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার।

তিনি বলেন, চুক্তির শর্ত ভেঙে মিলের বিশাল জমিতে ইপিজেড করা হচ্ছে। ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করা হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করায় মিলটি সরকারি মালিকানাধীনে ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানাই।

এসব বিষয়ে জানতে মিলে গেলে দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাপ্রধান মহব্বত হোসেনের সঙ্গে দেখা করে ইনচার্জ মাহবুব আলমের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু মাহবুব আলম কথা বলতে রাজি হননি।

নিরাপত্তাপ্রধানের মাধ্যমে তিনি জানান, এসব বিষয়ে কথা বলতে হলে কিংবা ভেতরের ছবি নিতে হলে চেয়ারম্যানের অনুমতি লাগবে।

নিটল-নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এফএ/জিকেএস