বিশেষ প্রতিবেদন

চিনিতে বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা, বছরে ব্যয় ৭ হাজার কোটি

সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে বছরে চিনির চাহিদা ১৮ লাখ টন। যদিও চিনি পরিশোধনকারী কোম্পানি ও ব্যবসায়ীরা মনে করেন এ চাহিদা আরও অনেক বেশি। দেশে সবশেষ কয়েক বছর গড়ে ২২ লাখ টনের বেশি চিনি আমদানি হয়েছে। এ আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে সাত হাজার কোটি টাকার বেশি।

Advertisement

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে দিন দিন বাড়ছে চিনির ব্যবহার। বাড়ছে চাহিদাও। এমন পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে উৎপাদন কমছে। চলতি মৌসুমে উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৯শ টন, যা এর আগের বছরও ছিল প্রায় দ্বিগুণ। মূলত ব্যাপক লোকসানকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে ছয়টি চিনিকলে উৎপাদন বন্ধ রাখায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেজন্য বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা, যা পূরণ করছেন বেসরকারি আমদানিকারকরা।

আমদানিকারকরা বলছেন, তারা ঘাটতি মেটাতে ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করেন। সুনির্দিষ্টভাবে না জানাতে পারলেও তাদের ধারণা চলতি অর্থবছর ২২ থেকে ২৪ লাখ টন চিনি আমদানি হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে, সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ লাখ ৫৯ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ২৩ লাখ ১৩ হাজার টন চিনি। কাস্টমসের হিসাবে শুধু এর আমদানিমূল্য দাঁড়ায় সাত হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানি হয়েছিল ২০১৮ সালে ২৬ লাখ টন। সে সময় ব্যয় সাড়ে সাত হাজার কোটি পেরিয়েছিল।

Advertisement

দেশে উৎপাদন বাড়িয়ে এ আমদানি ব্যয় কমানো প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান। তিনি বলেন, দেশে উৎপাদন নেই বলে এত বেশি আমদানিনির্ভরতা। কিন্তু এ উৎপাদন বাড়ানোর সামর্থ্য আমাদের রয়েছে। বর্তমানে বন্ধ মিলগুলো বেসরকারি খাতে দেওয়া প্রয়োজন।

‘তাতে যেমন দেশের অর্থ দেশে থাকবে, তেমনি আখচাষি থেকে শুরু করে এ বৃহৎ শিল্প সংশ্লিষ্ট সবাই সুরক্ষা পাবে।’

অন্যদিকে, এবছর চিনি আমদানির পরিমাণের সঠিক তথ্য এখনো সরকারের কোনো দপ্তরে নেই। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে প্রায় ১৮ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত চিনির চাহিদা রয়েছে। রমজান মাসে এর চাহিদা তিন লাখ টন। দেশে গত দুই মাসে (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) ৪ লাখ ৮৮ হাজার টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ২ লাখ ৬০ হাজার টন বেশি।

মার্কিন কৃষি বিভাগের (ইউএসডিএ) ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিসের প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ চিনি আমদানিকারক দেশ।

Advertisement

সংস্থাটির গত এক দশকে (২০১১-২০) দেশে চিনি আমদানির চিত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, দশকের শুরুতে দেশের বাজারে ১৫ লাখ ৩৭ হাজার টন চিনি আমদানি হয়েছিল। দশকের মধ্যে এটাই খাদ্যপণ্যটির সর্বনিম্ন আমদানির রেকর্ড। এরপর থেকে ধারাবাহিক উত্থান-পতনের ভেতর দিয়ে গেছে চিনির আমদানি বাজার। ২০১৪ সালে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো চিনি আমদানির পরিমাণ ২০ লাখ টন ছাড়ায়। ২০১৮ সালে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চিনি আমদানির রেকর্ড হয়।

এনএইচ/এএ/জিকেএস