জন্মেছেন তিনি শিল্প ও সংস্কৃতি চর্চার পরিবেশেই। তার বাবা কে বি বিজয়েন্দ্র প্রসাদ একজন স্বনামধন্য চিত্রনাট্যকার। পরিবারে বাবা ও মায়ের দিক থেকে অনেকেই সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। সেই পরিবারের সন্তান হিসেবে কেউ সিনেমায় এসে নাম করতে তা তো স্বাভাবিক।
Advertisement
তবে অস্বাভাবিক বিষয়টি হলো এস এস রাজামৌলি তছনছ করে দিয়েছেন ভারতীয় সিনেমার বক্স অফিসের ইতিহাস। তার হাত ধরেই ভারত দেখেছে ১ হাজার কোটি টাকার সিনেমার মুখ। ২০১৫ সালে তার পরিচালিত ‘বাহুবলী’র প্রথম পর্ব বাজিমাত করে দিয়েছিল। প্রথম কোনো সিনেমা হিসেবে ভারতকে ১ হাজার কোটি আয়ের রেকর্ড উপহার দিয়েছে এ ছবি।
২০০১ সালে সিনেমা পরিচালক হিসেবে যাত্রা করেন রাজামৌলি। তার প্রথম পরিচালিত সিনেমার নাম ‘নাম্বার ওয়ান স্টুডেন্ট’। তবে ২০০৫ সালে তিনি রবি তেজাকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘বিক্রমারকুডু’। এ ছবিটি রাজামৌলিকে হিট পরিচালক হিসেবে পরিচিতি এনে দেয়। এই ছবিটির সাফল্য দেখে তামিল, তেলেগু ভাষায় রিমেক করা হয়। বলিউডে অক্ষয় কুমার করেন ‘রাউডি রাঠৌর’। সেই ধারবাহিকতা নিয়ে ২০০৯ সালে রাজামৌলি পরিচালনা করেন ‘মাগাধিরা’ ছবিটি। রাম চরণ ও কাজল আগারওয়ালকে নিয়ে ঐতিহাসিক-রোমান্টিক ঘরানার এই সিনেমা প্রায় ৮০ কোটি রুপি ব্যবসা করে হইচই ফেলে দিয়েছিল। ছবিটি তামিলের সবচেয়ে বেশি আয় করা সিনেমা হিসেবে নাম লেখায়।তবে রাজামৌলির রাজকীয় উত্থান ২০১৫ সালে। ‘বাহুবলী’ সিনেমা নির্মাণের মধ্য দিয়ে। এর মাধ্যমে শুধু ভারতবর্ষ নয়, গোটা বিশ্বকেই মাতিয়েছিলেন তিনি। নিজেকে হিটমেশিন ডিরেক্টর হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেন। ভিএফএক্স প্রযুক্তির এমন প্রয়োগের মাধ্যমে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি। তার হাত ধরেই অভিনেতা প্রভাস হয়ে ওঠেন ‘বাহুবলী’। আর রাজামৌলিও হয়ে ওঠেন কোটি কোটি সিনেপ্রেমীর কাছে প্রিয় একটি নাম।২০১৭ সালে ‘বাহুবলী’র শেষ পর্বের গল্পটা আরও সাফল্যে ভরপুর। সেই সাফল্যের গল্প এবার নতুন করে যেন লিখতে চলেছেন রাজামৌলি ‘আরআরআর’ সিনেমা দিয়ে। ছবিটি মুক্তির ৫ দিনেই ৬০০ কোটি রুপি আয় ছাড়িয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই ছবিটি ২ হাজার কোটি রুপি আয়ের পথে হাঁটছে।
এর ফলে ভারতের সর্বোচ্চ আয়ের তালিকায় প্রথম তিনটি সিনেমাই এখন রাজামৌলি পরিচালিত। যা ভারত তো বটেই, বিশ্বের জন্যই এক বিরল রেকর্ড। কোনো দেশের একজন নির্মাতার নামের পাশে এমন সাফল্য নেই।
Advertisement
এস এস রাজামৌলি পরিচালিত প্যান ইন্ডিয়ান সিনেমা ‘আরআরআর’ মুক্তির প্রথম দিনেই হল থেকে আয় করেছিল ২৪০ কোটি রুপিরও বেশি। বিশ্বের প্রায় ৮ হাজার হল থেকে এই আয় ঘরে তুলে সিনেমাটি। এবার পঞ্চম দিনে এসে সিনেমাটি বক্স অফিসের বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙেছে। গড়েছে নতুন রেকর্ড। সামনে হয়তো আরও নতুন রেকর্ড গড়ার অপেক্ষায় ট্রিপল আর।আপাতত এটি ভারতের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে উঠেছে। শীর্ষ দুই অবস্থানে আছে যথাক্রমে ‘বাহুবলী টু: দ্য কনক্লুশন’ এবং ‘বাহুবলী: দ্য বিগিনিং’। সর্বোচ্চ আয়ের তালিকায় প্রথম তিনটি সিনেমারই পরিচালক রাজামৌলি। যদি ‘আরআরআর’ ‘বাহুবলী’ সিরিজকে টপকে যায় তবে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙবেন এই পরিচালক।
‘আরআরআর’, ‘বাহুবলী’র আগে ‘মাগাধিরা’, ‘ইগা’, ‘ছত্রপতি’র মতো জনপ্রিয় সব সিনেমা বানিয়েছেন রাজামৌলি। তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৬ সালে পেয়েছেন ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী।
এলএ/এএসএম
Advertisement