ফরিদপুরের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ আবাদে উপযোগী। দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনে ফরিদপুর দ্বিতীয়। ফরিদপুরে তিন ধরনের পেঁয়াজ চাষ হয়। মুড়ি কাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। সব মিলে এবার জেলায় প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন।
Advertisement
এ জেলায় উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশজুড়ে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে ফলন হয়েছে বাম্পার। কিন্তু দাম কম। ফলে ফরিদপুরে পেঁয়াজ চাষিরা ফলনে খুশি হলেও দামে বেজার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফরিদপুরের নয়টি উপজেলাতেই পেঁয়াজের আবাদ হয়। তার মধ্যে প্রথম সালথা ও দ্বিতীয় নগরকান্দা। এছাড়াও ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন, মধুখালী, বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও ফরিদপুর সদরেও ব্যাপক পেঁয়াজের চাষাবাদ হয়। পুরো জেলায় এবার পেঁয়াজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন পেঁয়াজ ক্ষেত নিয়ে পুরোপুরি ব্যস্ত। এপ্রিল মাসেই চাষিদের ঘরে উঠবে নতুন পেঁয়াজ।
Advertisement
বিভিন্ন এলাকার পেঁয়াজ চাষিদের ভাষ্যমতে, পেঁয়াজের রাজধানী সালথা উপজেলা। হালি পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে। দিন পনের পরই শুরু হবে পুরোপুরি। ফলন ভালো হলেও দামে অখুশি কৃষকরা।
এবার সালথায় ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, বৃষ্টির কারণে এ বছর পেঁয়াজের হালি লাগাতে দেরি হয়েছে।
একই গ্রামের জসিম মোল্যা বলেন, পেঁয়াজের ফলন ভালোই হবে। তবে প্রতি মণ পেঁয়াজের বাজার মূল্য কম পাচ্ছে কৃষকরা। পেঁয়াজ উৎপাদনে যে খরচ বর্তমান বাজারমূল্যে তাতে খুশি না কৃষক।
সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের ইউসুফদিয়া গ্রামের কাইয়ুম মোল্যা বলেন, এবার বিঘা প্রতি ৭০ থেকে ৮০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ সর্বোচ্চ ৮শ থেকে ৯শ টাকা। এরকম মূল্য থাকলে আমাদের লাভতো দূরে থাক আসল নিয়ে চিন্তা করতে হবে। বাজারদর ১২শ থেকে ১৫শ টাকা হলে কৃষক বাঁচবে।
Advertisement
কৃষক মো. আলম শেখ জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে ২৫ একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের বারি পেঁয়াজ-৪, লাল তীর পাঁচ একর এবং লাল তীর কিং এক একর জমিতে চাষ করেছি। পেঁয়াজ চাষে প্রচুর পরিমাণ সার, ওষুধ ও সেচের প্রয়োজন হয়। ফলে অন্য ফসলের চেয়ে পেঁয়াজে খরচ বেশি। এক মণ পেঁয়াজ উৎপাদন করতে সব মিলিয়ে খরচ হবে ৭ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা। বর্তমান বাজার মূল্যও তাই, তাহলে লাভ করবো কিভাবে?
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, চলতি মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল বারি পেঁয়াজ-৪, বারি পেঁয়াজ-৫, বারি পেঁয়াজ-১সহ বিভিন্ন জাতের পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
জেলার মধ্যে পেঁয়াজ চাষে অন্যতম উপজেলা সদরপুর। এ এলাকার চাষিরা অধিক পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ করে থাকেন। ফলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বিগত বছরগুলোতে পেঁয়াজ আবাদ করে বেশ লাভবান হচ্ছিলেন এ অঞ্চলের চাষিরা।
চরভদ্রাসন উপজেলায় এ মৌসুমে ৬৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে চরভদ্রাসন সদর ইউনিয়নে ১৫৭ হেক্টর, গাজিরটেকে ২৭১, চর হরিরামপুরে ১৪৫ ও চর ঝাউকান্দায় ৭৭ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছেন কৃষকরা। উপজেলার চর ঝাউকান্দা বাদে অন্য তিনটি ইউনিয়নে এ বছর ১৬০ হেক্টর জমিতে দানা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
এ ব্যাপারে সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান কুমার রায় জাগো নিউজকে জানান, এ বছর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৬৬৩ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। পেঁয়াজ চাষিদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় এনে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে সার, বীজসহ বিভিন্ন ধরনের কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে পেঁয়াজের বাজার দর নিম্নমুখী। ক্ষতি পোষাতে কৃষকদের কিছুটা বেগ পেতে হবে।
এ ব্যাপারে সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জীবাংশু দাস জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর উপজেলায় হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১২ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। হালি পেঁয়াজ আবাদের সময় ভারী বর্ষণে নিম্নাঞ্চলে পানি জমে থাকায় লক্ষ্যমাত্রার কম অর্জিত হয়েছে। তবে পেঁয়াজের ফলন ভালো হয়েছে। পেঁয়াজের আরেকটু দাম পেলে কৃষকের পক্ষে ভালো হতো।
এ বিষয়ে ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হজরত আলী জাগো নিউজকে বলেন, পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক দিয়ে ফরিদপুর জেলার অবস্থান দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। যার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৬ লাখ মেট্রিক টন। আবহাওয়া ভালো থাকলে এমনটি হবে বলে আমারা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, ফরিদপুরে পেঁয়াজের চাহিদা মাত্র ১৬ হাজার মেট্রিক টন। বাকি পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন স্থানের চাহিদা পূরণ করে থাকে। আমরা পেঁয়াজ চাষিদের বিভিন্ন সময় সরকারি প্রণোদনাসহ প্রশিক্ষণ ও সকল প্রকার পরামর্শ দিয়ে থাকি।
এফএ/জেআইএম