জাতীয়

ভূমিহীনদের ২৫ শতাংশ নিয়মিত খেতে পায় না, মৌসুমি দারিদ্র্য বড় বাধা

বাংলাদেশে বর্তমানে মৌসুমি দারিদ্র্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে ক্ষুদ্রঋণ। দেশের উত্তরাঞ্চলের তিন জেলা বিশেষত কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাটে মৌসুমি দারিদ্র্যের চিত্র সবচেয়ে বেশি প্রকট। এ জেলাসমূহে ভূমিহীন মানুষদের অন্তত ২৫ শতাংশ নিয়মিত খেতে পারেন না। একদিন কাজ না থাকলেই তাদের উপোস থাকতে হয়। অতিদারিদ্র্যের এ ছোবল থেকে অভিবাসন হতে পারে সমাধান। কিন্তু দীনদরিদ্র এসব মানুষদের হাতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তারা অভিবাসন সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হন।

Advertisement

হিমালয় অধ্যুষিত ভারতের সীমান্তঘেরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশ নেপালের মৌসুমি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। সেই টাকা নিয়ে তারা কাজের সন্ধানে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাড়ি জমায় এবং একটা সময় তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা ফেরে। বাংলাদেশের মৌসুমি দারিদ্র্য নিরসনে এ ধরনের পদ্ধতি চালু করা যেতে পারে। যদি কোনো মৌসুমি দরিদ্র ব্যক্তির হাতে ৭ হাজার টাকা দেওয়া হয়, তবে তিনি এ টাকা থেকে ২৬ হাজার টাকা আয় করে ঘরে ফিরতে পারবেন।

সোমবার (২৮ মার্চ) রাজধানীর বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (বিআইডিএস) ‘সিজনাল পোভারটি, ক্রেডিট অ্যান্ড রেমিটেন্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলা থেকে মৌসুমি দারিদ্র্যের নানা নমুনা সংগ্রহ করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে ২০১৬ সালের জুলাই সময়কালে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রতিবেদনের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক।

Advertisement

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আহমেদ মুশফিক মোবারক বলেন, মৌসুমি দারিদ্র্য এখনো বাংলাদেশের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আমি যে ডেটাগুলা দেখালাম তাতে উত্তরবঙ্গের ২৫ শতাংশ মানুষ ঠিকমতো খেতে পারছেন না। যদি তিনবেলা খেতেও পায় তবুও খাবারের পরিমাণ কম। প্রোটিন পায় না তারা, নেই খাদ্য নিরাপত্তা। খাদ্যের যোগান নিয়ে তারা সব সময় উদ্বিগ্ন থাকেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, মৌসুমি দারিদ্র্যের এ অবস্থা নেপাল ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোও ব্যাপকভাবে চোখে পড়ে। বাংলাদেশে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে এ অবস্থা সবচেয়ে নাজুক।

উল্লিখিত তিনটি জেলার বর্তমান অবস্থাও একইরকম কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০২০ সালে প্যানডামিকের (করোনা মহামারিকালে) মধ্যেও ডেটা কালেক্ট করে দেখেছি। ২০০৭ সালে যে সমস্যা দেখা গেছে, ২০১৬ ও ২০২০ সালেও সে চিত্র একইরকম। ভূমিহীন দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর অন্তত ২৫ শতাংশ মানুষ তিনবেলা খেতে পায় না। এছাড়া সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর- বছরের এ তিন মাস ভূমিহীনদের ৫০ শতাংশই তীব্র খাদ্যসংকটে পড়েন।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুশফিক মোবারক বলেন, বছরের এ তিন মাস (সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর) কোনো কাজ থাকে না। এসময়ে ফসল মাঠে ধান পাকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কাজ না থাকলে মজুরিও কমে যায়। কারণ তখন শ্রমিকের অভাব থাকে না, কাজই শুধু কম থাকে।

মৌসুমি দারিদ্র্য নিরসন বিষয়ে তিনি বলেন, বছরের ওই তিন মাসের জন্য এ তিন জেলার ভূমিহীনদের শ্রমশক্তিকে অন্যান্য এলাকায় মাইগ্রেশন করতে হবে। এটা করতে অভাবগ্রস্তদের হাতে কিছু টাকা তুলে দিতে হবে। এটা লোন (ক্ষুদ্রঋণ) হিসেবেও দেওয়া যায়। তারা কাজ থেকে ফিরে সুবিধাজনক সময়ে সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করবে। তবে এ ক্ষুদ্রঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহিতাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে, এ ঋণের টাকা নিয়েই এ মানুষগুলো কাজের সন্ধানে ঘর ছাড়বে।

Advertisement

এসময় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক (ডিজি) বিনায়ক সেনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এমওএস/এমকেআর/এএসএম