মতামত

বিনামূল্যের পাঠ্যবইয়ে দামী অবহেলা

প্রতিবছর ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তক দিবস পালনের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক মাধ্যমিকের কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে সরকার বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক তুলে দেয়। নিঃসন্দেহে এটি এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। এত বড় একটি কাজ গত কয়েক বছর ধরে সরকার নিয়মিত করে যাচ্ছে এটিও প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু বইয়ের মান যদি ঠিক না থাকে, শিক্ষার্থীরা যদি ঠিকমত সেগুলো ব্যবহার করতে না পারে তাহলে শেষ পর্যন্ত সবকিছু কিন্তু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। ইতিমধ্যেই বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকের মান নিয়ে জোরালো প্রশ্ন উঠেছে। দাতা সংস্থা, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বইয়ের মান যাচাই শুরু করেছে। আমরা আশা করবো এ ব্যাপারে কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তাদের বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  ২০১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি ও দাখিল স্তরে প্রায় ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ কপি বই ইতিমধ্যেই বিনা মূল্যে পৌঁছে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এসব বইয়ের মান নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকেই প্রশ্ন উঠেছে। ছাপা, বাঁধাই, কাগজের মান সবকিছুই নিন্মমানের হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এই বই নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বইয়ের ছবি অস্পষ্ট, কালিও উঠে যাচ্ছে, চেহারা বোঝা যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রে। কাগজের মান খারাপ থাকায় একপৃষ্ঠার লেখা অন্য পৃষ্ঠায়ও দেখা যাচ্ছে। এতে কোনো পৃষ্ঠার লেখায়ই ঠিকমত বোঝা যাচ্ছে না। বাঁধাইও ঠিকমত হয়নি।সুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। কভার পেইজের কাগজের মানও ঠিক নেই।  শিশুরা স্বভাবসুলভ কারণেই চঞ্চল। তাদের হাতে এই নিন্মমানের কাগজের বই কতোদিন টিকবে এ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। ২০১১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সাদা কাগজে প্রাথমিকের চার রঙের বই ছাপা হচ্ছে। কিন্তু এ বছর দেশীয় মুদ্রাকররাই সব বই ছেপেছে। এ বছর বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণ ঠেকাতে দেশীয় ২২ মুদ্রাকর জোট বেঁধে অস্বাভাবিক কম দামে দরপত্রে অংশ নেন। বিদেশি প্রকাশনা সংস্থাকে ঠেকাতে ১২১ কোটি টাকা কম দর দিয়ে কাজ নেওয়া হয়। সেই কম দরই আসলে পুষিয়ে নেওয়া হয়েছে নিন্মমানের বই দিয়ে।দেশীয় মুদ্রাকররা বই ছাপবে তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কাজ হলে পাঠ্যবইয়ের মান সংরক্ষণ সম্ভব হতো। সিন্ডিকেট চক্রের কারণেই যে এটি সম্ভব হয়নি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মুদ্রাকররা নানা যুক্তি দেখালও প্রকারান্তরে তারা স্বীকার করছেন যে বইয়ের মান কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছেনি। এটি অস্বীকারের কোনো উপায়ও নেই। কারণ খালি চোখেই সবকিছু দেখা যাচ্ছে। ‘মুদ্রাকরেরা দরপত্রের শর্ত না মানলে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে।’-শিক্ষামন্ত্রীর এমন কথায় আসলে আশ্বস্ত হওয়ার সুযোগ কতটুকু?  বই ছাপা শেষ হয়েছে, তা বিতরণও করা হয়েছে। শাস্তি বলতে এখন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানা ও কালো তালিকাভুক্ত করা। এছাড়া নতুন করে বই ছেপে দেওয়া। এরমধ্যে কোনোটিই আসলে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক কাজে লাগবে না। তবে ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের গুরুতর অনিয়ম আর না হতে পারে সে জন্য কাঠোর শাস্তির কোনো বিকল্প নেই। দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে বাঁচাতে গিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের এত বড় একটি মহৎ উদ্যোগ স্বার্থান্বেষী মহলের কারণে ভেস্তে যাবে- এটি হতে দেওয়া যায় না। এইচআর/পিআর

Advertisement