চাষের অনুকূল অবস্থা থাকা সত্বেও এদেশে খুব অল্প পরিমাণ জমিতেই মাশকলাই আবাদ করা হয়। মাশকলাইয়ের ডাল মানুষের প্রিয় খাদ্য। এছাড়াও এটি পুষ্টিকর সবুজ পশু খাদ্য। জৈব সার এবং শিল্পের কাচাঁমালসহ বিবিধ উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয় বলেই দেশের সর্বত্রই অল্প হলেও মাশকলাই চাষ হয়। তবে শেরপুরের নকলা উপজেলার চরাঞ্চল খ্যাত চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের যেদিকে দৃষ্টি যায় সেদিকেই এখন শুধু মাশকলাই গাছের সবুজের সমারোহ চোখে পড়ে। মাশকলাই আবাদ করে অল্প খরচে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। এখনাকার উৎপাদিত মাশকলাইয়ের ডাল স্থানীয় চাহিদা পূরণ করেও পার্শ্ববর্তী কয়েক জেলার চাহিদা মেটাচ্ছে। মাশকলাই আবাদ নকলার চরাঞ্চলে নবযুগের সূচনা করেছে বলে জানিয়েছেন কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তরা। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাশকলাই চাষে খরচ খুবই কম। এটির তেমন পরিচর্চাও করতে হয় না। বীজ বুনে দিলেই ফলন হয়। সার-সেচও খুব একটা লাগে না। মাশকলাই আবাদে একর প্রতি খরচ হয় প্রায় দুই হাজার টাকা। কিন্তু ফলন মেলে একর প্রতি প্রায় ২০ মণ করে। প্রতি মণ মাশকলাইয়ের বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। নকলার ভোটকান্দি গ্রামের কৃষক হাসা আলী (৭৬), ফারুক হোসেন (৫৬) ও চন্দ্রকোনার আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া (৪৫) জানান, এখানকার ব্রহ্মপুত্র ও দশানি নদীর তীরবর্তী চরাঞ্চলের জমি প্রায় ৬ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকে। পানি নেমে গেলে বোরো আবাদের আগ মুহূর্তে তারা সেই জমিতে ডাল-তেল জাতীয় ফসল আবাদ করতে থাকে। কালক্রমে লাভজনক হওয়ায় বাড়তে থাকে সরিষার আবাদ। বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে এক সময় যেদিকে দৃষ্টি দেয়া যেত সেদিকেই দেখা যেত হলুদ সর্ষে ক্ষেত। কিন্তু উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় সরিষা আবাদ থেকে সরে গিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা এখন অপেক্ষাকৃত কম খরচ ও লাভ বেশি হওয়ায় মাশকলাই আবাদের দিকে ঝুঁকেছেন। চন্দ্রকোনা, চরঅষ্টধর ও পাঠাকাটা ইউনিয়নের যেদিকে চোখ ফেরানো যায় সেদিকেই এখন শুধু মাশকলাই আর মাশকলাই গাছের সবুজ সমারোহ।কৃষি কর্মকর্তারা জানান, মুনাফা কম পওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী এলাকাগুলোতে সরিষা চাষ কমিয়ে মাশকলাই চাষে ঝুঁকছেন কৃষকরা। তারা জানান, আগে যে পরিমাণ মাশডাল আমদানি করা হতো এ বছর থেকে তা অনেকাংশে কমে যাবে। কয়েক বছর ধরে ব্রহ্মপুত্রের চরাঞ্চলে মাশকলাই চাষ কৃষকদের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, নকলা উপজেলায় চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় ৮০০ হেক্টর জমিতে মাশকলাই আবাদ হয়েছে। উফসী জাত বারি-১, বারি-২, বারি-৩, বিনামাস-১, বিনামাস-২ এবং স্থানীয় জাত রাজশাহী ও সাধুহাটি জাতের মাশকলাই বেশি চাষ হয়েছে। এ বছর হেক্টর প্রতি ১.৫-২টন উৎপাদন হিসেবে মোট এক হাজার ২০০ টন থেকে এক হাজার ৫০০ টন মাস ডাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষকদের ধারণা, যেভাবে মাশকলাই গাছ বেড়ে উঠছে এবং ছেই (দানা) ধরেছে তাতে এবার তাদের ফলনও ভালো হবে। নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, মাশকলাই ডাল একটি প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। এতে অ্যামাইনো অ্যাসিডের পরিমাণ বেশি থাকে। যা শিশুদের বেঁটে এবং খাটো হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। মাসকালাই আবাদ বৃদ্ধি পেলে দিন দিন আমাদের দেশের মানুষ যেভাবে খাটো হয়ে যাচ্ছে সেটা রোধ করা সম্ভব হবে। তিনি আরও বলেন, এবার নকলার চরাঞ্চলে যেভাবে মাশকলাই আবাদ হয়েছে তাতে এবারের সফলতা দেখে আগামী মৌসুমে ডাল চাষির সংখ্যা এবং উৎপাদন দ্বিগুণ হবে বলে আমরা আশা করছি। এজন্য মাঠ পর্যায়ে মাশকলাই চাষিদের উন্নত জাত, নিয়মিত পরিচর্যাসহ নানাভাবে পরামর্শ ও উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। হাকিম বাবুল/এসএস/পিআর
Advertisement