শিক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে দোলাচলে অধিদপ্তর

দীর্ঘ দুই বছর স্থগিত ছিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম। এবার ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু এই নিয়োগ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। ফলে লিখিত পরীক্ষার কোথায় আয়োজন করবে তা নিয়ে দোলাচলে ডিপিই।

Advertisement

জানা গেছে, পরীক্ষা শুধু ঢাকা মহানগরে না কি জেলা পর্যায়ে হবে এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত এক বৈঠক হয়। বৈঠকে পক্ষে-বিপক্ষে মত দেন কর্মকর্তারা। তবে নিয়োগ কমিটির অধিকাংশ সদস্যরা চান লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় হোক।

বৈঠকে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু ঢাকায় না জেলা পর্যায়ে হবে- এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তারা জানান, বৈঠকের একপর্যায়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানান, বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Advertisement

বৈঠকে উপস্থিত আরেক কর্মকর্তা বলেন, অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে শুধু ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়ার পক্ষে মত দেওয়া হয়। তারা যুক্তি দেখান, ঢাকায় পরীক্ষা নেওয়া হলে প্রশ্ন ফাঁসসহ অন্যান্য অসুদপায় এড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম মঙ্গলবার (২২ মার্চ) জাগো নিউজকে বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় থেকে যেভাবে আয়োজন করতে বলবে আমরা সেভাবেই করবো।

এর আগে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এই পরীক্ষা শুধু কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নিতে যাবতীয় কাজ শেষ করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা আয়োজনের সম্ভাব্যতা খতিয়ে দেখতে নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, নিয়োগ প্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমাতে সংসদ সদস্যরা জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নিতে সুপারিশ করেন প্রতিমন্ত্রীকে। এরপরই এ বিষয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়। ফলে সোমবার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে নিয়োগ সংক্রান্ত বৈঠক হয়।

Advertisement

এদিকে নিয়োগ পরীক্ষা কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় নেওয়া না হলে দুর্নীতির আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তারা বলছেন, পরীক্ষা জেলা পর্যায়ে নেওয়া হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও নানা অনিয়ম-দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হবে। সোমবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ শঙ্কার কথা জানান।

লিখিত বক্তব্যে চাকরি প্রত্যাশীরা বলেন, জেলা পর্যায়ে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়ার খবর আমাদের চরমভাবে হতাশ করেছে। কারণ জেলা পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়ার অতীত রেকর্ড ভালো নয়। বিগত সময়ে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস, প্রক্সিসহ নানা অনিয়ম ঘটেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, জেলা পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে সেখানে ভয়াবহ দুর্নীতি হতে পারে।

এর আগে আগামী ৮ এপ্রিল থেকে নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর কথা বলা হয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলমের সই করা পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচন সংক্রান্ত চিঠিতে।

এতে বলা হয়েছিল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ২০২০-এর লিখিত পরীক্ষা আগামী ৮, ১৫ ও ২২ এপ্রিল এবং ১৩ মে বিকেল ৩টায় নিতে আপনার প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কিন্ত শেষপর্যন্ত এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেনি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

২০২০ সালের ২০ অক্টোবর ৩২ হাজার ৫৭৭টি শূন্য পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অধিদপ্তর। মহামারির কারণে সেই পরীক্ষা আর নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এরই মধ্যে অবসরজনিত কারণে আরও ১০ হাজারেরও বেশি সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হয়ে পড়ে। এতে বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ঘাটতি দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধানে মন্ত্রণালয় আগের বিজ্ঞপ্তির শূন্য পদ ও পরের শূন্য পদ মিলিয়ে প্রায় ৪৫ হাজার সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

এমএইচএম/জেডএইচ/জিকেএস