সাভারের নদী ও খালগুলোর পানি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। শিল্প-কারখানার বর্জ্যের কারণে পানির স্বাভাবিক রং ও স্বাদে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। এক সময়ের টলমলে পানি রূপ নিয়েছে কুচকুচে কালোতে। দূষিত হয়ে তা মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
Advertisement
দূষিত পানি ব্যবহারে নদী-তীরবর্তী মানুষ প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছেন। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধছে। নদী ও খালের পানিতে এখন আর মাছ নেই। আছে শুধু আর্বজনা।
সাভারে তুরাগ, বংশী ও ধলেশ্বরী নদী ঘুরে দেখা যায়, পানি দূষণের মচ্ছব চলছে। শিল্প কল-কারখানার ময়লা পানির ড্রেন যেন নদীমুখী করা নিয়মে পরিণত হয়েছে। জেলেদের নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য আর চোখে পড়ে না।
বংশী নদীঘেঁষা গ্রাম শিমুলিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, দূষণের শেষ ধাপে রূপ নিয়েছে নদীটির পানি। জেলেপাড়ার মানুষগুলো পেশা বদলেছেন। চিরচেনা জাল আর নৌকার দেখা মেলেনি গোটা গ্রামজুড়ে।
Advertisement
জেলেপাড়ার নিতেশ নামের একজন জাগো নিউজকে বলেন, ‘বছর দশ আগেও নদীর পানিতে কিছু মাছ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন মাছতো দূরের কথা, সাপ-ব্যাঙও পাওয়া যায় না। জাল টানলে আসে শুধু আর্বজনা। তাই সবাই পেশা বদল করছে।’
সাভারের ধলেশ্বরী নদীর চিত্র প্রায় একই। পানিবাহিত রোগে প্রতিনিয়তই অসুস্থ হচ্ছেন নদী-তীরবর্তী মানুষ। শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ থেকে শুরু করে নানা রোগে ভুগছেন তারা।
ঝাউচর এলাকার গ্রাম্য চিকিৎসক রুবেল মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, পানির দুর্গন্ধে টেকা যায় না। এখানকার মানুষজন চর্মরোগকে সঙ্গী করে চলছেন। শিশুদের শ্বাসকষ্ট হয় বেশি। এসব কারণে যাদের সামর্থ্য আছে তারাই আদি বসতবাড়ি ফেলে অন্যত্র চলে যান। আর যারা বসবাস করেন তারা সব কিছুকে মেনে নিয়েই থাকেন।’
কথা হয় আফজাল মোল্লা নামের ষাটোর্ধ্ব এক ব্যাক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আগে নদীর পানি নানা কাছে ব্যবহার হতো। এখন কিছুতেই ব্যবহার হয় না। সব পানিই যেন বিষাক্ত। নদীনির্ভর মানুষগুলো এখন বড্ড অসহায়।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘ঝাউচর, হরিণধরা, তেঁতুলঝোড়া, ফুলবাড়িয়া গ্রামের মানুষ একসময় ৭৫ ভাগ নির্ভর ছিল এ নদীর পানিকে ঘিরে। এখন তা নেমেছে শূন্যের কোঠায়।’
বুধবার (১৬ মার্চ) গাবতলী বেড়িবাধ সংলগ্ন তুরাগ নদী পরিদর্শনে আসেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি সেসময় বলেন, ‘তুরাগকে এখন আর কোনো নদী বলা যায় না। এটা এখন বিষাক্ত জলস্রোতে পরিণত হয়েছে।’
পরিবেশ সংগঠক লোকমান হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘সাভারে পানি এখন আর নিরাপদ নেই। শুধু দূষণ আর দূষণ। এখন ভয়ের কারণ নদনদীর পানির মতো ভূপৃষ্ঠের পানিতেও যদি দূষণের বিরূপ প্রভাব পড়ে তাহলে বেঁচে থাকাটাই হবে চ্যালেঞ্জের।’
পানি দূষণমুক্ত করতে প্রশাসন থেকে কী ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এমন প্রশ্ন ছিল সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাজহারুল ইসলামের কাছে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পানি দূষণ ঠেকাতে প্রশাসন কাজ করছে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল-জরিমানাও করা হয়। পাশাপাশি গণসচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, দূষণমুক্ত করতে উদ্যোগগুলো তেমন সাড়া ফেলছে না।’
মাহফুজুর রহমান নিপু/এসআর/জিকেএস