শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের চারজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তাদের বাড়িতে থামছে না শোকের মাতম। স্বজনদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।
Advertisement
১১ মাসের ব্যবধানে একই নৌরুটে আবারও এমন দুর্ঘটনায় স্তব্ধ পুরো জেলা। এখনো নিখোঁজ কয়েকজন। নিখোঁজদের জীবিত না হলেও অন্তত মরদেহের সন্ধান চান স্বজনরা।
দুর্ঘটনায় নিখোঁজ ও নিহত তিনজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ হারিয়েছেন ভাই, কেউ বাবা, কেউ মা। দুর্ঘটনায় চোখের পলকে ভেঙেছে সাজানো সংসার। কেউ আবার স্বজনের জন্য অধীর অপেক্ষায় গুনছে প্রহর। বেদনাবিধুর অশ্রুসিক্ত চোখ সবার। যেন এমন দুর্ঘটনা না হয় এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা ও বিচারের দাবি তাদের।
মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার রমজানবেগ এলাকার নিহত আরিফা-সাফায়েতের বাড়িতে দেখা যায়, ছেলে-স্ত্রীকে হারিয়ে অঝোরে কাঁদছেন আরিফার স্বামী দ্বীন ইসলামসহ বাড়ির সবাই। লঞ্চডুবিতে প্রাণে বেঁচে ফেরা দ্বীন ইসলামের বাবা আব্দুর রবও বিলাপ করে চলেছেন।
Advertisement
আরিফার স্বামী দ্বীন ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার স্ত্রীর বাবা নাই। আমার বাবারে সে নিজের বাবা বলে শ্রদ্ধা করতো । তাই তাকে চিকিৎসা করাতে নারায়ণগঞ্জ নিয়া গেলো। আমার বাবা ফিরলো, তবে স্ত্রী আর পোলারে হারাইলাম। এভাবে আর কত প্রাণ হারাইলে আমাদের লঞ্চ চলাচল নিরাপদ হইবো। আমি সরকারের কাছে বিচার চাই।’
আব্দুর রব বলেন, ‘আমি বাইচ্চা আইলাম কিন্তু পোলার বউ আর নাতি বাঁচলো না। এ দুর্ঘটনা যারা ঘটাইছে আমি তাদের শাস্তি চাই।’
একই চিত্র দেখা যায় উত্তর ইসলামপুরের নিহত জয়নাল ভূঁইয়ার বাড়িতেও। নিহত স্বজনকে ফিরে না পেলেও বিচারের দাবি পরিবারটির।
নিহত হাতেমে বাড়িতেও চলছে আহাজারি। তার মেয়ে কাকলি আক্তার বলেন, ‘দুপুর ১টা বাজে মায় ফোন দিছে, বাবায় ফোন ধরছে। কিন্তু যে সময় লঞ্চ ডুবছে, আমরা আবার ফোন দিছি তখন বাবার ফোন আর বাজে না। বাবারে এখনো পাইলাম না। জীবিত না পাই, বাবার মরদেহটা অন্তত চাই। যেন অন্তত শেষ দেখাটা দেখে মাটি দিতে পারি।’
Advertisement
মাতম চলছে দুর্ঘটনায় এখনো নিখোঁজ যোগনীঘাট এলাকার মোসলেম উদ্দিনের বাড়িতে। জীবিত না হোক অন্তত মরদেহ পাওয়ার দাবি স্বজনদের।
চারজনের দাহ-দাফন
লঞ্চডুবির ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারের পর মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার রমজানবেগ এলাকার আরিফা (৩৫), তার ছেলে সাফায়াত (২), উত্তর ইসলামপুর এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী জয়নাল ভূঁইয়া (৬০) ও গজারিয়া উপজেলার ইসমানি চরের স্মৃতি রাণীর (১৮) মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাতে ও আজ সকালে ধর্মীয় রীতি মেনে তিনজনের দাফন ও স্মৃতি রাণীর দাহ সম্পূর্ণ হয়েছে।
রোববার (২০ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে নারায়ণগঞ্জের কয়লাঘাট এলাকায় কার্গো জাহাজ এমভি রূপসী-৯ এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আশরাফউদ্দিন ডুবে যায়। সর্বশেষ আটজনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া যায়।
আরাফাত রায়হান সাকিব/এসজে/এমএস