ভ্রমণ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি

আজাহারুল ইসলাম

Advertisement

খুলনা শহর থেকে ১৯ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত দক্ষিণডিহি। সবুজ ছায়াঘেরা ফুল, ফল আর বিচিত্র গাছ-গাছালিতে ঠাসা সৌম্য একটি গ্রাম। আর এই গ্রামের ঠিক মাঝখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতি বিজড়িত একটি দোতলা ভবন। এটাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুরবাড়ি। বর্তমানে এটি দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স নামেও পরিচিত।

পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা ভবনটির স্থাপত্য ও গঠন কাঠামোতে বৃটিশ যুগের স্থাপত্য রীতিনীতির প্রভাব সুস্পষ্ট। কক্ষগুলোতে এখনো রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত আলমারি। এ ছাড়া সাজানো রয়েছে বিশ্বকবি, তার পরিবার ও মৃণালীনির স্মৃতি স্মরণে বিভিন্ন ধরনের আলোকচিত্র ও চিত্রপটের হাতে আঁকা ছবি। সিঁড়ির সাহায্যে দোতলা ও তিন তলা চিলেকোঠায় ওঠার ব্যবস্থাও আছে। বর্তমানে ভবনটি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত পুরাকীর্তি।

জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৩ বেণীমাধব রায় চৌধুরীর মেয়ে ভবতারিণীকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ঠাকুর পরিবারের প্রথা অনুযায়ী ভবতারিণীর নাম বদলে মৃণালিনী দেবী রাখা হয়। পরে কলকাতায় পাড়ি জমান দক্ষিণডিহির ঠাকুর পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য।

Advertisement

কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে দক্ষিণডিহির সম্পর্ক নিবিড়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মা সারদা সুন্দরী দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন এই দক্ষিণডিহি গ্রামে। রবীন্দ্রনাথের কাকি ত্রিপুরা সুন্দরী দেবীও এ গ্রামেরই মেয়ে।

যৌবনে কবি কয়েকবার তার মায়ের সঙ্গে দক্ষিণডিহি গ্রামের মামা বাড়িতে এসেছিলেন। মৃণালিনী দেবীর বাড়িও এখানেই। রবীন্দ্র পরিবারের স্মৃতি বিজড়িত দক্ষিণডিহি রবীন্দ্রনাথের পাঁচ পুরুষের শ্বশুরবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে মৃণালিনীর বিয়ের পর উন্নত বসতবাড়ি নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন রায় পরিবার। ১৮৯০ সালে কবির শ্যালক নগেন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী দক্ষিণডিহি রায়বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন।

এখানে কবিগুরু ও কবিপত্নীর আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। ২৫ বৈশাখ ও ২২ শ্রাবণ এখানে নানা আয়োজনে রবীন্দ্রজয়ন্তী ও কবিপ্রয়াণ দিবস পালন করা হয়।

এ ছাড়া সারাবছর দর্শনার্থীদের আনাগোনা লেগেই আগে। স্থানীয়রা ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ ও জ্ঞানপিপাসুরা হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে ছুটে আসেন রবীন্দ্র-মৃণালিনীর স্মৃতি বিজড়িত এ স্থাপনায়।

Advertisement

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

এসইউ/এএসএম