‘১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাস’, ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান পাকিস্তানের করাচি কারাগার থেকে’, ‘আমার সোনার বাংলা রবীন্দ্রনাথের লেখা একটি গান’- এ ধরনের নানা ভুল ও অসঙ্গতি চিহ্নিত হয়েছে মাধ্যমিকে নতুন বছরের পাঠ্যবইয়ে। বই ছাপা হওয়ার পর এসব ত্রুটি নজরে এলে সংশোধনের উদ্যোগ নেয় জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। কমিটি গঠন করে এখন চলছে সংশোধনের কাজ। এ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে পাঠানো হবে সারাদেশের শিক্ষকদের কাছে।
Advertisement
সংশোধনের পর চলতি মাসেই (মার্চ) নোট আকারে পৌঁছে যাবে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ক্লাসে শিক্ষকরা সেসব বিষয় পড়ানোর সময় সঠিকটা পড়াবেন। এ তথ্য জানায় এনসিটিবি।
মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বইয়ের মধ্যে ধরা পড়ে এসব ভুল-ত্রুটি। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, পৌরনীতি ও নাগরিকতা, বাংলা ব্যাকরণ নির্মিতি ও ইংরেজি ব্যাকরণসহ ১০টি পাঠ্যবই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির শিক্ষা ও সম্পাদনা শাখার এক সম্পাদক (মাধ্যমিক) জাগো নিউজকে বলেন, এসব বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে ২৫টির মতো তথ্য ভুল, অসঙ্গতি, ইংরেজি শব্দের সঙ্গে অর্থের অমিল ও বানান ভুল পাওয়া গেছে।
Advertisement
ফলে প্রতিটি বিষয়ের বই স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও দুজন বিশেষজ্ঞ দিয়ে আলাদাভাবে পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে বলে জানান এনসিটিবির এই সম্পাদক।
তিনি বলেন, পাণ্ডুলিপি তৈরিতে এনসিটিবিতে সমন্বয় না থাকায় প্রতি বছর ভুল ধরা পড়ছে পাঠ্যবইয়ে। ভুলের সংখ্যা এত বেশি যে, একটি সংশোধন করলে আরেকটি বেরিয়ে আসে। বই ছাপার পর সেটি প্রকাশ হলে নজরে আসে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের। এবারও হয়েছে তাই। বর্তমানে পাঠ্যবইয়ের ভুলগুলো আলাদা করে সেগুলো সংশোধনের মাধ্যমে একটি নোট আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানোর কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি মাসের শুরুতে মাধ্যমিক পর্যায়ের ১০টি বই রিভিউ (পর্যালোচনা) করতে ৫২ জনের আলাদা ১০টি টিম করা হয়। তারা এসব বই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত রিভিউ করে নানা ধরনের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করেন।
যেসব ভুল-অসঙ্গতি চিহ্নিত হয়েছে
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাধ্যমিকের ১০টি বইয়ের মধ্যে ক্রুটি ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- সপ্তম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব পরিচয় বই। এখানে ১৬ ডিসেম্বরকে ‘স্বাধীনতার মাস’ উল্লেখ করা হয়েছে। একই বইয়ে জাতীয় সংগীতকে বলা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘একটি গান’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমে কবিতা আকারে প্রকাশ করে পরে গান হিসেবে সুর দেন। এছাড়া কবি জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্মস্থান মুন্সিগঞ্জ হলেও বইয়ে ‘ময়মনসিংহ’ দেওয়া হয়েছে। ইতিহাস বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে আইয়ুববিরোধী জাগরণের বদলে বলা হয়েছে ‘চেতনা’।
এছাড়া সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি থাকলেও তাকে ‘একজন শীর্ষ পর্যায়ের নেতা’, শেখ ফজলুল হক মনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা হলেও তাকে ‘যুব নেতা’ লেখা হয়েছে।
অপরদিকে উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দ হলেও আনন্দপাঠ বইয়ে তাসখন্দকে ‘দক্ষিণ অঞ্চলের রাজ্য’ বানানো, কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর আলাদা জেলা হলেও বইয়ে লেখা হয়েছে ‘মুজিবনগর গড়ে উঠেছে কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুরে’।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও পাঠ্যবইয়ে ‘করাচি কারাগার’ থেকে মুক্তি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, ইন্সপেক্টর শব্দের অর্থ পুলিশ পরিদর্শক হলেও ইংরেজি বইয়ে লেখা ‘পরিদর্শক পুলিশ’, ওসি শব্দের অর্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলে ‘পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা’ লেখা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক মশিউজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, রিভিউয়ের জন্য পাঠ্যবইয়ের ক্ষেত্রে স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক, এনসিটিবি ও এর বাইরে দুজন বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে কাজ করা হয়েছে। ১০টি বইয়ের জন্য মোট ৫২ জন অভিজ্ঞ ব্যক্তি দুই সপ্তাহ ধরে কাজ করেছেন। তারা বিভিন্ন অধ্যায়ের ভুল-অসঙ্গতি চিহ্নিত করেন। এগুলো সংশোধন করা হয়েছে। বর্তমানে সেগুলো সংক্ষিপ্তকরণের কাজ চলছে।
তিনি আরও বলেন, চলতি মাসের মধ্যে আমরা ভুল সংশোধন করে শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে দিতে পারি। তবে ভুল শিখবে না শিক্ষার্থীরা। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।
এমএইচএম/জেডএইচ/এএ/জিকেএস