কৃষি ও প্রকৃতি

আগাম তরমুজ চাষে লাভবান বরগুনার কৃষকরা

প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা বরগুনার চরের কৃষকরা চলতি বছর আগাম তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন। এই সাফল্য দেখে বরগুনা কৃষি বিভাগ বলছে, তারা কৃষকদের পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। তবে ওই চরে স্থায়ী বেরিবাঁধ নির্মাণ জরুরি বলে দাবি করছেন চরের কৃষকরা।

Advertisement

মাঝের চরের কৃষকরা জানান, বরগুনা সদরের বদরখালী ও পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিরা ইউনিয়নের বিষখালী নদীতে জেগে ওঠা চরে নব্বইয়ের দশকে বসতি শুরু হয়। প্রায় ৮০০ একর আয়তনের এই চরে মূলত ছিন্নমূল ভূমিহীন মানুষ বসবাস করেন।

মাঝের চরের কৃষক সূত্রে জানা গেছে, এখানের বাসিন্দাদের কৃষি ও মৎস্য শিকারই জীবিকা নির্বাহের প্রধান দুই পেশা। তবে কৃষিতে খুব একটা সফল নন মাঝের চরের কৃষকরা। বিষখালীর বুকের চরকে ঘিরে রিং কিছু এলাকায় রিং বেরিবাঁধ থাকলেও বাসিন্দাদের বসতি ও ফসল সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট নয়।

চরের এক ফসলী রোপা আমন চাষে প্রতিবছরই জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হন এই কৃষকরা। এতে ব্যাপক ক্ষতির হুমকিতে পড়তে হয় কৃষকদের। বছরের পর বছর এমন লোকসানের মুখে টিকে থাকাই যখন দায়, তখন হতাশ কৃষকরা এ অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় খুঁজতে থাকেন মাঝের চরের কৃষকরা।

Advertisement

বরগুনা সদর উপজেলার বানাই এলাকা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। আজাহার আলীসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে আলাপ হলে জাগো নিউজকে বলেন, আগাম তরমুজ চাষে মোটামোটি টিকে থাকা যায়। বাজার থেকে বীজ কিনে নিয়ে গতবছর শীত মৌসুমের শুরুর দিকে পাঁচ একর জমিতে আগাম তরমুজের আবাদ শুরু করি। এতে খরচ হয় ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু বিক্রি হইছিল আড়াই লাখ টাকার তরমুজ।

আমতলী উপজেলার হলুদিয়া ইউনিয়নের তালুকদার বাজার এলাকা তরমুজ চাষের জন্য বিখ্যাত। আশরাফ হাওলাদার, আজিজ মৃধাসহ কৃষকরা জাগো নিউজকে বলেন, মহামারি করোনার সময় অনেক টাকা ঋণী হয়ে গেছিলাম। আগাম জাতের তরমুজ চাষ করে আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমাদেরকে কৃষি কর্মকর্তারা পরামর্শে দিয়েছিলনে।

কৃষক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আগাম তরমুজ চাষের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলাম ৩০ হাজার টাকা। দুই একর জমিতে প্রথমবার ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি আশা করি আরও ১ লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারব।

এই তরমুজ চাষের প্রধান উদ্যোক্তা বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, গত বছরের সফলতায় উৎসাহিত হয়ে এলাকার কৃষকরা এবছর বছর শীতের শুরুতে ব্যাপকহারে আগাম তরমুজের আবাদ শুরু করেন। এই চরে এবার ৪০০ একর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে।

Advertisement

কৃষক গফুর মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, আগাম তরমুজের ভালো আবাদ দেখে এই বছর তরমুজ চাষ শুরু করি। দুই একর জমিতে আবাদ করতে খরচ হয়েছিল ৪০ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হজার টাকা বিক্রি করেছি। আশা করি আরো ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা করতে পারব।

তরমুজ ক্রেতা কামাল মীর জাগো নিউজকে বলেন, বরগুনার হাটে-বাজারে ভ্যান গাড়িতে ফেরি করেও প্রতি কেজি তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। শীতের শেষে বসন্তের শুরুতেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে তরমুজ।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম নিউজকে বলেন, এপর্যন্ত প্রায় তিন লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করেছি। আগাম তরমুজের বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। বাজারে এসব তরমুজের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ক্রেতারা বেশি দাম দিয়েও কিনে নিচ্ছেন।

বরগুনা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চরে বেলে দো-আঁশ মাটি তরমুজ চাষের জন্য খুবই ভালো। আমরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়েছি। আগাম তরমুজের ভালো ফলন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘বিগ ফ্যামিলি’ ও ‘সুইট বেবি’সহ কয়েকটি জাতের তরমুজ আগাম আবাদ করেছেন মাঝের চরের কৃষকরা। তবে এই চরে স্থায়ী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ থাকলে আরো বেশি তরমুজের চাষ সম্ভব।

কাশেম হাওলাদার/এমএমএফ/এমএস