দেশে রডের দামে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে আগেই। অস্বাভাবিক হারে বাড়তে থাকা দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে আরও। এতে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো এক টন রডের দাম ছাড়িয়েছে ৯০ হাজার টাকা। রডের এমন দাম বাড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন খোদ উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা।
Advertisement
রডের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার কারণে নির্মাণকাজেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব। অনেকে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে কমেছে রডের বিক্রি। এ কারণে অনেক উৎপাদক উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন। আবার কাঁচামালের দাম বাড়ার কারণেও কেউ কেউ কমিয়েছেন উৎপাদন। ফলে বাজারে একদিকে বাড়তি দাম, অন্যদিকে রডের সরবরাহ কমে গেছে।
ফলে আগামীতে রডের বাজারে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের ধারণা, সামনে রডের দাম আরও বাড়তে পারে। তবে অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, বিক্রি কমে যাওয়ায় কয়েকদিনের মধ্যে রডের দাম কমতেও পারে।
ঢাকার ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজ (১৫ মার্চ) বিএসআরএমের ৬০ গ্রেড এক টন রড বিক্রি হচ্ছে ৯০ হাজার ৫০০ থেকে ৯১ হাজার টাকা, সপ্তাহখানেক আগে যা ছিল ৮৮ হাজার টাকা। মাসখানেক আগে ৭৮ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছিল এ রড।
Advertisement
বাজারে এখন বিএসআরএমের রডই সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া একেএস ৮৮ থেকে ৮৯ হাজার টাকা, কেএসআরএম ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, জিপিএইচ ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার, বন্দর ৮৮ হাজার ৫০০ থেকে ৮৯ হাজার ও কেএসএমএল ৮৭ থেকে ৮৮ হাজার টাকা টন বিক্রি হচ্ছে। আনোয়ার, রহিমসহ কয়েকটি কোম্পানির রড পাওয়া যাচ্ছে ৮৬ থেকে ৮৭ হাজার টাকার মধ্যে।
রডের দামের বিষয়ে পুরান ঢাকার নওয়াব ইউসুফ রোডের মেসার্স ভাণ্ডার ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপক মো. শরিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে রডের দাম বেড়েই চলছে। এবার রডের দাম বেড়ে কোথায় গিয়ে থামবে বলা মুশকিল। যেভাবে দাম বাড়ছে, তাতে এক টন রডের দাম লাখ টাকা হলেও অবাক হবো না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিএসআরএম এবং বন্দর কোম্পানির ডিলারশিপ নিয়ে ব্যবসা করছি। এ দুই কোম্পানির রড বিক্রি করি। কিছুদিন আগে বন্দরের এক টন রডের দাম ছিল ৭৪ হাজার টাকা। এখান থেকে বেড়ে প্রথম ৭৬ হাজার টাকা হয়। এরপর ৭৮ হাজার, ৮০ হাজার, ৮২ হাজার, ৮৪ হাজার টাকা। এভাবে বেড়ে এখন ৮৯ হাজার টাকা হয়েছে। একইভাবে ৭৬ হাজার টাকা বিক্রি হওয়া বিএসআরএম রডের দাম বেড়ে এখন ৯১ হাজার টাকা হয়েছে।’
মো. শরিফ আরও বলেন, ‘শুধু রডের দাম বেড়েছে, তা নয়। এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, ঠিকমতো রড পাওয়া যাচ্ছে না। আগে অর্ডার দিলে যে রড এক-দুদিনের মধ্যে পেয়ে যেতাম, এখন সেই রড ১০-১৫ দিন পরে পাওয়া যাচ্ছে। সামনে কী যে হবে বলা মুশকিল। তবে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি বেশ কমে গেছে। দাম অতিরিক্ত বাড়ায় অনেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন।’
Advertisement
পুরান ঢাকার আরেক ব্যবসায়ী তীয়াস বলেন, ‘রডের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে আমরাও অবাক। কয়েকদিন ধরে তো প্রতিদিনিই রডের দাম বেড়েছে। তবে দুদিন ধরে দাম কিছুটা স্থিতিশীল। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, কয়েকদিনের মধ্যে রডের দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না।’
যোগাযোগ করা হলে কদমতলী স্টিল মিলস প্রাইভেট লিমিটেডের (কেএসএমএল) চেয়ারম্যান আজিজ আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘রডের দাম সামনে কোন দিকে যাবে, তা আমরাও বলতে পারছি না। কারণ একদিকে রডের কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে, অন্যদিকে বিক্রিও কমে গেছে। ফলে বাড়তি দামে কাঁচামাল কিনে অতিরিক্ত রড উৎপাদন করতে ভয় পাচ্ছি। কারণ সামনে যদি দাম কমে যায়।’
তিনি বলেন, ‘দেশের বাজারে রডের এত দাম বাড়বে, তা কেউ ধারণা করতে পারেনি। দাম বাড়ার কারণে রডের বিক্রি অনেক কমে গেছে। ফলে এখন দাম একটু কমতে পারে। আজ টনে ৫০০ টাকা কমিয়ে দিয়েছি। গতকাল আমরা এক টন রড ৮৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছিলাম। আজ দাম কমিয়ে সাড়ে ৮৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। সামনে রডের দাম আরও একটু কমতে পারে। তবে খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না।’
এদিকে, নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু রড নয়, গত কয়েকদিনে সিমেন্টের দামও অনেক বেড়েছে। কোম্পানিভেদে ৫০ কেজির এক বস্তা সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।
সিমেন্টের দামের বিষয়ে রামপুরার ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, ‘গত ১০-১৫ দিনে সব ধরনের সিমেন্টের দাম বেড়েছে। আগে যে সিমেন্ট আমরা ৪০০ টাকা বস্তা বিক্রি করেছি, এখন তা সাড়ে ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। যে সিমেন্টের দাম সাড়ে ৪০০ টাকা ছিল, তা ৪৮০-৫০০ টাকা হয়েছে। এভাবে সব কোম্পানির সিমেন্টের দাম ৩০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।’
সিমেন্টের দাম বাড়ার বিষয়ে প্রিমিয়ার সিমেন্টের কোম্পানি সচিব কাজী মো. শফিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখন সিমেন্টের দাম বাড়ার প্রধান কারণ কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়া। কয়েকদিনে কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। ফলে সিমেন্টের দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। কাঁচামালের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের ধারণা সামনে সিমেন্টের দাম আরও বাড়তে পারে।’
এমএএস/এএএইচ/এএ/এএসএম