টাঙ্গাইলের বাসাইলে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২১৭ বস্তা চাল উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সোমবার (১৪ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ফুলকী ইউনিয়নের ডিলার নাছরিন ও পাপনের স্টোর রুম থেকে চাল বিতরণের সময় বিষয়টি জানা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
ফুলকী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শামছুল আলম বিজু জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘আজ ১০ টাকা কেজির খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী উপকারভোগীরা চাল নিতে আসেন। এসময় কয়েকজন ইউপি মেম্বার ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে চালের বস্তা গণনা করলে নাছরিনের স্টোর রুমে ৩০ কেজি ওজনের ১৩০ বস্তা ও পাপনের স্টোর রুমে ৮৭ বস্তা চাল কম পাওয়া যায়।’
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘যদিও দুই ডিলার মালিক ট্রাক পাননি বলে চাল কম হয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছেন, তারপরও ধারণ করা যাচ্ছে ২১৭ বস্তা চাল ওই দুই ডিলার মালিক বিক্রি করেছেন। এ ঘটনায় চাল বিতরণ বন্ধ রয়েছে। তারা চাল আবার স্টোরে তুললে বিতরণ করা হবে। চাল উধাওয়ের বিষয়টি ইউএনও এবং খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।’
Advertisement
ডিলার নাছরিন ও পাপনের কাছে বেশকিছু উপকারভোগীর কার্ড রয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় অভিযুক্ত দুই ডিলার মালিকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। স্থানীয়রা জানান, নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী উপকারভোগীরা আজ সকালে উপজেলার ময়থা বাজার এলাকা ও ফুলকী পশ্চিমপাড়া বাজার এলাকায় চাল আনতে যান। এসময় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে কয়েকজন ইউপি মেম্বারসহ আরও কয়েকজনে মিলে চালের বস্তার হিসাব নেন। এসময় ময়থা উত্তরপাড়া এলাকার ডিলার নাছরিন বেগমের স্টোর রুমে ১৩০ বস্তা ও ফুলকী পশ্চিমপাড়া বাজার এলাকায় জাকির হোসেন পাপনের স্টোর রুমে ৮৭ বস্তা চাল কম পাওয়া যায়। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান এসে চাল বিতরণ বন্ধ করে দেন। গণনা চলাকালে ওই দুই ডিলাম মালিক পালিয়েছেন বলেও জানান তারা।
জশিজাটী গ্রামের নজরুল, একঢালার আশরাফ আলী, আইসড়া গ্রামের দুলালী রাজ বংশী ও কনিকা রাজ বংশীসহ একাধিক উপকারভোগী অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী চাল নিতে এসেছি। কিন্তু ডিলারদের স্টোরে সব চাল জমা না থাকায় আমাদের চাল দেয়নি। আমরা প্রায় দেড়শ টাকা খরচ করে চাল নিতে এসেছিলাম। ৩০০ টাকার চালে আমাদের যাতায়াতে বাড়তি খরচ হচ্ছে দেড়শ টাকা। এখন আবার দুইবার যাতায়াতে আমাদের খরচ হবে ৩০০ টাকা।’
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কনক কান্তিদেব নাথ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাল উধাও হয়নি। গোড়াইয়ের মাশাফি এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজে পুষ্টিচাল মিশানোর জন্য পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে তারা চালের বস্তা কম দিয়েছেন। এজন্য ওই ডিলারদের স্টোরে ২১৭ বস্তা চাল কম হয়েছে। এ কারণে ডিলারদের কাছে ট্যাগ অফিসার ও খাদ্য পরিদর্শককে পাঠানো হয়েছে। পরে জানতে পেরেছি পরিবহনজনিত সমস্যার কারণে ডিলার পয়েন্টে ওই চালগুলো আনা হয়নি। আগামী চাল বিতরণ করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এরপরও যদি ডিলারদের জালিয়াতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Advertisement
তবে গোড়াই মাশাফি এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা পরিমাণ অনুযায়ী পুষ্টিচাল পাঠিয়েছি। পরিমাণের একটি বস্তা চালও কম দিইনি। চালের সঙ্গে আমাদের ডেলিভারি চালান কপিও পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাহিদা পারভিন বলেন, ‘বিষয়টি চেয়ারম্যন সাহেব আমাকে জানিয়েছেন। আমি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে সরেজমিন পরিদর্শনে যেতে বলেছি। উনি পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট দিলে নীতিমালা অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরিফ উর রহমান টগর/এসআর/এএসএম