প্রবাস

মাল্টার শ্রমবাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ

নানা অনিয়ম আর মালিক শ্রমিকের মধ্যে শর্ত রক্ষা না করার কারণে যে কোনো সময় মাল্টার শ্রমবাজার হারাতে পারে বাংলাদেশ। বৈধভাবে এই দেশটিতে আসার পথ বন্ধ হলে ইউরোপে বাংলাদেশিদের প্রবেশ কঠিন হয়ে পড়বে।

Advertisement

বাংলাদেশ থেকে আসা নতুন শ্রমিকরা কোনোভাবেই মাল্টা সরকারের নিয়ম সঠিকভাবে মানছেন না। তারা মূলত মাল্টাকে ইউরোপের অন্যদেশে যাওয়ার জন্য রুট হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কারণে শ্রমবাজারটি এখন মারাত্মক হুমকির মুখে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, কেউ যদি মাল্টায় আসতে চান তাহলে তাকে সে দেশের ওয়ার্কপার্মিট নিতে হবে। সেক্ষেত্রে স্থানীয় মালিকের সঙ্গে একটি কাজের চুক্তি করে মাল্টা থেকে একটি অনুমতিপত্র নিতে হয়। সেই কাগজপত্র মাল্টা দূতাবাসে জমা দেওয়ার পর সব ঠিক থাকলে ভিসা দেওয়া হয়। তবে বাংলাদেশে মাল্টার কোনো দূতাবাস নেই। এক্ষেত্রে ভারতে অবস্থিত দূতাবাসগুলো থেকে ভিসা সেবা দেওয়া হয়ে থাকে। সব ঠিক থাকলে দ্বীপরাষ্ট্র মাল্টায় পাড়ি জমান তারা।

অপরূপ স্পিনোলা বে; Image Source: wikimedia commons

Advertisement

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি বলেন, কোনো বাংলাদেশি মাল্টাতে এসে থাকছেন না। দেশটিতে কোনোভাবে ঢুকতে পারলে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমান। ফলে মাল্টা কোম্পানির মালিকপক্ষের সঙ্গে যে চুক্তি তা ভঙ্গ করছেন তারা। সে কারণে মালিকপক্ষ অনেকটা আস্থা হারিয়ে ফেলছেন বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রতি।

তারা বলেন, প্রবাসীদের লোভের কারণে শ্রমিক সংকটে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মাল্টার বিভিন্ন কোম্পানি। বাংলাদেশিরা দেশটিকে এক প্রকার ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছেন। এখানে পৌঁছানোর পর তারা ফ্রান্স, ইতালি, পর্তুগাল স্পেনসহ ইউরোপের বিভিন্ন অবৈধভাবে চলে যান। এভাবে চলতে থাকলে মাল্টার এ শ্রমবাজার ধরে রাখা সম্ভব হবে না বাংলাদেশের।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, লিবিয়া বা তার আশপাশের দেশগুলো থেকে অবৈধভাবে সাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে পৌঁছাতে স্থায়ীভাবে আশ্রয় নেয়। তারা সাময়িকভাবে আশ্রয় পেলেও তাদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে। এক্ষেত্রে ইউরোপীয় দেশগুলো আলাদাভাবে ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

ব্যস্ত সেইন্ট জর্জ বে; Image Source: spot.org

Advertisement

অবৈধ বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে ইইউর সঙ্গে বাংলাদেশের ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি)’ রয়েছে। গত দেড় বছর কভিড মহামারির কারণে এসওপি বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ইইউ ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাদেশিদের জন্য ভিসার ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ আরোপের হুমকি দিয়েছে। এরপর বাংলাদেশও ইউরোপে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফেরানোর উদ্যোগ নেয়।

মাল্টা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ব্যবসায়ী কাউসার আমিন হাওলাদার বলেন, গ্রিস দূতাবাসের সাবেক রাষ্ট্রদূত জসিম উদ্দিন ও বর্তমান কাউন্সিলর মো. খালেদ মাল্টা শ্রমবাজার ধরে রাখতে যথেষ্ট চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তি বিভিন্ন উপায়ে শ্রমিক এনে মাল্টার শ্রমবাজারটি ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছেন। এটা বন্ধ না হলে বাংলাদেশ ‘কালো তালিকা’য় পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাসের দূতালয় প্রধান মো. খালেদ বলেন, ইউরোপের মধ্যে একটি মানসম্পন্ন শ্রমবাজার মাল্টা। বেতনও বেশি। কিন্তু অনেক দিন ধরে শুনছি মাল্টায় শ্রমিকরা এসে ইউরোপের অন্য দেশে চলে যায়। এটা খুবই দুঃখজনক। ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেব্বুগ শহরের একটি অংশ, ইউরোপীয় আভিজাত্য ঝরে পড়ছে প্রতিটি উপাদানে; Image Source: eagel and volkers

তিনি বলেন, আন অফিসিয়াল গত কয়েক বছরে মাল্টা সরকার প্রায় ছয় থেকে সাত হাজার ভিসা দিয়েছে বাংলাদেশি শ্রমিকদের। এর মধ্যে প্রায় চার হাজার শ্রমিক ইউরোপের অন্য দেশে চলে গেছে। তারা কয়েক মাস কাজ করে এরপর চলে যায় অন্য দেশে। তাদের বোঝা উচিত অন্যদেশে যাওয়ার পর তারা অবৈধ হয়ে যায়।’

২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি চুক্তি হয়। সেই চুক্তি অনুযায়ী মাল্টাতে শ্রমবাজার চালু হয়েছে। তবে কিছু কারণে বেশ কিছু বাংলাদেশি মাল্টায় অনিয়মিত হয়। ফলে অবৈধ হিসেবে তাদের নিজ দেশে ফেরত যায়। আমি মনে করি অন্য দেশে না গিয়ে মাল্টাতে কাজ করে নিজেকে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল করা উচিত। এতে করে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হবে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিগত দিনে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কিছু অসাধু চক্রের অনৈতিক কার্যকলাপের ফলে সেই সুযোগগুলো সঠিকভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়নি। তাই মাল্টায় এখন দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা যেন কোনোভাবেই আবারও একই অসাধু চক্রের কারণে হাতছাড়া না হয়।

এমআরএম/এএসএম