রাজনীতি

এমপির নির্দেশে আ.লীগের ফরম বিক্রি বাণিজ্য!

ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় আগাম আওয়ামী লীগের দলীয় ফরম বিক্রি চলছে। গত কয়েক দিন ধরে চেয়ারম্যান পদে ২৫ ও সদস্য (মেম্বার) পদে ১০ হাজার টাকা করে প্রকাশ্যে ফরম বিক্রি করা হচ্ছে।লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আবদুল্লাহ আল মামুনের নির্দেশে তার কমলনগর প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক ফরম বিক্রি বাণিজ্য করেছেন। এজন্য সময়ও বেঁধে দেয়া হয়। ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ফরম কেনা যাবে। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে আলোচনা- সমালোচনা।এ বিষয়ে এমপি আবদুল্লাহ আল মামুন জাগো নিউজকে বলেছেন, “বাণিজ্য নয়, দলীয় ফান্ড গঠনের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ফরম বিক্রি করছে।”তবে এ কথা মানতে নারাজ কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন। তিনি বলেন, দলীয় নয়, এমপির প্রতিনিধির একক সিদ্ধান্তে ফরম বিক্রি চলছে। এতে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার খাত সৃষ্টি হয়েছে। আমি এর প্রতিবাদ জানাই। বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও জানিয়েছি।এদিকে, সম্প্রতি রামগতির চরগাজী, চররমিজ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্র দখল ও  আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা শক্তির মহড়া দিয়ে এমপির মনোনীত দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করেছেন।এ কারণে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ধারণা, এমপির নির্দেশ থাকলে ভোট ছাড়াই জনপ্রতিনিধি হওয়া যাবে। এতে তারা উৎসাহ নিয়ে টাকার বিনিময়ে ফরম সংগ্রহ করছেন। প্রার্থীদের অনেকেই ইউপি নির্বাচনে ‘আওয়ামী লীগের ফরম’ নেয়ার সময় আনোয়ারুল হকের সঙ্গে ছবি তুলেছেন। ফেসবুকসহ সামাজিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ওই ছবি রয়েছে।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের একেকটিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান ও মেম্বার পদে গড়ে ৩-৪ জন করে প্রার্থী রয়েছে। দলীয় সমর্থন পেলে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া যাবে এ বিশ্বাস নিয়ে ওইসব প্রার্থীরা নির্দিষ্ট টাকা জমা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করছেন। হাজীরহাটে অবস্থিত আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয়ে বসে এমপির প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক প্রার্থীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে ফরমের টাকা নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে চরফলকন ইউনিয়নে আবদুল ওয়াহেদ ও চরজাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে আকতার হোসেন মিলনসহ বেশ কিছু নেতা আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ফরম নিয়েছেন। সদ্য আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া আকতার হোসেন মিলন বলেন, ‘২০১১ সালে আমি ১৬২ ভোটে হেরেছি। এখন এমপির সাহেবের নির্দেশে ৩১ ডিসেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিটে আনোয়ারুল হকের কাছ থেকে ফরম নিয়েছি। দল যে সিদ্ধান্ত নেয় তা আমি মেনে নেব’।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ সমর্থিত এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের তারিখ এখনও ঘোষণা হয়নি অথচ কমলনগরে বাণিজ্য শুরু হয়েছে। এখন প্রত্যেক এলাকায় ৪-৫ জন করে প্রার্থী ফরম কিনলেও একজনকে আওয়ামী লীগের চূড়ান্ত সমর্থন দেয়া হবে। পরে সমর্থন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীকে এমপি ও তার লোকজনকে ৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে।উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও চরফলকন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফজলুল হক সবুজ বলেন, এমপির নির্দেশে তার প্রতিনিধির কাছ থেকে চেয়ারম্যান ২৫ ও মেম্বার প্রার্থীরা ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে ফরম সংগ্রহ করছেন।উপজেলা আওয়ামীলীগের দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ চরজাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনি বলেন, আমার ইউনিয়নের ৪-৫ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছে। তিনিও টাকা দিয়ে ফরম কিনেছেন।যুবলীগের মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, ফরম বিক্রির নামে কমলনগরে কমপক্ষে অর্ধ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে। এতে টাকার জোরের কাছে দলের পরীক্ষিত নেতারাও উপেক্ষিত হবে। এটি দলের জন্য অশনি সংকেত হয়ে থাকবে।কমলনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম নুরুল আমিন বলেন, এমপির প্রতিনিধির একক সিদ্ধান্তে ফরম বিক্রি চলছে। আমি এ বাণিজ্যের  প্রতিবাদ করছি। ব্যবস্থা নিতে বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরকেও জানিয়েছি।জানতে চাইলে জাগো নিউজকে আনোয়ারুল হক বলেন,‘ কোথায়, কারা, কিসের ফরম বিক্রি করছে সে সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। এ বিষয়ে এমপি সাহেব ভালো বলতে পারবেন’।জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, এখনও ইউপি নির্বাচন ঘোষণা হয়নি। অথচ কমলনগরে প্রার্থীদের কাছে দলীয় ফরম বিক্রি করা হচ্ছে বলে কয়েকজন নেতা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। দলীয়ভাবে এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কঠোরভাবে এ বাণিজ্য রোধ করা হবে।লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি ও কমলনগর) আসনের এমপি মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, দলীয় ফান্ড গঠনের জন্য স্থানীয় (কমলনগর) আওয়ামী লীগ নেতারা ফরম বিক্রি করছেন। দলের কাজে এ টাকা ব্যয় করা হবে বলেও তিনি দাবি করেন।কাজল কায়েস/এসএস/পিআর

Advertisement