বিশেষ প্রতিবেদন

দৃষ্টিহীনতায় স্বাধীনতার ৪৪ বছর!

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম সাড়ডুবী গ্রামে স্বাধীনতার পর ৪৪ বছর ধরে দৃষ্টিহীনতায় ভুগছেন মুজিব বাহিনীর যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিন উদ্দিন। দৃষ্টিহীন হয়েও মনোবল হারাননি তিনি।১৯৭১ সালে তিনি এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। সেসময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ভারতের উত্তরপ্রদেশের দেরাদুনে ২৯ দিনের গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি মুজিব বাহিনীর অন্যতম সদস্য সিরাজুল ইসলাম খান, তোফায়েল আহেম্মদ, আব্দুর রাজ্জাক, শেখ ফজলুল হক মনিসহ অন্যান্যদের সঙ্গে গেরিলা প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করেন।প্রথমে তিনি পাটগ্রামের বুড়িমারীতে অবস্থিত ৬নং সেক্টরের কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম খানের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধকালীন ছদ্দবেশে প্রথমে পাটগ্রাম পরে বড়খাতা, দৈইখাওয়া হয়ে কুড়িগ্রামের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। পাক হানাদার বাহিনীরা পিছু হটতে থাকেন এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর বিষাক্ত গ্যাসে তাহার এক চোখ আক্রান্ত হয়।এ সময় তার সহযোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা খয়বর হোসেন খন্দকার, আলী হাসান, রফিকুল ইসলাম খন্দকার তাকে উদ্ধার করে ভারতের জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। পরে চিকিৎসকরা জানালেন তাহার ডান চোখ বিষাক্ত গ্যাসে সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে গেছে।এক চোখ হারিয়ে দেশ স্বাধীনের পর তিনি যোগ দিলেন কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর সোনালী ব্যাংক শাখায়। ছয় মাস চাকরি করার পর ডান চোখের কারণে ধীরে ধীরে বাম চোখও নষ্ট হতে থাকে। তিনি চাকরি ছেড়ে নিঃস্ব হয়ে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।পরে তার দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতা চোখের চিকিৎসা করার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে বাম চোখ অপারেশন করান। কিন্তু চিকিৎসক তার দৃষ্টিশক্তি ফিরাতে ব্যর্থ হন। এভাবে তিনি সারা জীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে থাকেন।তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানদের হাত ধরে ৪৪ বছর যাবত চলাফেরা করেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ের মুখ আজও দেখেননি। এভাবে চলছে তার জীবন। তিনি সাহসিকতার সঙ্গে জীবনযুদ্ধেও লড়াই চালিয়ে গেছেন। দৃষ্টিহীন হয়েও চরম প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের সন্তানদের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বড় হওয়ার। তার তিন সন্তানও বাবার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন। তিন সন্তানই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকুরি করছেন। ১৯৯৬ সালে জাতীর জনকের কন্য শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তার রাষ্ট্রীয় সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করেন।যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আমিন উদ্দিন একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা স্বাধীন করতে পেরেছি এটাই আমার বড় অর্জন। তিনি আরও বলেন দৃষ্টিহিন হয়েও আমি আমার সন্তানদের শিক্ষিত করতে পেরেছি সরকার তাদের চাকরির সু-ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এজন্য আমি বর্তমান সরকারে কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি সরকারের কাছে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি একটি বার হলেও বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন সোনার বাংলা দেখতে চাই। তাহার স্ত্রী উম্মে খাদিজা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার যেন আমার স্বামীর দুই চোখ ভালো করে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আমার স্বামী স্বাধীন বাংলা দুই চোখ ভরে দেখুক এটাই চাই।রবিউল হাসান/বিএ

Advertisement