জাতীয়

সরকারের দুই বছর : আশা-নিরাশার দোলাচলে কূটনৈতিক সম্পর্ক

কূটনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দুই বছর পাড় করেছে সরকার। যদিও এর মধ্যেও ছিলো কিছুটা অস্বস্তি। ছিলো আশা- নিরাশার দোলাচল। কূটনীতিক শিষ্টাচারের ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সব দলের অংশগ্রহণ, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ও সুশাসন নিশ্চিত করা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কথা বলেছে। আগের ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করলেও নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছে। তবে সেই অবস্থান যেন আর দেখা যায় না। তবে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কে কোনো ঘাটতি দেখায়নি।অগ্রগতি ও উন্নয়নে হাসিনার সরকারের পাশে থাকার কথা বারবারই বলে এসেছে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনের প্রতি রাশিয়া, ভারত ও চীনের যে সমর্থন ছিল সময়ের সঙ্গে এই সমর্থন বেড়েছে। তবে অনেকেই সমর্থন না দিলেও কথা বলছে না আর।ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ ঢাকা ছাড়ার আগে অনেকবারই বলে গেছেন, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। সেটি ছিল বাস্তবতা। আর সরকারে যে থাকে, তার সঙ্গেই ভারত সম্পর্ক বজায় রাখে।দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলেও অনেক দেশ বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়িয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রকল্প থেকে সরে গেলেও সেই বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসুও ঢাকার প্রশংসা করে গেছেন। বলেছেন, সাহসের কথা।তবে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। বিচারের রায় ঘোষণার পর থেকে প্রতিবারই বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে সম্পর্কটা তিক্ত করেছে পাকিস্তান। আর গত ডিসেম্বরে বছর বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াতের নেতা আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকরের পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিবৃতি দেয়। এর জের ধরে ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে বাংলাদেশ তলব করে। এর পাল্টা হিসেবে ইসলামাবাদে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার করা হয় পাকিস্তানে বাংলাদেশি হাইকমিশনারকে।এর আগে জালমুদ্রা পাচার ও জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তানের দুই কূটনীতিক ও কর্মকর্তাকে পাকিস্তান ঢাকা থেকে প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের এসব তৎপরতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ বেশ জোরালো অবস্থান নেয়। এখন দাবি উঠেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার।সরকারের মেয়াদের গত মে মাসে ট্রলারে করে বঙ্গোপসাগর হয়ে মানবপাচারের ঘটনাগুলো প্রকাশের পর এক মানবিক সমস্যা সামনে চলে আসে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজনকে লোভ দেখিয়ে একটি চক্রের পাচারের বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিষয়টি আঞ্চলিকভাবে মোকাবিলার জন্য জুনে ব্যাংককে থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াকে নিয়ে আলোচনায় বসতে সফল হয় বাংলাদেশ।হাসিনা সরকারের সঙ্গে উন্নয়ন আলোচনা করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকায় এসেছিলেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দিল্লি গিয়েছিলেন। নরেন্দ্র মোদি জুনে ঢাকায় আসার আগে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্যসভা ও লোকসভায় সংবিধান সংশোধনী বিল পাস করিয়ে নেন। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর মানবিক সমস্যার সমাধান করে দুই দেশ। শেষ হয় ‘ছিটের মানুষ’ নামে পরিচিত দুই দেশের আবদ্ধ মানুষের দুঃসহ যন্ত্রণা। পূর্ণতা পায় বাংলাদেশের মানচিত্র।পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জোটের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক গত দুই বছরে আরও শক্তিশালী হয়েছে। আন্দোলনের নামে রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের তাণ্ডব দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। বিদেশেও তা সমালোচিত হয়েছে। সরকারের মেয়াদেও দ্বিতীয় বছরটি ছিলো কিছুটা কূটনৈতিক অঙ্গনে ভিন্ন পরিস্থিতির। সংঘাতময় রাজনীতির মধ্যদিয়ে সরকার ২০১৫ সাল শুরু করে। জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন গত বছরের জানুয়ারির শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিঠি লেখেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সহিংসতা বন্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি দুই নেত্রীকে চিঠি লেখেন। অবশ্য কোনো চিঠির ব্যাপারেই শেষ পর্যন্ত সরকার সাড়া দেয়নি।ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়েও কথা বলেছেন তারা। তবে গত বছরের শেষ দিকটা সরকারের জন্য জন্য কিছুটা নতুন অস্বস্তি যোগ করে। বিদেশি নাগরিকদের ঢাকায় চলাচলে সতর্কতা জারি করে বেশির ভাগ দূতাবাস। সরকার বারবার আশ্বস্ত করেও রেহাই পায়নি। বন্ধ হয়নি সর্তকর্তা জারি। অবশ্য পরে, সরকার বিষয়টি পরে বাড়াবাড়ি হিসেবে বক্তব্য দিয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্যের অগ্রাধিকারমূলক বাজার-সুবিধা (জিএসপি), আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএসসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনায় মুখর ছিলেন। এ নিয়ে নিজেদের ভিন্নমতের কথা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সুশাসন- এ বিষয়গুলোর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থান খুব একটা না বদলালেও দুই দেশ সম্পর্ক সম্প্রসারিত করছে।এসএ/বিএ

Advertisement