একুশে বইমেলা

বর্তমানের সাহিত্যচর্চা নিয়ে আমি আশাবাদী: ইকবাল খন্দকার

ইকবাল খন্দকার একাধারে কথাসাহিত্যিক, টিভি উপস্থাপক, গীতিকার, নাট্যকার, টিভি স্ক্রিপ্ট লেখক। তবে কথাসাহিত্যিক ও উপস্থাপক হিসেবে বেশি পরিচিত। অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র; তখনই সিদ্ধান্ত নেন লেখালেখির বাইরে কিছু করবেন না। লেখকজীবনই হবে তার কর্মজীবন। সেই লক্ষ্যে এখনো অবিচল রয়েছেন। এগিয়ে যাচ্ছেন আপন গন্তব্যে। এ পর্যন্ত তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০৭টি।

Advertisement

সম্প্রতি তার লেখালেখি, উপস্থাপনা ও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কথাশিল্পী ও সাংবাদিক সালাহ উদ্দিন মাহমুদ—

জাগো নিউজ: এবারের বইমেলায় আপনার কয়টি বই প্রকাশ হয়েছে?ইকবাল খন্দকার: বেশ ক’বছর ধরেই প্রতি মেলায় আমার ১০টা করে নতুন বই বের হয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। এবারও আমার ১০টি নতুন বই বের হয়েছে। বইগুলোর নামও একটু বলে রাখি—‘বতক’ (অনন্যা), ‘ঘোষবাড়ির শ্মশান’ (কথাপ্রকাশ), ‘আমার কলামদানি’ (মেধা পাবলিকেশন্স), ‘কবর নাম্বার ৮১’ (মেধা পাবলিকেশন্স), ‘রহস্যময় মরা খাল’ (কথাপ্রকাশ), ‘অজ্ঞাত আততায়ী’ (আলোঘর প্রকাশনা), ‘রক্তাক্ত টর্চার সেল’ (প্রিয়বাংলা প্রকাশন), ‘ভয়ানক নীল-নকশা’ (শব্দশিল্প), ‘তুলকালাম হাসি’ (অনিন্দ্য প্রকাশ), ‘গোঁফওয়ালা পণ্ডিত মশাই’ (শৈশব প্রকাশন)।

জাগো নিউজ: কত সালে আপনার প্রথম বই প্রকাশ হয়?ইকবাল খন্দকার: আমার প্রথম বই প্রকাশ হয় ২০০১ সালে। বইটির নাম ছিল ‘ভুলে যেও আমায়’। প্রকাশক ছিল ঢাকা প্রকাশ। আর পরিবেশক আগামী প্রকাশনী।

Advertisement

জাগো নিউজ: এ পর্যন্ত আপনার ১০০ বই প্রকাশ হয়েছে, জার্নিটা কেমন ছিল?ইকবাল খন্দকার: ঠিক ১০০টি না, আমার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১০৭টি। জার্নিটা ছিল টক, মিষ্টি, ঝাল। আমার প্রথম তিনটি বই-ই নিজের টাকা দিয়ে প্রকাশ করতে হয়েছিল। তা-ও প্রথম বইটি প্রকাশ করতে হয়েছিল জমি বিক্রির টাকা দিয়ে। তারপর চতুর্থ বই হয় প্রকাশকের নিজের বিনিয়োগে। সেই বই থেকে রয়্যালটিও পাই। আর তখন থেকে এখন পর্যন্ত বেশ ভালো আছি। বেশ ভালো। আলহামদুলিল্লাহ।

জাগো নিউজ: লেখালেখির পাশাপাশি সাহিত্য বিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছেন, অভিজ্ঞতা যদি বলতেন—ইকবাল খন্দকার: লেখার পাশাপাশি সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি—ব্যাপারটা ঠিক এমন না। ছয় বছর ধরে বইমেলার অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি বলে হয়তো মনে হতে পারে আমি সাহিত্যিক তাই সাহিত্যবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি। অথচ এই একটা অনুষ্ঠান ছাড়া আমার ক্যারিয়ারে সাহিত্যবিষয়ক আর কোনো অনুষ্ঠান নেই। আমি কমেডি অনুষ্ঠান, স্যাটায়ার অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্রবিষয়ক অনুষ্ঠান, ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান, সংগীতবিষয়ক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। এমনকি ‘গান আলাপন’ নামে এখন আমার উপস্থাপনায় একটি অনুষ্ঠান প্রচার হয় বিটিভিতে। মোটকথা, আমি যখন উপস্থাপনা করি, তখন ভুলে যাই আমি একজন সাহিত্যিক। বরং ভাবি আমি একজন সাধারণ উপস্থাপক। তাই একজন সাধারণ উপস্থাপকের পক্ষে যত ধরনের অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা সম্ভব, সবই করেছি, করছি এবং করবো ইনশাআল্লাহ।

জাগো নিউজ: সিরিয়াস ধারার পাশাপাশি আপনি রম্য সাহিত্য নিয়েও কাজ করছেন, এর গতি-প্রকৃতি জানতে চাই—ইকবাল খন্দকার: একটা সময় ছিল যখন সপ্তাহে আমার ৩৩-৩৪টা লেখা ছাপা হতো জাতীয় দৈনিকে। আর এসব লেখার সিংহভাগই ছিল রম্য। এরপর যখন ফান ম্যাগাজিনগুলো বন্ধ হতে শুরু করলো, আমিও সিরিয়াস লেখার পেছনে বেশি সময় দিতে লাগলাম। আর বইয়ের কথা যদি বলি, প্রতিবছর আমার একটা করে রম্য বই বের হয়। এই বইয়ের নামে ‘হাসি’ শব্দটা থাকে। আর এই বইগুলোকে আমি বলি ‘হাসি’ সিরিজের বই। এখন পর্যন্ত এই সিরিজের ব্যানারে ১২টি রম্য বই প্রকাশিত হয়েছে। চলতি বছর প্রকাশিত বইটির নাম ‘তুলকালাম হাসি’।

জাগো নিউজ: সমকালীন সাহিত্যচর্চা সম্পর্কে আপনার অভিমত জানতে চাই—ইকবাল খন্দকার: বর্তমানে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, বই প্রকাশ হচ্ছে। যা ইতিবাচক। কারণ বিশটি বই প্রকাশ হলে কালের বিচারে একটি বই টিকে যেতে পারে। আর বই-ই যদি প্রকাশ হয় একটা, তাহলে সেখানে আশা করার মতো জায়গা থাকে না। এককথায় যদি বলি, বর্তমানের লেখালেখি তথা সাহিত্যচর্চা নিয়ে আমি সন্তুষ্ট এবং আশাবাদী।

Advertisement

জাগো নিউজ: নতুন যারা লিখতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ দেবেন?ইকবাল খন্দকার: নতুন যারা লিখতে চান, তাদের উদ্দেশ্যে আমি একটা কথাই বলবো—শুধু লিখুন। গ্রুপিংয়েরও দরকার নেই, লবিংয়েরও দরকার নেই। শুধু লিখুন। আর মনে রাখবেন, লেখাটা একার কাজ। গ্রুপের নয়। তাই দল, গোত্র, গ্রুপ ইত্যাদি মেনটেন করার কোনো দরকার নেই।

এসইউ/এমএস