বাজারে মশা নিধনের জন্য যেসব কয়েল বিক্রি হচ্ছে সেগুলো মানুষের জীবনের জন্যও ক্ষতিকর। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েব পোর্টাল আমার হেলথ ডটকম আয়োজিত ‘অনুমোদনহীন মশার কয়েল জনস্বাস্থ্যের বিপর্যয় ডেকে আনছে’ শীর্ষক সেমিনারে মশার কয়েলের মারাত্মক বিরূপ চিত্র তুলে ধরেন বক্তারা।এসময় মালয়েশিয়ার সুমিতোমো কেমিকেলের পরিচালক ডা. মুনি সেরিট বাংলাদেশের ২৪টি ব্র্যান্ডের কয়েলের উপর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তারা তুলে ধরেন, দেশের বাজারে হরেক নামের মশার কয়েলের ছড়াছড়ি। বর্তমানে বাজারে রকেট, বাওমা, মা হাই কোয়ালিটি (নীল ও কমলা রঙের প্যাকেট), এক্সট্রা পাওয়ার, বোস্টার, লিজার্ড মেগা, বাংলা কিলার, এক্সট্রা পাওয়ার ব্ল্যাক, ফাইটার, নাইটগার্ড, নাইট এঙ্গেল, বস সুপার, ক্রস ফায়ার, এটাক কিং, পোলার মেগা, ফ্যামিলি সুপার, মাছরাঙা, সোলার, এক্সট্রা পাওয়ার কত নামেই না কয়েল পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ক্রেতারা কী জানেন মশক নিধনের নামে প্রকারান্তরে মানুষ মারার কয়েল বিক্রি হচ্ছে! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি যে বাজারে বিক্রিত ২৪টি ব্র্যান্ডের মধ্যে ২০টি কয়েলেই রয়েছে উচ্চমাত্রার বা ভিন্ন বালাইনাশক। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মশার কয়েলে সর্বোচ্চ দশমিক ০৩ মাত্রার‘একটিভ ইনগ্রেডিয়েন্ট’ ব্যবহার নির্ধারণ করেছে। অথচ দেশের বাজারের মশার কয়েলের ওপর পরিচালিত ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় বহুগুণ বেশি ইনগ্রিডেয়েন্ট ব্যবহারের অকাট্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। এক শ্রেণির অর্থলোভী ব্যবসায়ী ক্রেতাদের নানা আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপনে প্রলুব্ধ করে জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।সেমিনারের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদনহীন মশার কয়েল বাণিজ্য বন্ধ করা উচিত। তিনি বলেন, বিষাক্ত কয়েলে বাজার সয়লাব। পরিস্থিতি থেকে দেশের মানুষের আশুমুক্তি পাওয়া জরুরি। এটা মানুষের বেঁচে থাকার প্রশ্ন। আপনি আপনার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে মশা মারার যে বিষাক্ত কয়েল না জেনে না বুঝে ব্যবহার করছেন তা আপনার স্বাস্থ্যের জন্যে কতটুকু ক্ষতিকর তা জেনে নিন। তিনি মশামুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা আপরিহার্য় বলে মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন, একশ্রেণির লোভাতুর ব্যাবসায়ী অতি মুনাফার লোভে অবৈধ কয়েল, ওষুধ ও খাদ্যদ্রব্য আমদানি, উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। এসব অসাধু ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে আহ্বান জানান। তিনি সাংবাদিকদের ২৪ ঘণ্টার অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আপনারা সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ে থেকে সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করুন যাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারে। তথ্যমন্ত্রী মশার প্রজনন স্থান ধ্বংস করে এর বিস্তার রোধ করার বিষয়ে সকলকে সামাজিকভাবে উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন। রবীন্দ্রনাথের বাণী স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা শুরু করি কিন্তু শেষ করিনা’। সেমিনারে তথ্যমন্ত্রী অনুমোদনহীন কয়েলের ব্যবসা বন্ধে মোট তিনটি প্রস্তাব পেশ করে বলেন, কঠোর শাস্তি প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, জনগণকে সচেতন করতে হবে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় হতে হবে।মূল প্রবন্ধের প্রসঙ্গ টেনে তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, বলা হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় অনুমোদনহীন কয়েলের ব্যবসা হচ্ছে। তার মানে এটি বন্ধে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। কেন জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জিনিসটি বন্ধ করা হচ্ছে না। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, ডা. ওয়ানাইজা। অনুষ্ঠানে দেশের ২৪টি ব্র্যান্ডের কয়েলের উপর ল্যাবরেটরি পরীক্ষার ফলাফল উপস্থাপন করেন মালয়েশিয়ার সুমিতোমো কেমিকেলের পরিচালক ডা. মুনি সের্টি। আলোচকদের অনেকেই বলেন; ‘কয়েল মশা মারে সে কয়েলই মানুষ মারে’। অনুষ্ঠানে আমার হেলথ ডটকমের সম্পাদক ডা. অপূর্ব পণ্ডিতের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন; নিপসম এর বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আরমান হায়দার, এসিআইর নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ আলমগীর, অধ্যাপক কবীরুল বাশার প্রমুখ।এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি
Advertisement