দেশজুড়ে

রাজশাহীতে ৫৮২ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আম চাষ, উৎপাদনে রেকর্ডের আশা

ফাল্গুন মাসে রাজশাহীর পথে-প্রান্তরে পাওয়া যাচ্ছে আমের মুকুলের সুঘ্রাণ। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছে অনেক গাছ। কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, এবার রাজশাহী জেলায় প্রায় ৫৮২ হেক্টর জমিতে বেড়েছে আমের চাষ। আর গতবারের চেয়ে এবার আমের মুকুল বেশি এসেছে বলে জানাচ্ছেন চাষিরা। তাই ফলনও ভালো পাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তারা।

Advertisement

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহীতে মোট আমের আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন হয়েছে ১১ দশমিক ৯৬ মেট্রিক টন। সম্ভাব্য মোট উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৫৩ মেট্রিক টন আম, যার বিক্রয় মূল্য ছিল প্রায় ৭১ কোটি ৮১ লাখ ৬২ হাজার ১২০ টাকা।

অন্যদিকে, ২০২০-২১ মৌসুমে মোট আবাদ হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে। হেক্টর প্রতি গড় ফলন হয়েছে ১২ দশমিক ১০১ মেট্রিক টন। সম্ভাব্য মোট উৎপাদন হয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ১২৮ দশমিক ২৪ মেট্রিক টন আম। রাজশাহী জেলাজুড়ে আম বিক্রি হয়েছে প্রায় ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ১২ হাজার টাকার।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলীম বলেন, চলতি ২০২১-২২ মৌসুমে রাজশাহী জেলায় ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৮ মেট্রিক টন।

Advertisement

গতবারের চেয়ে জেলায় এবার ৫৮২ হেক্টর জমিতে আম চাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন অন্য যে কোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছেন এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে আমের জন্য আবহাওয়া বেশ অনুকূলে রয়েছে। গত বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় মাটি পর্যাপ্ত পানি পেয়েছে। আবার অনেক কৃষক সবজি চাষের পাশাপাশি জমিতে আম গাছ লাগিয়েছেন। এতে গাছ পর্যাপ্ত পুষ্টি পেয়েছে। এসব কারণে এবার মুকুলও বেশি দেখা যাচ্ছে।

বাগমারার আম চাষি আব্দুল আলীম বলেন, এবার গাছে বিপুল পরিমাণ মুকুল এসেছে। গুটিও ভালো আসছে। তাই ফলন ভালো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আবহাওয়াটা একটু ভালো থাকলেই হয়।

তিনি আরও বলেন, গাছে মুকুল থাকাকালে কয়েকবার বৃষ্টির প্রয়োজন। বৃষ্টি হলেই চিন্তা নাই। আর বৃষ্টি না হলে ওষুধ মেশানো পানি গাছের মুকুলে স্প্রে করতে হবে যাতে মুকুল ঝরে না পড়ে।

রাজশাহীর কাটাখালীর হাজরা পুকুর এলাকার বাসিন্দা কোয়েল মল্লিক বলেন, অন্য ফসলের চেয়ে আম গাছে পরিচর্যা কম করতে হয়। আবার খরচও কম। এ কারণে আমার দুই বিঘা জমিতে গতবার আম গাছ লাগিয়েছি।

Advertisement

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, এবার সন্ধ্যা নামতে নামতেই থাকছে হাল্কা শীত। আবার সকালেও বেশ ঠান্ডা আবহাওয়া বিরাজ করছে। রাতে কিছু কুয়াশা পড়ছে। আবার গেলো বর্ষা মৌসুমে প্রচুর বৃষ্টিপাত আম চাষিদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ ভূমিকা রাখছে। সবমিলিয়ে এবার আমের জন্য সম্ভাবনাময় সময় বলে মনে হচ্ছে।

এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, গতবারও আমের ফলন খুব ভালো ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় চাষিরা দাম পাননি। কারণ ছিল করোনা ও লকডাউন। এবার এমন কিছুই নেই। উপরন্তু এবার সামনে ঈদ। ঈদ শেষেই পাওয়া যাবে গাছপাকা আম। আর তাই সবদিক থেকেই এবার আম চাষিরা লাভবান হবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

এমআরআর/এএসএম