আশফাক জুনেদ
Advertisement
খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে শিমু। এমনিতে সে দুপুরের আগে ঘুম থেকে উঠে না। তবে আজ উঠতে বাধ্য হয়েছে ৷ কারণ সকাল থেকে প্রকৃতির ডাকে কিছুক্ষণ পর পর প্রক্ষালন কক্ষে যেতে হচ্ছে। পাঁচ মিনিট অন্তর বাহিরে থাকছে তো পনেরো মিনিট ভেতরে।
অষ্টমবার বের হওয়ার পর লিভিং রুমে এসে বসেছে শিমু। এমনিতে ভুলেও পত্রিকা হাতে না নিলেও আজ পত্রিকা পড়ার ইচ্ছে হলো৷ চেয়ারের উপর রাখা পত্রিকা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ একটি সংবাদের শিরোনামে চোখ আটকে গেলো তার ৷ আগ্রহ নিয়ে সংবাদটি পড়তে লাগলো। সংবাদটি পড়ে খানিক পর পর শিমু হাসে আবার চোখও মুছে।
কি ছিল সেই সংবাদ? সংবাদটি ছিল পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বামী ছেড়ে সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে পালালেন স্ত্রী। সংবাদটির শিরোনাম ছিল এটি। পাঠকদের জন্য সংবাদটি দেওয়া হলো-
Advertisement
তেল ব্যবসায়ীর সঙ্গে পালালেন পেঁয়াজ ব্যবসায়ীর স্ত্রীনিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বামী জমির আলীকে ছেড়ে বিশিষ্ট সয়াবিন তেল ব্যবসায়ী আক্কাস আলীর সঙ্গে পালিয়ে গেছেন স্ত্রী জমিলা বেগম। দেশে সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীদের রমরমা অবস্থা দেখে তিনি পালিয়ে গেছেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশীরা।
বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময় জানালার গ্রিল কেটে শাড়ি দিয়ে রশি বানিয়ে তিন তলা থেকে নেমে তিনি পালিয়ে যান। সকালে স্বামী ঘুম থেকে উঠে তার পাশে স্ত্রীকে দেখতে না পেয়ে চিৎকার চেচামেচি করলে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। পরে তারা জানান রাত আনুমানিক ৩ ঘটিকার দিকে একটি ট্রাক জমির আলীর বাড়িতে ঢুকার শব্দ পান এবং এর ৪০ মিনিট পর সেই ট্রাক জমির আলীর বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।
তারা ধারণা করছেন, এই ট্রাকে করে জমিলা বেগম পালিয়ে গেছেন। ট্রাকে করে যাওয়ার সময় ট্রাক থেকে দুই লিটারের একটি সয়াবিন তেল পড়ে যায়। প্রতিবেশীরা আসার সময় বাড়ির গেইটের পাশে সেটি পড়ে থাকতে দেখেন। সেই থেকে তারা ধারণা করছেন জমিলা বেগম সয়াবিন তেল ব্যবসায়ী আক্কাস আলীর সঙ্গে পালিয়ে যেতে পারেন। কারণ সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পর আক্কাস আলীর সঙ্গে জমিলা বেগমের সখ্যতা বেড়ে যায়।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাস থেকে আক্কাস আলীর সঙ্গে জমিলা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। তেলের দাম বাড়ার পরও জমিলা বেগমের ঘরে সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দেয়নি। প্রতি রাতে আক্কাস আলী জমিলার সঙ্গে দেখা করতে আসার সময় দুই লিটার তেল নিয়ে আসতেন।
তেল নিয়ে না আসলে জমিলা ওই রাতে কথা বলতেন না বলেও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এর আগে ২০১৯ সালে জমিলা বেগম পেঁয়াজ ব্যবসায়ী জমির আলীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিয়ে করেন। কয়েকমাস পর তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। আর সেই সুযোগ নেন আক্কাস আলী।
এ বিষয়ে জমিলার স্বামী জমির আলী জানান, ঘটনার রাতে আমি স্বপ্ন দেখছিলাম আমার বউ গ্রিল কেটে পালাচ্ছে, কিন্তু ভাবিনি সে বাস্তবে পালাচ্ছে। বুঝতে পারলে তাকে যেতে দিতাম না। এই বলে কান্না শুরু করেন তিনি।
এ ঘটনায় মামলা করবেন কি না এমন প্রশ্নে জমির আলী জানান, তিনি ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিগগিরই মামলা করবেন।
বাঘরপড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা চিকন আলী জানান, ‘তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা। জমিলা বেগমের লোভ করা উচিত হয়নি। তেলের দাম সবসময় থাকবে না। এটি কমে আসবে। তখন তিনি বিপদে পড়বেন। আর পেঁয়াজের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার ধৈর্য্য ধরা উচিত ছিল। তার স্বামী অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
সংবাদটি পড়ে একটা লম্বা হাই তুলে শিমু। এরপর তার রুমে ফিরে যায় সে ৷ রুমে গিয়ে কিছুক্ষণ পর প্রেমিক জাবেদ আলীকে ফোন দিয়ে জানায় আমি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পারবো না। আমার পরিবার তোমাকে মানবে না। এই বলে ফোন কেটে দিয়ে তাকে ব্লক করে দেয়।
১০ মিনিট পর বড় বাজারের রহিম আলীকে ফোন দেয় শিমু। কিছুক্ষণ লতুপুতু কথা বলে সে জানায় রহিম আলীর প্রস্তাবে সে রাজি। তবে শর্ত একটা, প্রতিদিন দেখা করতে আসার সময় দুই লিটার সয়াবিন তেল নিয়ে আসতে হবে। আর সপ্তাহে একবার করে দেশের বাহিরে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। রহিম আলী শর্তে রাজি।
এখন তার সয়াবিন তেলের রমরমা ব্যবসা। তার কি আর টাকার অভাব আছে। এরপর থেকে তাদের প্রেমের শুরু। সামনের মাসে বিয়ে করার কথাবার্তা চলছে। তবে শিমু এখনি বিয়েতে রাজি না। সে সরকারের গতিবিধির উপর নজর রেখে বিয়ের সিদ্ধান্তে যেতে চাচ্ছে।
আর একটি কথা। গত দুই ঘন্টায় একবারের জন্যও শিমুকে প্রক্ষালন কক্ষে যেতে হয়নি। সে এখন পুরোপুরি সুস্থ। তার ঘুম কম হয়েছে। এবার সে ঘুম দিবে। সন্ধ্যায় রহিম আলী তেল নিয়ে আসবে। দেখা করতে হবে।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীছবি: সংগৃহীত
প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।
কেএসকে/জিকেএস