ফিচার

চাকরি ছেড়ে চা বিক্রি, মাসে আয় ৮০ হাজার

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করার পর সবার চিন্তা থাকে একটি ভালো চাকরি করার। তবে সেই সোনার হরিণ নামক চাকরি কয়জনের ভাগ্যে জোটে। আবার অনেকের মন বসে না দশটা পাঁচটা অফিসের নিয়মের। তেমনই একজন গুজরাটের রাজকোটের বাসিন্দা নিশা হুসেন।

Advertisement

চাকরি ছেড়ে শুরু করেন চা বিক্রি। ২০১৫ সালে স্নাতক শেষ করে রাজকোটের সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কম্পিউটার অপারেটরের চাকরি করতেন। কিন্তু সেই বেতনে সংসার চলত না তার। বেশি পড়াশোনা না করার কারণে ভালো চাকরিও পাচ্ছিলেন না। কিন্তু নিজের ব্যবসা শুরু করার মতো টাকা তার কাছে ছিল না।

তখনই তার মাথায় চায়ের ব্যবসা করার চিন্তা আসে। তার সাফল্যের মন্ত্র সবাইকে জানিয়ে চমকে দিয়েছেন। নিশা বিশ্বাস করেন যে কাজটিতে আপনি আনন্দ পান তা অবশ্যই করা উচিত। লজ্জা নয় বরং গর্বের সঙ্গে করা উচিত।

ছোটখাটো কাজ থেকেও ভালো টাকা আয় করা যায়। যে কোনো কাজ সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়, তা যত ছোটই হোক না কেন। একটি চায়ের স্টল দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা। নাম দেন ‘সিক্রেট থেলা’। আজ তিনি পুরো রাজকোটে 'দ্য চাইওয়ালি' নামেই পরিচিত হয়ে উঠেছেন।

Advertisement

ছোট থেকেই নিশা চা তৈরি করতে খুব পছন্দ করতেন। আর এই শখকে তিনি তার ব্যবসার রূপ দিয়েছেন। তবে তিনি যখন চা তৈরির ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তখন তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে তিনি এতে অবশ্যই সফলতা পাবেন। তিনি বিভিন্ন স্বাদের চা বিক্রি করেন। যা তিনি শিখেছেন নিজে নিজেই।

শুরুর দিকে তিনি আদা, পুদিনা এবং দারুচিনির স্বাদের চা তৈরি করতেন কিন্তু এখন তিনি তার স্টলে ১০টি ভিন্ন স্বাদের চা তৈরি করেন। তিনি তার চায়ের স্টলে কিছু বইও রাখেন যাতে গ্রাহকরা চায়ে চুমুক দিয়ে বই পড়ে উপভোগ করতে পারে।

নিশা বলেন, আমার ছোটবেলার বন্ধুরা যখন আমার বাড়িতে আসত, তারা আমার হাতের চা খেতে পছন্দ করত। সবাই সবসময় বলতো তোমার হাতের চা খুব ভালো। এসব ভেবেই চায়ের ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।

যখন তিনি চায়ের স্টল বসাতে শুরু করত, তখন একজন ক্রেতাও তার স্টলে আসত না। ১৫ দিন পর্যন্ত নিজের তৈরি করা চা ফেলে দিতে হয়েছে। তারপর একদিন একজন গ্রাহক তার স্টলে এলেন, যিনি তার তৈরি চা সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি লেখা পোস্ট করেন। তার সেই পোস্ট দেখে অন্যরা তার স্টলের আসতে শুরু করছেন।

Advertisement

পাঁচ-ছয় মাস পর লোকজন নিশাকে চিনতে শুরু করে। তার স্টলে এসে চা খেতে শুরু করে। এরপর তিনি তার চা ব্যবসা থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার টাকা আয় করতে শুরু করেন।

স্টলে ক্রেতাদের ভিড় বাড়তে থাকলে নিশাও চা থেকে ভালো আয় করতে শুরু করে এবং তার চায়ের ব্যবসাকে ক্যাফেতে রূপ দেন। এখন তিনি প্রতি মাসে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা উপার্জন করেন। রাজকোটের রোটারি ক্লাব থেকে সেরা চায়ের জন্য পুরস্কার এবং প্রশংসাপত্রও পেয়েছেন।

নিশার স্টলে এক কাপ সাধারণ চায়ের দাম ১০ টাকা। অন্যান্য স্বাদযুক্ত চায়ের দাম ৩০ টাকা। তবে তার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পণ্যটি হলো তন্দুরি চা, যার দাম ৪০ টাকা। এর পাশাপাশি ক্রেতাদের চাহিদা থাকায় ব্ল্যাক ও গ্রিনটিও রাখেন স্টলে।

সূত্র: দ্য বেটার ইন্ডিয়া

কেএসকে/জেআইএম