শুক্রবার (৪ মার্চ) দিনগত গভীর রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার আংগারিয়া বাজারে দুটি দোকান থেকে ১১ ব্যারেল (ড্রাম) তেল চুরি করে নিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র। একটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে তেলচুরির পুরো দৃশ্য ধরা পড়লেও এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোর শনাক্ত ও চুরি যাওয়া তেল উদ্ধারের চেষ্টা করছে।
Advertisement
সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার দিনগত রাত ৩টা ৪৪ মিনিটে পাঁচ সদস্যের একটি দল একটি পিকআপ নিয়ে আফজাল স্টোরের সামনে আসে। প্রথমে একজন বাইরে থেকে দোকানটি তালা মেরে দেন। এরপর পিকআপের পেছনে ত্রিপল দিয়ে ঢাকা থাকা বাকি সদস্যরা নিচে নেমে আসেন এবং ব্যারেলগুলো পিকআপে তুলে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর হালিম স্টোরের সামনে থেকে আরও চার ব্যারেল তেল নিয়ে তারা চলে যান।
স্থানীয়রা জানান, ওই রাতে আফজাল স্টোরের সাত ব্যারেল ও হালিম স্টোরের চার ব্যারেলসহ মোট ১১ ব্যারেল তেল চুরি করে নিয়ে যায় একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র। এতে দুই ব্যবসায়ীর প্রায় তিন লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন তারা।
আফজাল স্টোরের মালিক আফজাল মোল্লা জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের দুই দোকান থেকে ছয় ড্রাম (প্রতি ড্রামে ১৮৫ লিটার) সয়াবিন তেল এবং চার ড্রাম (প্রতি ড্রামে ২০০ লিটার) ডিজেল ও এক ড্রাম কেরোসিন তেল চুরি হয়ে গেছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বাজারে সিসিটিভি ক্যামেরা ও পাহারাদার (নাইট গার্ড) থাকা সত্ত্বেও এভাবে চুরি হওয়ায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। থানায় মামলা করেছি। আমরা দ্রুত আমাদের চুরি হওয়া তেল উদ্ধার ও চোরচক্রকে আটক করার জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।’
আংগারিয়া বন্দরের পাহারাদার সামসুল হক সরদার (৭০) জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি চোখে কম দেখি। চুরি কখন হয়েছে তা আমি দেখিনি। এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না।’
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এতদিন চুরি হতো বিলাসী পণ্য, স্বর্ণালংকার আর নগদ অর্থ। কিন্তু হঠাৎ দাম তেলের বেড়ে যাওয়ায় শরীয়তপুরের দোকান থেকে চুরি হচ্ছে ভোজ্যতেল। এই অবস্থায় যে কোনো সময় তেলের লিটার ২০০ টাকা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ক্রেতারা।
বোতলজাত তেল সরবরাহ হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ড্রামের এসব খোলা তেলই এক সপ্তাহ ধরে বিক্রি হচ্ছিল শরীয়তপুরে। পাইকারি পর্যায়ে ভোজ্যতেল সংকটের মধ্যেই খোলা তেল বিক্রি শুরু করেছিলেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। দোকানগুলোর সামনেই দেখা যায় ড্রামভর্তি সয়াবিন আর পাম অয়েল।
Advertisement
কিন্তু তাতেও বাধ সেধেছে চোরচক্র। সম্প্রতি বিভিন্ন মুদি দোকানে হানা দিয়ে রাতের অন্ধকারে সয়াবিন তেল লুটে নিচ্ছে চোরের দল। সয়াবিন ছাড়াও জ্বালানি তেলে নজর পড়েছে চোরের। শুধু সদর উপজেলা নয়, গোসাইরহাটসহ অন্য উপজেলাগুলোতেও বেড়েছে দৌরাত্ম্য।
গত বুধবার গোসাইরহাট পৌরসভার দাসের জঙ্গল বাজারে একটি মোবাইল ফোন বিক্রির দোকানে চুরির ঘটনা ঘটে। ওই দোকানে থাকা চার লাখ টাকা দামের ৪০টি মোবাইল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে যায় একটি চোর চক্রের দল।
গোসাইরহাট পৌরসভার দাসের জঙ্গল বাজারে কাজী আমির ফয়সালের (মহিউদ্দীন টেলিকম) মোবাইল ফোন বিক্রির দোকান আছে। বুধবার সকালে চোরের একটি দল দোকানের উত্তর দিকের শাটারের তালা কেটে ভেতরে প্রবেশ করে। তারা ব্যাগে ভরে ৪০টি মোবাইল ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান। পরে ওই দোকানে থাকা সিসি ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধরা পড়ে।
কাজী আমির ফয়সাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে কর্মচারী দোকান খুলতে গেলে চুরির ঘটনা নজরে আসে। দিনের আলোতে এত বড় চুরির ঘটনা কীভাবে ঘটলো, আমি ভাবতেও পারছি না।’
সম্প্রতি শরীয়তপুর জেলা শহরের পালং বাজারের মোবাইল ফোন বিক্রির একটি দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। ওই দোকান থেকে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ১২টি মোবাইল ফোন চুরি হয়েছে।
ওই দোকানের বিক্রয়কর্মী উজ্জল আহাম্মেদ অভি জাগো নিউজকে বলেন, ‘মোবাইলের দোকানগুলোতে চুরি বেড়ে গেছে। কয়েকদিন আগে আমাদের দোকানে চুরি হয়েছে।’
এ বিষয়ে গোসাইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম সুমন বলেন, ‘সিসি ক্যামেরার ফুটেজে চুরির সত্যতার প্রমাণ মিলেছে। তদন্তসাপেক্ষে মামলা নেওয়া হবে। চোরদের চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চোর শনাক্ত করা হবে।’
পালং মডেল থানার ওসি আক্তার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আংগারিয়া বাজারের তেলচুরির বিষয়ে থানায় মামলা করা হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে প্রযুক্তির সহায়তায় চোর শনাক্ত ও আটকের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। পালং বাজারে মোবাইলের দোকানে চুরি হওয়ার পর আমরা চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করেছি।’
মো. ছগির হোসেন/এসআর/এএসএম